Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

বিদর্শন ধ্যান ও বিজ্ঞান ভদন্ত বুদ্ধানন্দ মহাথেরো

বিদর্শন ধ্যান ও বিজ্ঞান  
ভদন্ত বুদ্ধানন্দ মহাথেরো 



বিদর্শন ধ্যান ও বিজ্ঞান দুইটার অবস্থান খুবই কাছাকাছি। বিদর্শনের  মাধ্যমে বাহিরের কোন বিষয়কে দর্শন করা নয়। নিজের দেহের ভিতরে যে সকল বস্তু রয়েছে যেমন অস্থি, মজ্জা, মাংস, ত্বক, বত্রিশ প্রকার অশুচি পদার্থকে বিভাজন করে বিশেষভাবে বা গভীরভাবে দর্শন করে সত্যকে উদঘাটন করার নামই হল বিদর্শন, এক কথায় আত্মদর্শন অথবা নিজেকে জানাই হল বিদর্শন। এখানে মিথ্যা কল্পনার জগতে ভেসে বেড়ানোর কোন সুযোগ নেই। বিদর্শন ধ্যানে মিথ্যা অথবা কল্পনার আশ্রয় নিলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কাল্পনিক, অবাস্তব ধ্যানধারণা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে। 

আর বিজ্ঞান হল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি রহস্যকে উদঘাটন করা, প্রোটন, অনু, পরমানুকে বিশেষভাবে অনুবিক্ষণ ও গবেষণা করে এবং বাস্তব সত্যকে আবিস্কার করা। এখানে কোনরকম মিথ্যা কিংবা কল্পনাপ্রসূত বিষয়কে টেনে এনে বিজ্ঞানের সঙ্গে সংযুক্ত করা যাবেনা। যদি তাই করা হয় তাহলে বিজ্ঞান মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে।  বিজ্ঞান যদি বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করে তবে বিজ্ঞান আর সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবেনা। তাই সর্বদা বাস্তবতার নিরিখেই গবেষণার কাজ চালিয়ে যাওয়া অপরিহার্য। বিজ্ঞানের ভাষায় শেষ কথা বলে কিছু নেই, অসীম হতে অন্তের দিকে এগিয় যাওয়াটাই হল বিজ্ঞান।

বিদর্শন ধ্যান অনুশীলন করতে গিয়ে কোন ঈশ্বরকে খোজে বেড়ানো কিংবা আমাকে অথবা এ পৃথিবী কে সুষ্টি করলো এ ধরণের চিন্তা করার বিষয়ও বিদর্শন ধ্যানে গুরুত্বহীন। যদি নিদর্শন ধ্যানে ঈশ্বরের বিষয়টি স্থান দেওয়া হয় তখন আর বেশীদূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবেনা। অন্যান্য ধর্মে যে ধ্যান পদ্ধতি সেখানে ঈশ্ব অথবা কোন দেবদেবীর বিষয়টি জুরে দেন। ঈশ্বর বা দেবদেবীর নাম জব করে ধ্যান অনুশীলন করে থাকেন। তাই তারা ঈশ্বর অথবা দেবদেবীর দর্শন পেলে মনে করেন সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেছে বিধায় ধ্যান সেখানেই সমাপ্ত হয়ে যায়। তাঁদের সর্বশেষ গন্তব্য ব্রহ্মলোক পর্যন্ত। সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার আর সুযোগ থাকেনা।

বিদর্শন ধ্যানে বুদ্ধ, ঈশ্বর বলে কিছু নাই। আছে শুধু এগিয়ে যাওয়া। এগিয়ে যাওয়ার পথে কারো সাক্ষাৎ পেলে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করা, গুরুত্বহীন ভেবে এড়িয়ে যাওয়া। শুধু তাই নয়, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে আরো কতকিছুর দর্শন মিলবে, তাতেও থেমে না যাওয়া। কেবল অসীমের বা মহাজগতের দিকে ধাবিত হওয়া। চলতে চলতে চারি আর্যসত্য জ্ঞান উপলব্ধি ঘটবে, থেমে যাওয়া চলবেনা। আরো  যেতে যেতে দুঃখ নিরোধ জ্ঞান উপলব্ধি হবে। তারপরও অদম্য গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। মহাসত্যকে অবলম্বন করে যতই সামনে এগিয়ে যাবে তখন অষ্টাঙ্গিক মার্গ জ্ঞান আয়ত্তে আসবে। এ ক্ষেত্রে বাহরের জগতকে চিন্তা করলে চলবেনা। শুধুমাত্র নিজের সাড়েতিন হাত শরীরে বর্তমা যা যা ঘটে চলেছে সে অনুভূতিগুলোকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং যা উৎপন্ন হচ্ছে তা পুনরায় বিলয় হচ্ছে, অর্থাৎ উৎপত্তি মাত্রই বিনাশ হয় সে অনিত্যতাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করারকেই বিদর্শন ধ্যান বলা হয়। তবে সবক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা নিয়ম বজায় রাখতে হবে। এভাবে ধ্যান অনুশীলন করলে মানুষ ধীরে ধীরে অন্ধকার ভেদ করে আলোর জগতে প্রবেশ করতে থাকবে। তারপর আস্তে আস্তে স্রোতাপত্তি, স্রোতাপত্তি ফল, সকৃদাগামী, সকৃদাগামী ফল, অনাগামী, অনাগামী ফল, সর্বশেষ মার্গ ও মার্গ ফল এ আট স্তর অতিক্রম করার পর জীবনের শেষ পরিণতি আর তা হল নির্বাণ।  সেই নির্বাণলোকে উপনীত হওয়া। নির্বাণই পরম সুখ, পরম শান্তি, পরম মুক্তি। লোভ-দ্বেষ-মোহ বা সর্বতৃষ্ণা ও আসব ক্ষয় করে জন্ম, জরা, ব্যাধি, মৃত্যুসহ সকল প্রকার দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করাই হল বিমুক্তি নির্বাণ। 

সকলে জ্ঞানী হোক, সবাই মঙ্গল লাভ করুক। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement