Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

পৌষ পূর্ণিমা—গৌতম বুদ্ধের প্রথম শ্রীলংকা গমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রজ্ঞাশ্রী ভিক্ষু,

 

পৌষ পূর্ণিমা—গৌতম বুদ্ধের প্রথম শ্রীলংকা গমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা
—————
আজ শুভ পূর্ণিমা তিথি—২৫৬৮ বুদ্ধবর্ষের শুভ পৌষ পূর্ণিমা। বৌদ্ধ প্রতিরূপ দেশ শ্রীলংকার বৌদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য গৌরবের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। গৌতম বুদ্ধের প্রথম শ্রীলংকা গমন এবং শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার মহিমান্বিত এক পুণ্যতিথি যা শ্রীলংকায় “দুরুথু পয়া ডে” নামে অভিহিত। পুণ্যময় এ তিথি হতে বুদ্ধের পদচিহ্ন পূজা কল্পে সামানালা (শ্রী-পাদ) পর্বতে তিন মাসের তীর্থযাত্রার সূচনা হয়।
মহামানব গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধত্বলাভের নয়মাস পর শুভ পৌষ পূর্ণিমা তিথিতে প্রথমবারের ন্যায় শ্রীলংকার উভা প্রদেশের “মাহিয়ঙ্গণা” নামক গ্রামে গমন করেন। বুদ্ধের এই গমন বা ধর্মযাত্রার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, সেদেশে যুদ্ধ-সহিংসতা দমন পূর্বক শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। সেসময় মহাকারুণিক বুদ্ধ লঙ্কা দ্বীপের গুণ দর্শনে যক্ষগণকে (যক্ষরূপী মনুষ্য বলেও কোথাও কোথাও উল্লেখ রয়েছে) বিতাড়িত করে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শ্রীলংকার ইতিহাস সমৃদ্ধ “মহাবংশ” গ্রন্থ এর সাক্ষ্য বহন করে। এমনকি নিম্নোক্ত “মাহিযঙ্গণ চৈত্য বন্দনা” ও বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ ও জার্নালে বুদ্ধের প্রথম লঙ্কা দ্বীপে গমন ও ধর্ম শাসন প্রতিষ্ঠা কল্পে যক্ষদিগকে দমনের ইতিহাস পরিলক্ষিত হয়।
পালি:
লঙ্কায যত্থা পঠমং সুগতো নিসজ্জ,
যক্খে দমেসে নিজ সাসন পালনায়;
ঠানে তহিং নিহিত কুন্তল গীব ধাতুং,
বন্দামি সাধু মহিঙ্গযঙ্গণ থুপরাজং।
বঙ্গার্থ: ভগবান বুদ্ধ প্রথমে লঙ্কায় গমণ করে যে স্থানে উপবেশন করেছিলেন এবং স্বীয় ধর্ম শাসন প্রতিষ্ঠা মানসে যক্ষদিগকে দমন করেছিলেন, সেই মাহিয়ঙ্গণা স্থানে স্তুপ নির্মাণ করে ভগবানের মনোহর অক্ষধাতু নিধান করা হয়েছিল। আমি সেই মাহিয়ঙ্গণা স্তুপরাজকে কায়-মন-বাক্যে বন্দনা করছি।
এছাড়া, সেসময় বুদ্ধের ধর্মাভিযান প্রত্যক্ষ করতে সমাগত “সুমনা সামান দেবতা” বুদ্ধগুণে মুগ্ধ-অভিভূত হয়ে শ্রদ্ধা-ভক্তিযুত চিত্তে করজোরে প্রণাম নিবেদন পূর্বক বুদ্ধের অবর্তমানে পূজা-বন্দনা কল্পে পূজার্ঘ কোন সামগ্রী প্রার্থনা করলে বুদ্ধ স্বীয় মস্তক হতে একগুচ্ছ কেশ ধাতু প্রদান করেন। পরবর্তীতে সেই কেশ ধাতুও মাহিয়ঙ্গণা চৈত্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
উল্লেখ্য, মহাকারুণিক গৌতম বুদ্ধ লঙ্কা দ্বীপের (শ্রীলংকা) প্রতি অনুকম্পা পরবশতঃ এবং ভবিষ্যতে বুদ্ধের ধর্মানুধর্ম প্রতিস্থাপন ও ভিক্ষু সংঘের নিরাপদ স্থান হবে দেখে তিন বার গমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রথমবার, যক্ষদিগকে বিতাড়িত করেন। দ্বিতীয়বার, নাগদের অনুকম্পা পরায়ন হয়ে যুদ্ধ নিবারনার্থে গমন করেছেন; এবং তৃতীয়বার, সুবর্ণময় পল্লঙ্কের জন্য লঙ্কা দ্বীপে পার্বত্য নাগ ও সমুদ্র নাগ সহোদর ও চুলোদর যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন দেখে যুদ্ধ নিবারনার্থে গমন করেছিলেন।
পরিশেষ, “অকালিকো” অর্থাৎ সর্বজ্ঞ-সর্বজয়ী মহানুভব গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত ধর্ম প্রতিপালনের নির্দিষ্ট কোন সময় বা কাল নেই। যখন, যেসময়, যে পরিবেশে এ ধর্ম পালন করা হয়, তখন সে অবস্থায় ফল প্রাপ্ত হওয়া সম্ভব! বুদ্ধের শিক্ষা পৃথিবীর সব অঞ্চলে, সব জায়গায়, সব দেশে, সব স্থানে, সব ভূমিতে এক এবং অভিন্ন। তাই আমরা যেখানেই অবস্থান করি না কেন—নির্মল-গুণ-গৌরব ও উৎকর্ষপূর্ণ মানব জীবনের পূর্ণতা দান কল্পে বুদ্ধের ধর্ম-শিক্ষা অনুশীলন একান্তই করণীয়, অদ্বিতীয় পন্থা।

বুদ্ধের অনন্ত-অপ্রমেয় গুণসম্ভার ও মৈত্রীপ্রভায় সকলের সর্ব জয়মঙ্গল হোক। শুভ-কল্যাণপ্রদ হোক বর্তমান-অনাগত। বুদ্ধালোকে আলোকিত-উদ্ভাসিত হোক হৃদয়। সুখী হোক প্রাণী যত, শান্তি আসুক সর্বতঃ। জয়তু বুদ্ধ সাসনম্।
প্রজ্ঞাশ্রী ভিক্ষু, কানাডা থেকে

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement