পূজনীয় ভান্তে মিশনারিজ ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের ৫৫,তম শুভ জন্মদিন ও প্রজন্মের অনুপ্রেরণা

বঙ্গীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু সমাজের সুপরিচিত সদাউজ্জ্বল একটি মুখ; ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের মহোদয়। যিনি সংখ্যালগু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একজন মুখপাত্র হিসেব বরাবরই বাংলাদেশ সরকারের সর্বস্থরে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করে সামগ্রীক নিরপত্তা পাওয়ার জন্য সর্বদা তৎপর থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ হিন্দু -বৌদ্ধ -খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পূজ্য ভদন্ত ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের ভান্তের অগণিত গুণরাজির মধ্যে ছোটকাল থেকে যা দেখে অত্যন্ত অভিভূত হচ্ছি, তা হল শ্রদ্ধেয় ভান্তে একজন অত্যন্ত পরোপকারী, বুদ্ধ শাসনের একনিষ্ঠ কর্মী, সংগঠক, মানবতাবাদী, লেখক, বৌদ্ধ গবেষক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন একজন মিশনারীজ বৌদ্ধ ভিক্ষু।
শ্রদ্ধেয় ভদন্ত ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের মহোদয় এককালের বঙ্গীয় বৌদ্ধ শাসনের দ্বিতীয় মিয়ানমার বলে সুপরিচিত জনপদ রম্যভূমি রামুর একদম প্রাণকেন্দ্র রামুর শ্রীকুল গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের ধার্মীক পিতা বাবু শচীন্দ্র বড়ুয়া ও পুণ্যবতী মাতা শ্রীমতি ভাগ্যবতী বড়ুয়া দ্বয়ের কোল আলোকিত করে ১৯৬৯ সালে আজকের এইদিনে ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে শুভ জন্মগ্রহণ করেন। ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের ১৯৮৪ সালে ভদন্ত সংঘরত্ন মহাথের এর তত্বাবধানে পূজ্য ২১শে পদক প্রাপ্ত উপসংঘরাজ, বিনয়াচার্য ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথেরর সান্নিধ্যে প্রব্রজ্যা শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। উপযুক্ত গুরুর সান্নিধ্যে দীর্ঘ ৬ বৎসর ধর্ম-বিনয় শিক্ষা শেষ করে ১৯৯০ সালে পূজ্য উপসংঘরাজ ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথেরর উপাধ্যায়ত্বে পবিত্র উপসম্পদা তথা ভিক্ষুত্ব গ্রহণ করেন। ধর্ম-বিনয় শিক্ষার পাশাপাশি তিনি একাডেমিক বা প্রাতিষ্ঠানিক সাধারণ শিক্ষাও এগিয়ে যান। ভিক্ষুত্ব জীবনে প্রবেশের সাথে সাথে তিনি ঢাকাস্থ মেরুলবাড্ডায় নবপ্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে উপবিহার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে এখনো উক্ত বিহারের উন্নয়নরত আছেন। ইতিমধ্যে উক্ত বিহারের পরিচালনা কমিটি "বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন" এর সফল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের সামগ্রিক উন্নয়ন করে যাচ্ছে। যা আমরা নিজ চোখে দেখছি।
পূজনীয় ভদন্ত ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় মহাথের মহোদয় শাসন সদ্ধর্মের কল্যাণ ও প্রসারের লক্ষ্যে উত্তর বঙ্গ সহ বাংলাদেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহু বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা করেছেন এখনো পৃষ্ঠাপোষকতা এবং সরাসরি সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় মহাথের একজন উদারচেতা ও মেধাবী ভিক্ষু ব্যক্তিত্ব। তিনি ৯০ দশকে শুরুর দিকে উত্তরবঙ্গে আবিষ্কৃত আদিবাসী বৌদ্ধদের কল্যাণের জন্য সর্বপ্রথম মিঠাপুকুর বেনুবন বৌদ্ধ বিহারে বর্ষাবাস উদযাপন করে তথায় বহুবিদ কল্যাণ সাধন করেন। বর্তমানে তিনি বুদ্ধিস্ট এইড নামে একটি মানবিক সংগঠন করে উত্তরবঙ্গসহ দেশের দরিদ্র অঞ্চলে ধর্ম, শিক্ষা ও বস্ত্রবিতরণ সহ বহুবিদ কল্যাণ মূলক কার্যক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছেন। ভান্তের হাত ধরে অগণিত আদিবাসী নৃগোষ্ঠী সহ বড়ুয়া বৌদ্ধ সন্তানরা সার্বিক সহযোগিতা লাভ করে প্রথমত শিক্ষা লাভ করার সুযোগ পেয়েছে ও এখনো পাচ্ছেন। সমাজের শিক্ষার আলো বৃদ্ধির জন্য সর্বদা শিক্ষা ক্ষেত্রে পৃষ্ঠাপোষকতা করে থাকেন। এছাড়াও শ্রদ্ধেয় ভান্তের হাত ধরে বৌদ্ধ ছাত্র ও যুব সমাজ বিশেষ করে বৌদ্ধ প্রতিরূপ দেশ শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে গমন করে বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অনেকে দেশের জন্য মেধাবী ভিক্ষু সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেকে উন্নত দেশে পাড়ি দিয়ে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন সাধন করে জীবনমান এগিয়ে নিচ্ছে।
ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় মহাথের মহোদয়ের সান্নিধ্যে না পেলে ভান্তের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া খুবই দুষ্কর।
বর্তমান সমাজ ও সদ্ধর্মের যেকোন দূর্যোগ দুঃসময়ে সহসা ঝাপিয়ে পড়ে ভূমিকা পালন করেন ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের ভান্তে। সমাজ ও সদ্ধর্মের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে অনেকের কাছে অপ্রিয় হচ্ছেন। তবুও পিছুপা হন না কখনো। কারণ যারা বুদ্ধ শাসন ও সমাজের জন্য কাজ করেন আলোচনা - সমালোচনা তাদের জন্যই হয়। যারা কোনো কাজ করে না তাদের আলোচনা-সমালোচনা করার তো প্রশ্নই আসে না।
ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের মহোদয় একজন প্রাবন্ধিক ও বৌদ্ধ গবেষক। ভান্তের হাত ধরে অনেক মুল্যবান গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা হয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে ভান্তের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বৌদ্ধ চর্চার অনবদ্য ম্যাগাজিন সৌগত। বর্তমান অবধি সমাজ সদ্ধর্মের সচেতনতায় এই ম্যাগাজিন কাজ করে যাচ্ছেন।
ভান্তে সুনন্দপ্রিয় মহাথের মহোদয় বাংলার যুবক ভিক্ষু সংঘের জন্য একটা মাইলফলক ও অনুপ্রেরণার নাম। বাল্যকাল থেকে প্রব্রজিত ও উপসম্পদা দীক্ষিত হয়ে
সেই কৈশোর যৌবন কাল থেকে বৌদ্ধ প্রতিরূপ দেশ সফরে সর্বদা গমনাগমন করলেও কখনো তিনি উন্নত দেশে গিয়ে নিজেকে ও নিজের আদর্শ ভিক্ষু জীবনকে সেই বিসর্জন দেন নি বা দেওয়ার মত মানসিকতা জাগ্রত করেনি। ভান্তের নিজের সাহায্য সহযোগিতায় শতশত ভিক্ষু-শ্রামণ প্রবাসে পাড়ি দিলেও, ভান্তে বুদ্ধ শাসনের প্রতি অনুরাগ বসত শাসনের শ্রীবৃদ্ধি কল্পে এখনো দেদীপ্যমান আমাদের মাঝে।
"এইজন্য শ্রদ্ধেয় ভান্তের আদর্শকে আমি সর্বদা বন্দনা জানাই।"
ভান্তের আদর্শজীবন ও কর্মের নীরিখে বুদ্ধের সেই ধর্মপদের ৩৮২ নং গাথার বাণীটি প্রণিধান যোগ্য বলে মনে করছি।
"যো হবে দাহরো ভিক্খু যোঞ্জতি বুদ্ধশাসনে
সো মং লোকং পভাস্সেতি অভ্ভা মুত্তো'ব চন্দিমা।"
অর্থাৎ- নিতান্ত তরুণ হইলেও যে ভিক্ষু বুদ্ধ শাসনে আত্ম নিয়োগ করেন, তিনি মেঘমুক্ত চন্দ্রের ন্যায় এই জগৎকে উদ্ভাসিত করেন। সত্যিই ভান্তের বঙ্গীয় বৌদ্ধ সমাজ ও শাসনকে আলেকিত করছেন ও করে যাচ্ছেন।
রাজধানী ঢাকার মত একটা ব্যস্ততম শহরে অবস্থান করে জাতি সমাজের বিবিধ কার্যক্রমে সহযোগিতা, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে যোগাদান ও আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের সার্বিক উন্নয়নসহ এত সকল কার্যক্রম চালাতে গিয়ে অনেক সময় নিজের দৈনন্দিন ২ বেলা আহার কখনো কখনো নিজেকে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও গুরুপরম্পরা, মহাপুরুষ প্রজ্ঞালোকের উত্তরসূরী হিসেবে কখনো শীল বিনয় থেকে ব্যত্যয় হননি।
শ্রদ্ধেয় ভান্তে আমাদের সর্বদা আমাদের উপদেশস্থলে বলেন, "কখনো যদি নিজের মনে শীল বিনয় লঙ্ঘন করার মত মন মানসিকতা জাগ্রত হয়, তাহলে সর্বদা স্মরণ করবে অগ্নিপুরুষ প্রজ্ঞালোক, ৮ম সংঘরাজ শীলালঙ্কার, উপসংঘরাজ বিনয়াচার্য জিনবংশ, বিনয়াচার্য আর্যবংশ ও সত্যপ্রিয় মহাথের গণকে। কারণ আমরা তাদের মত মহাপুরুষদের বংশধর। আমাদের গুরুপরম্পরা বিশুদ্ধ থেরবাদ সুরক্ষা করতে হবে।
ভদন্ত ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের মহোদয় রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত শখের বসে পৃথিবীর বহুদেশে নিজের পদধূলি নিক্ষেপ করেছেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রযোজনীয় সভা, কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও নিমন্ত্রণে ভ্রমণ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি একাধারে, যুক্তরাষ্ট্র আনেরিকা, কানাডা, ইউরোপের ইংল্যান্ড, নরওয়ে ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড ও ভ্যাটিকানসিটিসহ বহুদেশ ও এশিয়ার অধিকাংশ দেশ সফর করে বাংলাদেশের বৌদ্ধদের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বহুবার সফর সঙ্গী হয়ে বহুদেশ সফর করেছেন। পরম শ্রদ্ধেয় মদীয় জ্ঞাতী ও কল্যাণকামী ভান্তে সুনন্দপ্রিয় মহাথেরর শুভ জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও বন্দনা জানাচ্ছি।
বর্তমানে ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের মহোদয় বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন এর সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের বর্ণিল সজ্জা ও দ্রুতগতির উন্নয়ন সবার নজর কেড়েছে। ভান্তের দ্বারা আআন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার এখন আন্তর্জাতিকতা রূপ লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বপ্নদ্রষ্টা পূজনীয় শান্তপদ মহাথেরর স্বপ্নপূরণে সদা তৎপর থেকে অতিদ্রুত কাজ করে যাচ্ছে শ্রদ্ধেয় ভান্তে। এতকিছুর পরও একশ্রেণির হিংসুটে ও হীনমন্য মানুষ এই কাজ ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বদনাম ছড়াতে সদা প্রস্তুত। এরপরও একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে সদা মৈত্রী ভাবনা অনুশীলনের ফলে সকল বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সংঘের এই বিজয় নিশান ভান্তে সুনন্দপ্রিয় মহাথের।
পরিশেষে পূজ্যভান্তের নীরোগ দীর্ঘায়ু জীবন কামনায় পুণ্যরাশি দান করছি ভান্তের জীবনের সকল প্রকার অন্তরায় উপদ্রব বিনাশ প্রাপ্ত হয়ে সুখ শান্তি ও আরো মহিমান্বিত হোক এই প্রত্যাশা করছি। ভান্তের জীবনাদর্শ ও উপদেশ হোক আমাদের আগামীর পাথেয় ও অনুপ্রেরণা
"জয়তু ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের "
0 Comments