মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সম্রাট অশোক (২৭৩ - ২৩২ খৃষ্ট-পূর্ব) প্রাচীন ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কলিঙ্গ রাজ্যের (বর্তমান ভারতের ওড়িশা প্রদেশ) রক্তাক্ত বিজয়ের পর বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন। ভয়াবহ কলিঙ্গ যুদ্ধ যে আতঙ্ক ও দূর্বিপাক সৃষ্টি করেছিল, সেইসব বিষয় নিয়ে অনুতপ্ত হয়ে সম্রাট অশোক সহিংসতা ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন এবং মহানুভবতার সাথে যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট কলিঙ্গ রাজ্যের জনগণের দুঃখ দূর্দশাকে সম্মান এবং যথাযথ মর্যাদা দিয়ে তা প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করেন। সম্রাট স্তুপ এবং স্তম্ভ নির্মাণের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারকার্য শুরু করেন এবং পশু-পাখিদের প্রতি দয়াশীল এবং মানুষের জীবনযাপনকে ধর্মমুখী করার জন্য তাঁর ধর্ম-প্রচারের মাধ্যমে আহ্বান করতে থাকেন। তাঁর নির্মাণকৃত স্তুপগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ভারতের অঙ্গরাজ্যে মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে অবস্থিত সাঁচী স্তুপ। এটার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল খৃষ্ট-পূর্ব ৩য় শতাব্দীতে এবং পরবর্তীতে এটার নির্মাণ কাজ আরো সম্প্রসারণ করা হয়। এই স্তুপের উৎকীর্ণ ফটক যেটি তোরণ নামে পরিচিত, মূলত ভারতে বৌদ্ধ শিল্পের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্রাট এছাড়াও পুরো দেশ জুড়ে অনেক রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, পান্থশালা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করেন। তিনি তাঁর প্রজাদের ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাত, রাজনীতি নির্বিশেষে সমান আচরণ করতেন।
সম্রাট অশোকের আমলেই বৌদ্ধ ধর্ম ভারতের বাইরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে পরে। অশোকের স্থম্ভ ও স্তুপ থেকে জানা যায়, বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারের জন্যে সম্রাট তাঁর প্রতিনিধিদের ভারতের দক্ষিণের দিকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত, পশ্চিমের গ্রীক-সাম্রাজ্যে, বিশেষ করে প্রতিবেশী গ্রিক-ব্যাক্ট্রিয় রাজ্য এবং সম্ভবত ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন।
0 Comments