Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

আজ পূজনীয় ভদন্ত কুশলায়ন মহাথের'র ৫৯তম শুভ জন্মদিন

 


আজ পূজনীয় আচার্য গুরুভান্তে ভদন্ত কুশলায়ন মহাথের'র ৫৯তম শুভ জন্মদিনে বিনম্র বন্দনা
বিশেষ সম্পাদকীয় জ্যোতি ডেস্ক:-
=====================================
আজ ২ নভেম্বর ২০২৪ ইংরেজী, রোজঃ শনিবার, কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত, উখিয়া উপজেলাধাীন শৈলেরঢেবা চন্দ্রোদয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ও জ্ঞানসেন বৌদ্ধ ভিক্ষু-শ্রামণ প্রশিক্ষণ ও সাধনা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, বহু আদর্শীক প্রতিষ্ঠানের জনক বিশেষ করে বরইতলি উচ্চ বিদ্যালয়, শৈলেরঢেবা কুশলায়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কুশলায়ন কিন্ডার গার্টেন এর প্রতিষ্ঠাতা, পরম পূজনীয় গুরুদেব ভদন্ত কুশলায়ন মহাথেরর ৫৯তম শুভ জন্মবার্ষিকী। শুভ জন্মদিন উপলক্ষে পূজনীয় ভান্তের শিষ্য ও ভক্তগণ বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ভোর সকালে বুদ্ধ পূজা ও সমাবেত বন্দনা করে শ্রদ্ধেয় ভান্তের দীঘায়ু প্রার্থনা করা হয়। গুরুদেব ভদন্ত কুশলায়ন মহাথের ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর আজকের এই দিনে বৌদ্ধ প্রতিরূপদেশ বার্মার (মায়ানমার) আকিয়াব শহরের অধূরে বহু বৌদ্ধ পুরানো সুকীর্তির পীঠস্থান ধ্যানোৎদ্বীপ্ত সাধক ত্যাগ পুরুষদের জন্ম ও আবাসভূমি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বিমন্ডিত অরণ্য ও পাহাড়ঘেরা মামরার চাইন্ডং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর আবির্ভাব ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর রোজ- বুধবার, পিতা প্রয়াত ধর্মপ্রাণ উপাসক স্বর্গীয় বাবু ভূলুচরণ বড়ুয়ার ঔরষে ও মাতা পুণ্যশীলা শ্রীমতি কুন্ঞ্জবালা বড়ুয়ার গর্ভে। পরে তাঁর বাবা-মার সাথে পিতৃব্য পুরুষের ভূমির নাড়ির টানে নব্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশে এসে জাগতিক ভোগ বিলাসের ক্ষণস্হায়ী দুঃখময় সংসারের মায়া মরিচিকা ত্যাগ করে- 'ভোগে দুঃখ, ত্যাগই সুখ' এ সত্যেকে উপলব্দি করে নিজের জীবনকে সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষায় সুপ্রতিষ্ঠিত করে পূজনীয় ডক্টর কাচ্চায়ন মহাথের মহোদয় কর্তৃক বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৮৫ সালে ৫ ডিসেম্বর বুদ্ধ শাসনের প্রতি অনুরাগী হয়ে প্রব্রজ্যা ধর্মে দীক্ষিত হন। তাঁর দীক্ষা গুরু ছিলেন বাংলাদেশী বৌদ্ধদের প্রাণ পুরুষ অগ্রমহাপন্ডিত প্রজ্ঞালোক মহাথের'র সর্বকনিষ্ঠ শিষ্য, উখিয়া সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতির যিনি আজীবন সভাপতি ছিলেন, পরলোকগত সমাজসংস্কারক পন্ডিত শ্রীমৎ শাসনবংশ মহাথের মহোদয়।
পরবর্তীতে তারই উপাধ্যায়ত্বে ১৯৯৫ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি পাতাবাড়ী আনন্দ ভবন বিহারের পাষান সীমায় পবিত্র উপসম্পদা (ভিক্ষুত্ব) জীবন গ্রহণ করেন।

পরম শ্রদ্ধেয় গুরুদেব অনাগরিক জীবনের শুরু হতেই বিবিধ ধর্মীয় আদর্শের প্রতিষ্ঠা ও প্রচলন করেন এবং মহাকারুনিক বুদ্ধের পথ অনুসরণ করে নি:স্বার্থ ও প্রচার বিমুখ হয়ে সদ্ধর্মের প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বাস্তবতার প্রেক্ষিতে তাঁর মহান জীবন চরিতে বিদ্যাবত্তা, জ্ঞানগরিমা, আদর্শনিষ্ঠা, ত্যাগ ও সহনশীলতা, পরকল্যাণ মানসিকতা, শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার যথাযথ অনুশীলন এবং মৈত্রী, করুণা, অহিংসা ও আত্নসংযম, সৃজনশীল চিন্তা, বিশ্লেষণাত্নক চিন্তাভাবনা ও উদার মানসিকতা ও ধৈর্যশীল গুনাদি অনুকরণ ও শিক্ষনীয়। কারণ তিনি এসব মহিমান্বিত গুণের যথার্থ প্রয়োগ ঘটিয়েছেন বুদ্ধ শাসনের- চিরস্থায়ীর নিমিত্তে ২০০০ সালে "জ্ঞানসেন বৌদ্ধ ভিক্ষু- শ্রামণ প্রশিক্ষণ ও সাধনা কেন্দ্র" নামে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। আজ যেখানে শতাধিক ভিক্ষু-শ্রামণের অবস্থান বিদ্যমান। এই প্রতিষ্ঠানটি থেরবাদ বৌদ্ধাদর্শের সুশৃঙ্খল ও বিনয়ী আচার- আচরণ প্রতিপালন ও রক্ষণে ভুমিকা পালন করে আসছে। এতদ্ব্যতীত তাঁর জীবনের অন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- আধুনিক বিশ্বায়নের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সদ্ধর্ম রক্ষায় যুবক সমাজকে বুদ্ধের মহান শিক্ষায় অনুপ্রাণীত ও উৎসাহিত করে ধর্মের প্রচার ও প্রসারে প্রভাবিত করা। এ বিষয়ের উজ্জ্বল পরিস্ফুটনের রেখাপাত নিশ্চয় ভবিষ্যতে বৌদ্ধ ধর্মের কল্যাণ বয়ে আনবে।
পরমারাধ্য গুরুদেব, ইতিমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের অনগ্রসর, ঘূণেধরা সমাজের গতানুগতিকতার পরিবর্তে বুদ্ধের শিক্ষাদর্শ ভিত্তিক ভিক্ষু ও গৃহী সমাজকে সদ্ধর্মের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেন। যা সারা বাংলাদেশে সকলের প্রশংসা লাভ করেছে। "শাসনবংশ প্রভাতী সদ্ধর্ম শিক্ষা নিকেতন" নামে ধর্মীয় শিশু শিক্ষার প্রর্বতন করে কক্সবাজার জেলার বৌদ্ধ গ্রাম সমূহে শিশুশিক্ষার গণজাগরণ সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও উত্তরবংগে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসুরী প্রেরণের মাধ্যমে প্রায় দশ বৎসর যাবৎ বুদ্ধের আদর্শ শিক্ষা প্রচারে সহায়তা করেন।
শ্রদ্ধেয় গুরুভান্তে বলতে গেলে তিনি বাংলাদেশ তথা আন্তর্জাতিক অঙ্গণের বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের একজন প্রগতিশীল উজ্জ্বল সাংঘিক ব্যক্তিত্ব। শ্রদ্ধেয় ভান্তে ইতিমধ্যে অনেক অাদর্শবান শিষ্যসংঘ ও প্রতিষ্ঠান জন্ম দিয়েছেন। মানবসেবার জন্য শ্রদ্ধেয় ভান্তে বিশ্বজ্যোতি মিশন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করে তা এখন সমাজ জীবনে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর প্রত্যন্ত এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করে মানবিক কর্ম সম্পাদন করে থাকে এই প্রতিষ্ঠান টি। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার রেজু বড়ইতলী চাকমা পাড়া বিলুপ্ত প্রায় একটি একটি উচ্চ বিদ্যালয় পুণঃপ্রতিষ্ঠা করে বর্তমানে ঐ উচ্চ বিদ্যালয়টি উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত এলাকার এক ব্যাপক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এছাড়াও ত্রৈমাসিক জ্যোতি নামে একটি সমাজ ও ধর্মের জাগরণ মূলক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করে বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও জ্ঞান, সংবাদ সবার কাছে পৌছাতে ভূমিকা রেখেছেন। ইতিমধ্যে উত্তর ঘুনধুম বড়ুয়া পাড়ার অদূরে ফরেস্ট মেডিটেশন সেন্টার নামে একটি সাংঘিক ধ্যান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তাতে বিবিধ ধর্মীয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

উল্লেখ্য, বর্তমান জ্ঞানসেন বৌদ্ধ ভিক্ষু-শ্রামণ প্রশিক্ষণ ও সাধনা কেন্দ্র" উক্ত প্রতিষ্ঠানের অনেক মেধাবী বড়ুয়া, আদিবাসী ও পাহাড়ী ছেলের অবস্থান রয়েছে। বাংলায় ত্রিপিটক প্রকাশের ক্ষেত্রেও স্বীয় অন্ত্যেবাসী ভিক্ষুদের মূল গ্রন্থ ও অট্ঠকথা গ্রন্থগুলোর অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন। অনেকে শিক্ষার্থী ভিক্ষুগণ দেশে- বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের লক্ষে অধ্যয়ণরত ও বৌদ্ধধর্ম প্রচারণায় রত আছে। শ্রদ্ধেয় ভান্তে একজন সৃজনশীল ও বিচিত্র কর্ম প্রতিভার অধিকারী সাংঘিক ব্যক্তিত্ব। এত ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার পরও কখনো শীল-বিনয় অনুশীলনে দূর্বলতা প্রকাশ করেনি। অতীতের গুরু পরম্পরা শীল বিনয়ের সর্বোচ্চ প্রয়োগ গুলো এই মহকর্মের মধ্যে এখনো স্পস্টত দেদিপ্যমান। প্রযুক্তির এত উন্নতি কালেও এসে কখনো নিজেকে অতি প্রচারণায় নিবেদিত করে রাখেন না। অনলাইন নামক নেশাগুলো থেকে সর্বদা ১০০হাত দূরে থেকে স্বীয় প্রব্রজ্যা জীবনকে সার্থক করে যাচ্ছেন। এভাবে শ্রদ্ধেয় গুরুভান্তের দীর্ঘ ৩৫ বছর প্রব্রজ্যা ও ভিক্ষু জীবনে বুদ্ধ শাসনের প্রতি তাঁর মহৎ অবদান, সেবা ও ত্যাগের জন্য আমি, ও আমরা সকলে শ্রদ্ধেয় ভান্তের নিরোগ, সুস্বাস্থ্য ও নীরোগ দীর্ঘায়ু জীবন প্রার্থনা করছি।
"জয়তু গুরুভান্তে ভদন্ত কুশলায়ন মহাথের

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement