Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

বুদ্ধের শরীরের তিন প্রকার লক্ষণ

 

বুদ্ধের শরীর তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশকে বলে ধর্মকায়া, দ্বিতীয় অংশকে বলে সম্ভাবনাময় কায়া বা সম্ভোগা কায়া এবং তৃতীয় অংশকে বলে নির্মিত কায়া।
১) -➤ধর্মকায়া ---ধর্মের অস্তিত্ব নিহিত রয়েছে এমন কায়াকে ধর্মকায়া বলা হয়। ইহার মধ্যে সত্যেরও অস্তিত্ব রয়েছে। সত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বুদ্ধের কোন স্বরূপ অথবা রং নেই। স্বরূপ এবং রং না থাকার দরুন বুদ্ধের আগমন এবং প্রস্থানের স্থানও নেই। নীল আকাশের ন্যায় বুদ্ধ (জ্ঞান) সব জায়গায় অবস্থান করছেন, তাঁর অস্তিত্ব নেই এমন কোন স্হান নেই।
সাধারণ মানুষেরা মনে করে যে বুদ্ধের দৈহিক অস্তিত্ব বিদ্যমান কিন্তু আসলে অস্তিত্ব বিদ্যমান নয়। আবার মানুষেরা ভুলে যাওয়ার দরুন তিনি অন্তর্ধানও হন না। আসলে বুদ্ধের অস্তিত্বের এমন কোন অস্তিত্ব বা এর আগমন ও অন্তর্ধানের কল্পনা নিষ্প্রয়োজন। মানুষের সুখের সময়ে তার অস্তিত্বের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আবার মানুষের অমনোযোগিতা এবং অলসতার দরুন অন্তধানেরও কোন প্রয়োজন নেই। মানুষের সকল ধারণাকে তিনি অতিক্রম করেছেন।
সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে বুদ্ধের দৈহিক অস্তিত্ব দেখলে বলতে হবে তিনি সর্বস্থানে বিদ্যমান। তাঁর অস্তিত্ব সর্বকালের জন্যে। এমনকি বুদ্ধের প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই অথবা তাঁর অস্তিত্বের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করে এমন লোকের জন্যেও।
২ )-➤ সম্ভাবনাময় কায়া বা সম্ভোগকায়া মানে যার মধ্যে করুণা এবং প্রজ্ঞা নিহিত রয়েছে কিছু তার মধ্যে কোন অবয়ব বা স্বরূপ দৃষ্ট হয় না। জন্ম মৃত্যুর প্রতীকের মাধ্যমে এবং প্রার্থনা ও বুদ্ধের পবিত্র নাম স্মরণ করার মাধ্যমে দুঃখ যন্ত্রণাময় এই পৃথিবী থেকে মুক্তির উপায় লাভের প্রেরণা উৎপাদক সম্ভোগকায়া প্রতীয়মান হয়।
এই কায়ার সারমর্ম হলো করুণা এবং এই করুণার মাধ্যমে মুক্তিলাভের সমস্ত উপায়ই বুদ্ধ মুক্তিলাভী সবার জন্যে রেখে গেছেন। ইহা আগুনের ন্যায়। যদি কোন
সাহ্যবস্তুতে একবার আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় তাহলে তা জ্বালিয়ে নিঃশেষ না করা পর্যন্ত জ্বলতে থাকবে। এরূপে বুদ্ধের করুণা ও জীবজগতের পার্থিব আবেগজাত ভোগাকাঙ্খা যতদিন নিঃশেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত জীবজগতের উদ্ধারে বিদ্যমান থাকবে। প্রবল বাতাস যেমন ধূলাবালিকে দূরে সরিয়ে দেয় তেমনি বুদ্ধের করুণা নামক বাতাস মানুষের দুঃখ নামক সমস্ত ধুলাবালিকে মুছিয়ে দেয়।
৩) -- ➤ নির্মিত বা নির্মাণ কায়া মানে, বুদ্ধ নির্দেশিত সম্ভাবনাময় মুক্তি লাভের পথ। শত দুঃখ যন্ত্রণার মধ্যে থেকেও সম্যক পথে উদ্যম প্রচেষ্টা দ্বারা নিজে উদ্ধার পাওয়া যে সম্ভব, এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ প্রদর্শনের জন্যেই বোধিসত্ত্ব স্ব শরীরে এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং বুদ্ধত্ব লাভের পর অমিত পারমি শক্তির অধিকারী হয়ে, জনগণকে বুদ্ধের স্বভাব, প্রকৃতি, ক্ষমতাসহ আনুসাঙ্গিক জন্ম, গৃহত্যাগ, বুদ্ধত্ব লাভ ধর্ম প্রচার, রোগ, উপদ্রব, বার্ধক্য ও মৃত্যু লাভের মাধ্যমে দর্শন দিয়েছিলেন। অর্থাৎ জনগণের স্বাভাবিক জীবনের পথ প্রদর্শক হিসেবে বুদ্ধ নিজের শরীরকে অসুস্থতা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত উদাহরণ স্বরূপ ব্যবহার করেছেন।
বুদ্ধের দেহ আসলে একটি ধর্মকায়া কিন্তু মানুষের ভিন্ন স্বভাব প্রকৃতির জন্যে বুদ্ধের দেহও ভিন্নতা লাভ করেছে। যদিও সাধারণ মানুষের বোধগম্য হতে বুদ্ধের এই দেহে বিভিন্ন ইচ্ছা আকাংখার ভিন্নতা দেখা যায় তার পরেও ইহা মানুষের কর্ম এবং কর্মদক্ষতার প্রেরণা দানের জন্যেই সৃষ্ট। বাস্তবতার দিক থেকে দেখলে ধর্মের সত্যতার মধ্যেই বুদ্ধের সম্পর্ক রয়েছে।
যদিও উপরোক্তভাবে বুদ্ধের ৩ টি স্বরূপ দেখা যায় কিন্তু তাঁর মূল শিক্ষা ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন; আর তা হলো সমস্ত জীবজগতকে রক্ষা করা।
যে কোন পরিস্থিতিতে বুদ্ধ তাঁর বিশুদ্ধতার মধ্যে সুস্পষ্ট।
তথাপি, এই সুস্পষ্টতা মানে বুদ্ধ নয়, কারণ বুদ্ধ কোন অবকাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বুদ্ধত্ব মানুষকে জ্ঞানের অধিকারী করে। সত্য ধর্ম অনুসন্ধানকারীর সম্মুখে বুদ্ধ স্বয়ং সত্যজ্ঞান উপলব্ধির মধ্য দিয়ে উপস্থিত হন।।।
☞☞☞লেখাটি - বুদ্ধের শিক্ষা গ্রন্থ থেকেই নেওয়া।
'''হে জগৎ গুরু - জগৎ পূজ্য, হে তথাগতো '''

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement