Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

চীন, কোরিয়া এবং জাপানে বৌদ্ধ ধম্মের প্রবেশকাল ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

 চীন, কোরিয়া এবং জাপানে বৌদ্ধ ধম্মের প্রবেশকাল

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু
চীনা সম্রাট মিঙ্গ তি’র নিমন্ত্রণে দু’জন ভারতীয় বৌদ্ধ বিদ্বান ৬৭ খৃষ্টাব্দে সর্ব প্রথমে চীনে গিয়েছিলেন। একজনের নাম ছিল ভদন্ত কাশ্যপ মাতঙ্গ এবং অন্যজনের নাম ছিল ভদন্ত ধম্মরক্ষিত। ভদন্ত ধম্মরক্ষিত ধম্মরত্ন নামেও পরিচিত ছিলেন।
কাশ্যপ মাতঙ্গের জন্মভূমি ছিল মগধে, যা হল বর্তমান বিহার রাজ্য। কিন্তু চীন যাওয়ার সময় তিনি গান্ধারে অবস্থান করতেন। আচার্য কাশ্যপ মাতঙ্গ এবং আচার্য ধম্মরক্ষিত বৌদ্ধ ধম্ম সম্বন্ধিত অনেক পুস্তক সাথে করে চীনে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁরা একটি শ্বেত ঘোড়ায় আরোহন করে যাত্রা করেছিলেন।
চীনের সম্রাট তাঁদের জন্য সেখানে শ্বেতাশ্ব বিহারের স্থাপন করেছিলেন। ইহাই হল চীনের সর্ব প্রথম এবং প্রাচীনতম বৌদ্ধ বিহার।
প্রারম্ভিক সময়ে বৌদ্ধ ধম্মকে কনফুসিয়াস মতানুসারীদের সাথে বিরোধের সম্মুখীন করতে হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে চীনে বৌদ্ধ ধম্ম নিজের স্থান তৈরী করে নিয়েছিল এবং চীনের প্রধান ধম্মরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রসিদ্ধ দার্শনিক মোৎসু বৌদ্ধ ধম্মকে কনফুসিয়াস ধর্মের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে বর্ণনা করেছেন।
চীনা সম্রাট বু (২৬৫-২৯০) এবং মিন্ (৩১৩-৩১৬) উভয় সম্রাটের সময়ে চীনে অনেক বৌদ্ধ বিহার এবং চৈত্য নির্মিত হয়েছিল।
প্রায় ১০০ বছর পরে দক্ষিণ চীনের রাজা লিয়াঙ্গ-বুতী বৌদ্ধ ধম্মকে চীনের রাষ্ট্রীয় ধম্মরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বেই, সুই এবং তাঙ্গ রাজবংশ বৌদ্ধ ধম্মকে রাজকীয় ধম্মের মর্যাদা প্রদান করেছিল।
তাঙ্গ রাজবংশের সময়কে তো ইতিহাসে ‘চীনকে বৌদ্ধ কাল’ বলে অভিহিত করা হয়।
তাঙ্গ রাজবংশের শাসনকালে প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ দার্শনিক আচার্য প্রভাকরমিত্র, আচার্য দিবাকর, আচার্য বোধিরুচি, আচার্য অমোঘবজ্র, আচার্য বজ্রমিত্রের মত বিদ্বান ভিক্ষুগণ চীনে গিয়েছিলেন।
অনেক চীনা পরিব্রাজকও বৌদ্ধ গ্রন্থের অনুসন্ধানে পায়ে হেঁটে দুর্গম পথ অতিক্রম করে ভারতে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফা-হিউয়েন (৩৩৭-৪২২), হিউয়েন সাং (৬০২-৬৬৪) এবং ইৎ-সিং (৬৩৫-৭১৩)। অনেক বিদেশী ভারতে এসেছিলেন স্বর্ণ-রৌপ্য ইত্যাদি ধন-সম্পদ লুঠ করতে, কিন্তু বৌদ্ধ পণ্ডিতেরা ভারতে এসেছিলেন কেবল পুঁথি-পুস্তকের জ্ঞান আহরণ করতে। তাঁরা ভারত হতে বোঝাই করে জ্ঞান ভাণ্ডার নিয়ে গিয়েছিলেন।
ভারতের অনেক বৌদ্ধ বিদ্বান চীনে খুব প্রসিদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে পঞ্চম / ষষ্ট শতাব্দীর আচার্য বোধিধম্ম (হলেন সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং শ্রদ্ধেয়। দক্ষিণ ভারতের কাঁচীপুরমের আচার্য বোধি ধম্ম সেখানে এতই প্রসিদ্ধ হয়েছিলেন যে, এখনও চীনের লোকেরা তাঁকে বুদ্ধের মত পূজা করে থাকেন।
বৌদ্ধ ধম্ম প্রচারের সাথে সাথে চীনে অনেক বৌদ্ধ গুহা নির্মাণ করা হয়েছিল। সে সমস্ত গুহা সমূহের অনেক স্থানে পাথর কেটে কেটে বিশাল বিশাল বুদ্ধ মূর্তি তৈরী হয়েছিল। মাঝারী ও ছোট ছোট মূর্তির সংখ্যা তো অগণিত। অনেক গুহার ভিতরে রয়েছে সমৃদ্ধ বৌদ্ধ চিত্রকলা।
টুন-হুয়াঙ্গ এবং লাঙ্গ-মেনের বৌদ্ধ গুহা পরিসর হল বিশ্বে মূর্তি ও চিত্র কলার জন্য সুবিখ্যাত।
কোরিয়াতে বৌদ্ধ ধম্ম ৩৭২ খৃষ্টাব্দে চীন হতে প্রবেশ করেছে। চীনের উত্তর-পূর্বে হল কোরিয়া। সর্ব প্রথম উত্তর চীন হতে সুন্দো নামক এক বৌদ্ধ ভিক্ষু বুদ্ধের মূর্তি এবং সূত্র নিয়ে কোরিয়া গিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে ৩৮৪ খৃষ্টাব্দে একজন ভারতীয় আচার্য মল্লানন্দ দক্ষিণ চীন হতে কোরিয়া গিয়েছিলেন। কোরিয়ার প্যোগয়াঙ্গ নগরে একজন ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু ৪০৪ খৃষ্টাব্দে তথায় দু’টি বিহার স্থাপন করেছিলেন।
তাঁর পরেও অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু কোরিয়ায় গিয়েছিলেন। কোরিয়া হতেও অনেক ভিক্ষু জ্ঞানের সন্ধানে ভারত এসেছিলেন।
বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ গ্রন্থের কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল।
অষ্টম শতাব্দীতে কোরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী হাইচো নামে ভিক্ষু বৌদ্ধ সংস্কৃতিকে জানার জন্য ভারতে এসেছিলেন। তিনি পূর্ব ভারতে পৌঁছেছিলেন ৭২৪ খৃষ্টাব্দে।
তিনি রাজগীর, সারনাথ, কুশীনগর এবং বুদ্ধগয়ার প্রসিদ্ধ স্তূপ সমূহ দর্শন করেছেন। তাঁর বর্ণনায় লিপিবদ্ধ হয়েছে যে, উপরোক্ত সমস্ত স্থান হল মগধ রাজ্যে। সারনাথের অসোক স্তম্ভ দেখে তিনি খুবই প্রভাবিত হয়েছিলেন।
জাপানে বৌদ্ধ ধম্ম কোরিয়া হতে ৫৫২ খৃষ্টাব্দে পৌঁছেছিল।
সে সময় কোরিয়ার সম্রাট জাপানী সম্রাটের জন্য অনেক প্রকার উপহার সামগ্রী প্রেরণ করেছিলেন, তন্মধ্যে বুদ্ধের মূর্তি, সূত্র, পূজার সামগ্রী এবং সেগুলির সঙ্গে অনেক শিল্পী ও বাস্তুকারও সামিল ছিল।


Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement