Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

পারাজিকা কি ও কেন?

  পারাজিকা কি ও কেন?

♦♦♦♦♦♦♦♦♦
পারাজিকা’ শব্দটি এসেছে একটি ক্রিয়া থেকে, যার অর্থ হচ্ছে ‘হেরে যাওয়া’ বা ‘পরাজিত হওয়া’। কোনো ভিক্ষু নিম্নোক্ত চারটি অপরাধের যেকোনো একটি অপরাধ করলে তার মানে হচ্ছে, সে তার নিজের ক্লেশগুলোর কাছে এমনভাবে আত্মসমর্পণ করেছে যে প্রথমেই সে তার ভিক্ষু হওয়ার মহান উদ্দেশ্যকে পরাজিত ও বিনষ্ট করে ফেলেছে। এই পরাজয় যে পুনরুদ্ধারের অযোগ্য, তা বিভঙ্গে কয়েকটি উপমার মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে :
“মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করা কোনো লোক,
শাখা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া কোনো শুষ্ক পাতা,
দু-টুকরো হয়ে ভেঙে যাওয়া কোনো সমতল পাথরকে যেমন আবার জোড়া লাগানো যায় না,
মাথা ভেঁঙে যাওয়া তালগাছ যেমন আর বাড়তে পারে না।”
কোনো ভিক্ষু এই অপরাধগুলোর যেকোনো একটি করলে সাংঘিক জীবন থেকে সে নিজেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে, যা সংশোধনের অসাধ্য এবং তখন থেকে সে আর ভিক্ষু হিসেবে গণ্য হয় না।
১. যৌনসংসর্গ শিক্ষাপদ
কোনো ভিক্ষু যদি ভিক্ষুর প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে, ভিক্ষুর জীবিকায় অংশ নিয়ে, শিক্ষা পরিত্যাগ ছাড়াই, নিজের দুর্বলতা ঘোষণা করা ছাড়াই যৌনমিলনে লিপ্ত হয়, এমনকি সেটা কোনো স্ত্রী-জাতীয় পশুর সাথে হলেও, সে তখন পরাজিত হয় এবং (ভিক্ষুসংঘের সাথে) তার আর সম্পর্ক থাকে না।
এখানে পরিপূর্ণ অপরাধ চারটি অঙ্গের দ্বারা সংঘটিত হয়, প্রচেষ্টা, লক্ষ্যবস্তু, জ্ঞান এবং সম্মতি।
ক) প্রচেষ্টা : যেকোনো উপায়ে একটি অঙ্গ আরেকটির মধ্যে অন্তত কেবল "তিলের বীজ পরিমাণ" ও প্রবেশ করে। এর মানে হচ্ছে যে, একজন ভিক্ষু যোনিদ্বার দিয়ে, মুখ দিয়ে, অথবা পায়ুপথে সঙ্গমে রত হলে, তাতে তার যে ভূমিকাই থাকুক না কেন, সে এই শিক্ষাপদের আওতায় আছে। সেখানে যৌনাঙ্গগুলোর মধ্যে কনডম বা অন্য কোনো আচ্ছাদন আছে কিনা তা বিবেচ্য নয়, ভিক্ষুটি এতে সক্রিয় অথবা নিষ্ক্রিয়ভাবে জড়িত কিনা, অথবা তাতে উভয় পক্ষের যে কেউ চরমানন্দ পেল কিনা, তাও বিবেচ্য নয়।
খ) লক্ষ্যবস্তু : যেকোনো মানুষ, "অমানুষ" (যক্ষ, নাগ, অথবা প্রেত), অথবা পশু—সে নারী, পুরুষ, ক্লীব অথবা হিজড়া যাই হোক না কেন—তার সাথে স্বেচ্ছায় যৌনমিলন করলে এই শিক্ষাপদের অধীনে পূর্ণ শাস্তি প্রাপ্য হয়। মৃতদেহের সাথে যৌনমিলনে রত হলে, আর সেটা যদি কাটা পড়া কোনো মাথাও হয়, তাতেও পূর্ণ শাস্তি প্রযোজ্য হবে যদি মৃতদেহটি তখনো এমন কাজের জন্য যথেষ্ট অক্ষত থাকে বা পচে গলে না যায়। তা ছাড়া, বিনীত-বত্থুতে নিজে নিজেই যৌনমিলন করার দুটো উদাহরণ দিয়েছে, একজন ভিক্ষু এমনভাবে পিঠ বাঁকাতে পারত যে তার পুরুষাঙ্গ নিজের মুখের মধ্যে ঢুকিয়েছিল, আর আরেকজন ভিক্ষুর ছিল অস্বাভাবিক দীর্ঘ পুরুষাঙ্গ যা সে নিজের পায়ুপথে ঢুকিয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই তাদের পূর্ণ শাস্তি হয়েছিল।
গ-ঘ) জ্ঞান এবং সম্মতি: যৌনমিলনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে হলে ভিক্ষুর অবশ্যই জানতে হবে যে, ঘটনাটি ঘটছে এবং তাতে অবশ্যই তার সম্মতি থাকতে হবে। কাজেই, যদি সে ঘুমের সময় যৌন হয়রানির শিকার হয় অথবা কোনোভাবে অজ্ঞান থাকে এবং যা ঘটছে সে সম্পর্কে পুরোপুরি অসচেতন থাকে, তাহলে তার কোনো শাস্তি প্রাপ্য হয় না। তবে যদি যৌন হয়রানিকালে তার জ্ঞান থাকে, অথবা শুরু থেকেই সে সচেতন থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে তার কোনো শাস্তি প্রাপ্য কিনা তা নির্ভর করে সে এই কাজের কোনো অংশে তার সম্মতি দিয়েছে কিনা তার উপরে।
সাধারণ অব্যাহতি, ভিক্ষু যদি পাগল হয়, ভুতে পাওয়া ভিক্ষু, ব্যথায় প্রলাপ বকা ভিক্ষু, এবং প্রথম অপরাধকারী যার কাজের ফলশ্রুতিতে বুদ্ধ এই শিক্ষাপদ বিধিবদ্ধ করে দিয়েছিলেন।
সারসংক্ষেপ, মানুষ, অমানুষ অথবা পশুর সাথে যৌনাঙ্গ, পায়ুপথ অথবা মুখ দিয়ে স্বেচ্ছাকৃত যৌনমিলন হচ্ছে একটি পারাজিকা অপরাধ।
২. অদত্তবস্তু গ্রহণ শিক্ষাপদ
যদি কোনো ভিক্ষু লোকালয় অথবা অরণ্য থেকে যা দেওয়া হয় নি তা গ্রহণ করে, যেটাকে চুরি বলে বিবেচনা করা হয়,—এবং যা দেওয়া হয় নি তা গ্রহণ করার দরুন রাজারা যেভাবে অপরাধীকে আটক করে নির্যাতন করে, বন্দী করে রাখে, অথবা নির্বাসন দেয় এই বলে, "তুই একটা ডাকাত, তুই একটা বোকা, তুই রাহুগ্রস্ত, তুই চোর"—একইভাবে একজন ভিক্ষু যা দেওয়া হয়নি তা গ্রহণ করলে সে তখন পরাজিত হয় এবং সে আর ভিক্ষুসংঘের সাথে সম্পর্কভুক্ত থাকেনা।
বিভঙ্গ চুরিকর্মকে চারটি অঙ্গে সংজ্ঞায়িত করেছে।
১. লক্ষ্যবস্তু : কোনো এক লোক অথবা একদল লোকের অধিকারে থাকা যেকোনো কিছু। এমন কিছু যা "দেওয়া হয় নি, বিসর্জিত হয় নি, পরিত্যক্ত হয় নি; সুরক্ষিত, সংরক্ষিত, দাবীকৃত , অন্য কারো দ্বারা অধিকৃত।"
২. চেতনা, ভিক্ষু লক্ষ্যবস্তুটিকে অন্য লোকের অথবা একদল লোকের মালিকানাধীন বলে জানে। যা দেওয়া হয় নি তা গ্রহণ করাটা চুরি হিসেবে গণ্য হতে হলে ভিক্ষুর অবশ্যই জিনিসটাকে দেওয়া হয়নি বলে জানতে হবে। তাই যদি সে কোনো জিনিস গ্রহণ করে, যদিও সেটা দেওয়া হয়নি, অথচ সে একান্তই বিশ্বাস করে যে এটি মালিকবিহীন অথবা পরিত্যক্ত জিনিস, তাহলে সেখানে কোনো অপরাধ নেই।
৩. ইচ্ছা, সে এটিকে চুরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। যা দেওয়া হয়নি তা গ্রহণ করাট, এমনকি সেটা দেওয়া হয়নি বলে জেনেও গ্রহণ করাটা, চুরি বলে গণ্য হয় একমাত্র যদি তার সেটিকে চুরি করার ইচ্ছা থাকে। তাই অনপরাধের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন ভিক্ষু সাময়িকভাবে অথবা বিশ্বাস করে নিলে তাতে তার কোনো শাস্তি প্রাপ্য হয়না।
৪. প্রচেষ্টা, সে এটিকে গ্রহণ করে। ( জিনিসটি অন্যের, এটিকে সে অন্যের বলে জানে, আর সে চুরির ধান্দায় আছে, এখন যদি সে জিনিসটা নেয়, তাহলে সেটাই চুরি হয়।)
৫. লক্ষ্যবস্তুর মূল্য, চুরির যেকোনো ঘটনা একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, কিন্তু সেই অপরাধের গুরুত্ব নির্ধারিত হয় জিনিসটির মূল্যমানের উপরে। শিক্ষাপদে এই বিষয়ে বলা আছে “যা দেওয়া হয়নি তা গ্রহণ করার দরুন রাজারা অপরাধীকে যেভাবে, নির্বাসন দেয় এই বলে, তুই একটা চোর। অন্য কথায় কোনো একটি চুরির ঘটনা পারাজিকা পর্যায়ের হতে হলে এটি অবশ্যই একটি অপরাধমূলক ঘটনা হতে হবে, বুদ্ধের সমকালীন যার মানে হচ্ছে, চুরি করা জিনিসের মূল্য সেই সময়ের মুদ্রায় কমপক্ষে পাঁচ মাসক হতে হবে।
সারসংক্ষেপ, ১ ট্রয় আউন্সের ২৪ ভাগের ১ ভাগ সোনার সমান অথবা তারও বেশি মূল্যের কোনো কিছু চুরি করলে বা করালে পারাজিকা অপরাধ হয়।
৩. মানুষের দেহ শিক্ষাপদ
কোনো ভিক্ষু যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মানুষকে তার জীবন থেকে বঞ্চিত করে, অথবা তাকে হত্যার জন্য কোনো হত্যাকারী খোঁজে, অথবা মৃত্যুর সুবিধাগুলো প্রশংসা করে, অথবা তাকে মৃত্যুর জন্য উৎসাহিত করে (এই বলে) : "ভদ্র মহোদয়, আপনার এই জঘন্য, দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের কী প্রয়োজন? আপনার পক্ষে জীবনের চেয়ে মরণই ভালো হবে," অথবা মনে মনে এমন ধারণা নিয়ে, এমন উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্নভাবে মরণের সুবিধাগুলোর প্রশংসা করে অথবা তাকে মরণে উৎসাহিত করে, সেও পরাজিত হয় এবং সে আর ভিক্ষুসংঘের সাথে সম্পর্কভুক্ত থাকে না।
.
ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মানুষের মরণের কারণ হওয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত এই শিক্ষাপদটিকে সবচেয়ে ভালোভাবে বুঝা যায় তার পাঁচটি অঙ্গের মাধ্যমে, পরিপূর্ণ অপরাধ হতে হলে যার সবগুলোই বর্তমান থাকতে হয়। এগুলো হচ্ছে :
১) লক্ষ্যবস্তু একজন মানুষ হতে হবে, বিভঙ্গ অনুসারে এর মধ্যে মানুষের ভ্রুণও অন্তর্ভুক্ত। গর্ভে উৎপত্তির পরপরই বিজ্ঞানের প্রথম উৎপত্তি থেকে শুরু করে একদম মরণের সময় পর্যন্ত যেকোনো বয়সের মানুষই মানুষ বলে গণ্য হয়।
২) ইচ্ছা—জেনেশুনে, সচেতনভাবে, ইচ্ছাকৃতভাবে, এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো ব্যক্তির মরণের কারণ হতে চাওয়া। এখানে "জেনেশুনে" এর মধ্যে নিম্নোক্ত চেতনা অঙ্গটিও অন্তর্ভুক্ত।
৩) চেতনা—সেই ব্যক্তিকে জীবিত প্রাণি বলে মনে হওয়া।
৪) প্রচেষ্টা—সেই ব্যক্তির মরণের উদ্দেশ্যে কৃত যেকোনো কিছু।
৫) ফলাফল—সেই কাজের ফলে সেই ব্যক্তির জীবিতেন্দ্রিয় বিচ্ছেদ হওয়া।
সারসংক্ষেপ, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো এক মানুষের মৃত্যু ঘটানো, তা যদি মানব ভ্রুণও হয়—সেটা নিজের হাতে হোক, হত্যাকারীর মাধ্যমে হোক, সে ব্যক্তিকে মরতে উসকানি যুগিয়ে হোক, অথবা মরণের সুবিধাগুলো বর্ণনা করে হোক—তা একটি পারাজিকা অপরাধ হয়।
৪. উচ্চতর মানসিক অবস্থা শিক্ষাপদ
কোনো ভিক্ষু যদি প্রত্যক্ষভাবে না জেনে উচ্চতর মানসিক অবস্থা, একটি সত্যিকারের মহান আর্যজ্ঞান ও দর্শন নিজের মধ্যে আছে বলে দাবি করে এই বলে যে, "আমি এরূপই জানি; আমি এরূপই দেখি," অথচ পরবর্তীতে জিজ্ঞাসিত হয়ে বা জিজ্ঞাসিত না হয়ে, অনুতপ্ত হয়ে এবং বিশুদ্ধতা আকাঙ্ক্ষা করে সে বলতে পারে, "বন্ধুগণ, না জেনেই আমি বলেছিলাম আমি জানি; না দেখেই আমি বলেছিলাম আমি দেখি—নিরর্থকভাবে, মিথ্যাভাবে, অহেতুকভাবে," যদি সেটা ভুল অনুমানবশত না হয়, তাহলে সেও পরাজিত হয় এবং সে আর ভিক্ষুসংঘের সাথে সম্পর্কভুক্ত থাকে না।
এই বিধির অধীনে পূর্ণাঙ্গ অপরাধ হয় চারটি অঙ্গ পরিপূর্ণ হলে :
১) লক্ষ্যবস্তু : একটি উচ্চতর মানসিক অবস্থা।
২) চেতনা : সে দেখে যে এটি তার মধ্যে নেই।
৩) প্রচেষ্টা : সে কোনো মানুষকে এই অবস্থার কথা নিজের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে জানায়—হয় সেই অবস্থাটা তার নিজের মধ্যে আছে, অথবা সে নিজেই সেই অবস্থার মধ্যে আছে।
৪) ইচ্ছা : দুষ্ট উদ্দেশ্যে সত্যকে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করার ইচ্ছা।
বিনীত-বত্থুর বিশেষ ঘটনাবলী
১) ব্রাহ্মণরা অত্যাধিক শ্রদ্ধা বা গারবতা দেখিয়ে ভিক্ষুদেরকে অর্হৎ হিসেবে সম্বোধন করেছিল ("অর্হৎগণ আসুন... অর্হৎগণ বসুন), যদিও ভিক্ষুদের সেরকম কোনো অর্জন ছিল না, বা সেরকম কোনোকিছু লাভ করেনি। এতে ভিক্ষুরা মুশকিলে পড়ে গেল। তাই তারা বুদ্ধের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল এমন পরিস্থিতিতে কী করা যায়। বুদ্ধের জবাব ছিল : এমন "শ্রদ্ধাসম্পন্ন বক্তা"র কাছ থেকে এমন আমন্ত্রণ আসলে তা গ্রহণে কোনো অপরাধ নেই। বিষয়টা হচ্ছে যে, সেখানে আসতে, বসতে কোনো অপরাধ হয় না যতক্ষণ না ইচ্ছাটা থাকে কেবল আমন্ত্রণটা গ্রহণের, কিন্তু সম্বোধনটা যে সঠিক তা বুঝানোর উদ্দেশ্যে নয়।
২) গ্রামে থাকাটা মনটাকে অস্থির করে দেয় তা ভেবে দেখা, নির্জনতার আকাঙ্ক্ষা, অর্হত্ত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষা, বুদ্ধ অরণ্যবাসের প্রশংসা করেছেন বলে স্মরণ করা, এই পবিত্র ব্রহ্মচর্যজীবনে সতীর্থদের কাছে একটি ভালো দৃষ্টান্ত হিসেবে হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। এ সমস্ত কারণে অথবা এ ধরনের কারণে কোনো ভিক্ষু ধুতাঙ্গ চর্চা করতে চাইলে সেখানে কোনো অপরাধ নেই।
অনপরাধ : নিজের অর্জন সম্পর্কে ভুল বুঝে এমন দাবি করলে অপরাধ হয় না; অহংকারের ইচ্ছায় না করলে কোনো অপরাধ হয় না, অর্থাৎ কেউ এমন একটা দাবি করে বসল যেটা শুনলে হয়ত পরোক্ষভাবে একটি উচ্চতর মানসিক অবস্থাকে বুঝাচ্ছে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আদৌ তা নয়।
সারসংক্ষেপ : একটি উচ্চতর মানসিক অবস্থা লাভ করেছে বলে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কাউকে মিথ্যা বলাটা পারাজিকা অপরাধ।
কোনো ভিক্ষু এই চারটি পারাজিকা বিধির যেকোনোটি লঙ্ঘন করলে এমনিতেই সে আর ভিক্ষু থাকে না। তার আর চীবর ত্যাগের আনুষ্ঠানিকতায় যাওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না, কারণ এই বিধির লঙ্ঘন করাটা স্বভাবতই হচ্ছে চীবর ত্যাগের কাজ। সে আর কোনো একটি সংঘকর্মে থাকে না (অর্থাৎ সে আর কোনো সংঘসভায় অংশ নিতে পারে না), কোনো একটি আবৃত্তিতে থাকে না (অর্থাৎ, সে আর উপোসথে অংশ নিতে পারে না ), সে আর ভিক্ষুদের কোনো প্রশিক্ষণে থাকে না।
যদি কোনো ভিক্ষু এগুলোর কোনো একটা বিধি ভঙ্গ করেও ভিক্ষুর ভান করে থাকে, সে আসলে ভিক্ষু হিসেবে গণ্য হয় না; বিষয়টি জানা মাত্রই তাকে অবশ্যই সংঘ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। সে আর এই জীবনে ভিক্ষু হিসেবে উপসম্পদা লাভ করতে পারে না। যদি সে কোনো একটা সংঘে উপসম্পদা লাভের চেষ্টা করে, যারা তার অপরাধ জানে না, তার উপসম্পদা অসিদ্ধই থেকে যায়, আর সত্য বেরিয়ে আসলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে সংঘ থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
বারটি সমতুল্য পারাজিকা:
এগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এগার ধরনের অযোগ্য শ্রেণি, যাদেরকে প্রথম থেকেই ভিক্ষু হিসেবে উপসম্পন্ন হতে দেওয়া উচিত নয়। যদি তাদেরকে উপসম্পন্ন দেওয়া হয়ও, তাদের উপসম্পদা অসিদ্ধ; ধরা পড়লে তাদেরকে অবশ্যই সারা জীবনের জন্য বহিষ্কার করতে । সেগুলো হচ্ছে :
১.পণ্ডক ব্যক্তি (এটি আসলে খোজা ব্যক্তি, অথবা নপুংসক হয়ে জন্মানো ব্যক্তি),
২."অমানুষ" সত্ত্ব (এর মধ্যে নাগ, প্রেত, দেবতা, এবং যক্ষ অন্তর্ভুক্ত),
৩. উভয় লিঙ্গ ব্যক্তি,
৪.উপসম্পদা ছাড়াই যে ব্যক্তি নিজেকে ভিক্ষু বলে পরিচয় দেয়,
৫.যে ভিক্ষু ভিক্ষুত্ব ত্যাগ না করেই অন্য ধর্মে চলে গেছে,
৬.পিতৃহত্যাকারী,
৭.মাতৃহত্যাকারী,
৮.অর্হৎ হত্যাকারী,
৯.ভিক্ষুণীকে যৌন হয়রানিকারী ব্যক্তি,
১০.হিংসাবশে বুদ্ধকে আঘাত করে রক্তপাত করানো ব্যক্তি,
১১. যে ব্যক্তি তার অবস্থান ধর্ম-বিনয়ের বিরুদ্ধে জেনে বা সন্দেহ করেও অসৎভাবে সংঘে ফাটল ধরিয়ে দেয় বা সংঘভেদের কারণ হয়।
এই এগারটি সমতুল্য পারাজিকা ভিক্ষুণীদের বেলায়ও সমানভাবে প্রযোজ্য।
১২.একজন ভিক্ষুণী ভিক্ষুণীসংঘ ত্যাগ করে গৃহী হয়ে যায় (চুব.৪৩৪)। ভিক্ষুণীদের চীবর ত্যাগ ভিক্ষুদের মতো নয়। তাদের চীবর ত্যাগের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নেই। সংঘ ত্যাগ করলে তারা আর এই জীবনে উপসম্পদা নেওয়ার অনুমতি পায়না।
(সংক্ষিপ্তভাবে ভিক্ষুদের পারাজিকা বিধি বর্ণনা করা হল। আরো বিস্তারিত জানতে বিনয় পিটক অধ্যায়ন করুন)
Colleted from
♥উ জ্যোতিসারা ভিক্ষু♥

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement