শীল সমাধি প্রজ্ঞার অনুশীলনেই নিবার্ণ
শ্রী জ্যোতি প্রজ্ঞা মহাথের
শীল সমাধি প্রজ্ঞা হলো পরম শান্তি নির্বান লাভের সোপান স্বরুপ। শীল
হচ্ছে সমাধির ভিত্তি এবং সমাধি হল প্রজ্ঞার ভিত্তি। প্রজ্ঞা লাভ করতে
হলে সমাধিস্থ হওয়া দরকার এবং সমাধিপরায়ন হতে হলে শীলবান হতে
হয়। শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা লাভ বুদ্ধ প্রবর্তিত মধ্যম পন্থা অনুসরণে সম্ভব।
সেই মধ্যম পন্থা কি? ঘর সংসার ত্যাগ করে বনে জঙ্গলে কঠোর কৃচ্ছ
সাধনও নয়, যা বুদ্ধি বিবেচনা দুর্বল করে এবং ভোগ সুখে থাকাও নয়, যা
নৈতিক অধপতন আনায়ন করে। মধ্যম পন্থ হলো এ দুই চরম পথ বর্জন
এবং এ দুয়ের মাঝামাঝি পথ গ্রহণ। বুদ্ধ বলেছেন আর্য অষ্টাঙ্গিক
মার্গানুসারে জীবন গঠনই প্রকৃত মধ্যম পন্থা। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ হল -
১. সম্যক দৃষ্টি ২. সম্যক সঙ্কল্প ৩. সম্যক বাক্য ৪. সম্যক কর্ম ৫. সম্যক প্রচেষ্টা
৬. সম্যক জীবিকা ৭. সম্যক স্মৃতি ও ৮. সম্যক সমাধি। সাধন মার্গের প্রথম সোপন হল শীল।
এই শীল অনুশীলন করার অর্থ কায় ও বাক্যের সংযম রক্ষা করা।
প্রাণী হত্যা, চুরি ও ব্যভিচার এ তিন কায়িক কর্ম হতে বিরত থাকা।
বিদর্শন সাধকদের জন্য অধ্যাত্মশীল অবশ্য পালনীয়। আধ্যাত্মশীলকে চার পরিশুদ্ধ শীল বলা হয়।
যথা ১. ইন্দ্রিয় সংবর শীল, চক্ষু, শ্রোত্র, ঘ্রাণ, জিহ্বা, কায় ও মন এই ছয় ইন্দ্রিয় পথে
রুপ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পর্শ ও ধর্ম বা ভাব যোগে যেসব তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়ে
থাকে, সাধক সে সব তৃষ্ণা উদ্ভবের অবকাশ প্রদান করেন না। প্রমাদবশে উদিত
হলে তা তৎক্ষনাৎ দমন করেন। ২. আজীব পরিশুদ্ধ
শীল সাধক তাঁর জীবিকা এমন ভাবে করতে থাকেন যে সেই জীবিকা
তাঁর সাধনার অগ্রগতির সহায়ক হয়। ৩. প্রত্যয় সন্নিশ্রিত শীল পোষক পরিচ্ছেদ,
আহায দ্রব্য, আবাস স্থান ও ঔষুদ পত্র এই চতুবিধ বস্তু ভৌতিক দেহকে কার্যক্ষম
রাখার অপরিহার্য হেতু বা কারণ বলে এদেরকে প্রত্যয় বলা হয়েছে।
এই অপরিহার্য দ্রবাদির ব্যবহার এমন ভাবে করতে হবে, তা যেন সাধক জীবনের অনুকূলে হয়।
৪. প্রাতিমোক্ষ সংবর শীল - বিনয় পিটকের অন্তর্গত প্রাতিমোক্ষ গ্রন্থে দুশ্চরিতাদি সংবরন
এবং শিষ্টাচার পালন সম্বদ্ধে যে সব বিধান লিপিবদ্ধ আছে, তদনুযায়ী স্বভাব গঠন করেন।
এভাবে সাধক যখন জীবনাচার অনুশীলন করেন তখন তিনি ক্রমে ক্রমে প্রজ্ঞামার্গে
আরোহন করেন প্রজ্ঞা হলো জগতের তত্ত্ববিষয়ের বিষয়ের যথার্থ দর্শন।
প্রজ্ঞা অবিদ্যা অন্ধকার বিনাশ করে, বিদ্যালোক উৎপন্ন করে।
এ বিদ্যালোক আর্যসত্য প্রকাশিত করে, অনিত্য দুঃখ অনাত্মা প্রদর্শন করে।
সেরুপ সাধক প্রজ্ঞারুপ কান্তে দ্ধারা তৃষ্ণা ছেদন করেন।
ক্রমান্বয়ে তিনি অর্হত্বে মার্গে পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গে অবশিষ্ট সংযোজন (বন্ধন)
অহংভাব, ভবাসত্তি ও অবিদ্যা নিঃশেষে ধ্বংস করে তিনি নির্বাণে সাক্ষাত করেন।
0 Comments