বুদ্ধ কাকে বলে? বা বুদ্ধ অর্থ কি?

‘বুদ্ধ’ নাম বোধি প্রাপ্তির পর সম্যক সম্বোধি প্রাপ্তজনের জন্য এ শব্দ প্রয়োগ হয়ে থাকে।
‘ ন মাতরা কতম
ন পিতরা কতম
বিমোক্খন্তি।
এতং বুদ্ধানং ভগবন্তং বোধিযা মূলে.....পজ্ঞত্তি।’
‘বুদ্ধ’এ নাম তাঁকে মাতা, পিতা কেহ দেননি। বরং ‘বিমোক্ষ’ যা ভগবান বোধিবৃক্ষ মূলে জ্ঞান প্রাপ্ত পুরুষ হওয়ার কারণে বলা হয়ে থাকে।
বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির পর বুদ্ধের সুপ্রসন্ন দেহাবয়ব দেখে পরিব্রাজক উপক অতীব বিমোহিত হয়েছিলেন। এবং তিনি বলেছেন-‘ আয়ুস্মান ! আপনি অতি প্রসন্ন । আপনার নয়নযুগল এবং ইন্দ্রিয় সমূহ বড়ই প্রসন্ন। শরীর বর্ণ খুবই জ্যোতিষ্মান।
আপনি কার মত অনুসারী?
বুদ্ধ বললেন-‘ আমি কোন মতের অনুসারী নই।’
উপক আবার বললেন-‘ আপনার আচার্য বা গুরু কে?’
বুদ্ধ বললেন-‘ আমার কোন আচার্য বা গুরু নাই।’
আপনি কি মনুষ্য?
বুদ্ধ বললেন-‘ না, মনুষ্যও নই।’
আপনি কি গন্ধর্ব?
বুদ্ধ বললেন-‘ আমি গন্ধর্বও নই।’
আপনি কি দেবতা?
না, আমি দেবতাও নই।’
আপনি কি যক্ষ?
না, যক্ষও নই।
আপনি কি ব্রহ্মা?
‘না, ব্রহ্মাও নই।’
উপক আবার বললেন-‘ তাহলে আপনি যদি মনুষ্য না হন, দেবতা না হন, গন্ধর্ব না হন, যক্ষ না হন, ব্রহ্মাও না হন, তাহলে কে?
উত্তরে বুদ্ধ বললেন-‘ আমি জিন ( জয়ী), আমি বুদ্ধ।’
আমি স্বয়ং সত্যকে জেনেছি, সে জন্য আমি সম্যক সম্বুদ্ধ।
বুদ্ধ এক অথৈ জ্ঞান। যেরকম মানুষ এ পৃথিবীতে চলা-ফেরা করে, সাধারণ কাজ-কর্ম করে এবং নিজেদের পরিবার পরিজন স্ত্রী- পুত্র-কন্যার ভরণ পোষণ করতে দেখা যায়, সে রকম নন বুদ্ধ।
রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর প্রমুখ অনেকে বুদ্ধকে ‘বুদ্ধদেব’ বলেও অজ্ঞানতা বশত: বা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে সম্বোধন করেছেন।এরূপ সম্বোধনের দ্বারা কলঙ্কিত করা হয় বুদ্ধকে।কেহ বুদ্ধকে দেবতা সম্বোধন করতে পারেন না। কেননা, বুদ্ধ নিজেই বলেছেন, তিনি দেবতা নন। কারণ, দেবতাদের রয়েছে রাগ (আসক্তি), দ্বেষ ও মোহ। এবং সুখ বিলাস তথা অফুরন্ত ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের ইচ্ছা। বুদ্ধ রাগ, দ্বেষ ও মোহ রহিত। বিমুক্ত হয়েছেন সমস্ত বন্ধন হতে। সম্পূর্ণ মানবীয় দুর্বলতা সমূহ এবং অসঙ্গতি সমূহ সমুচ্ছেদ করার কারণে তিনি মানবও নন। সর্বোত্তম জ্ঞান প্রপ্তির কারণে তাঁকে কেবল ‘বুদ্ধ’ই বলা যায়। অন্যকোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায় না।
যিনি বুদ্ধ হবেন, তাঁকে প্রথমে বোধিসত্বরূপে ১০ পারমিতা সমূহ পূরণ করতে হয়।
সে দশ পারমিতা কি?
১) দান পারমিতা
২) শীল পারমিতা
৩) নৈষ্ক্রম্য পারমিতা
৪) প্রজ্ঞা পারমিতা
৫) বীর্য পারমিতা
৬) ক্ষান্তি পারমিতা
৭) সত্য পারমিতা
৮) অধিষ্ঠান পারমিতা
৯) মৈত্রী পারমিতা এবং
১০) উপেক্ষা পারমিতা।
এগুলি ছাড়াও পূরণ করতে হয় উপরোক্ত প্রত্যেকটির ১০ উপ-পারমী ও দশ পরমার্থ পারমী। সবমিলে ৩০ প্রকারে পূরণ করতে হয় পারমী সমূহকে।
বোধিসত্ব সিদ্ধার্থ গৌতম উপরোক্ত পারমী সমূহ পূর্ণ করে সম্যক সম্বোধি প্রাপ্ত করার পর বুদ্ধ হয়েছেন। জ্ঞান প্রাপ্তির পূর্বে সিদ্ধার্থ গৌতম কেবল বোধিসত্ব নামে অভিহিত হতেন।
বোধিসত্ব কে এবং কি করে হয়?
বোধিসত্ব হওয়ার জন্য কোন সত্বকে প্রথমে অষ্টগুণে বিভূষিত হতে হয় । সে অষ্টগুণ হল:
১) তাঁকে মনুষ্য জন্ম নিতে হবে।
২) তাঁকে পুরুষ হতে হবে।
৩) তাঁকে সম্যক সম্বুদ্ধের সাক্ষাতেই বুদ্ধত্ব প্রার্থনা করতে হবে।
৪) তাঁকে গৃহত্যাগী হতে হবে।
৫) তাঁকে ইহ জন্মে অরহত্ব ফল লাভের হেতু থাকতে হবে।
৬) তাঁকে পন্চ অভিজ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।
৭) তাঁকে বুদ্ধের জন্য সমর্পিত জীবন হতে হবে।
৮) বুদ্ধের দ্বারা তাঁকে ভবিষ্যদ্বাণী লাভ করতে হবে।
উপরোক্ত শর্ত সমূহ সব পূর্ণ করে সুমেধ তাপস বোধিসত্ব সংজ্ঞা লাভ করেছিলেন।
যিনি বুদ্ধের দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী প্রাপ্ত হয়ে বুদ্ধ হওয়ার জন্য অবিরাম প্রযত্নশীল হয়ে থাকেন তিনি বোধিসত্ব নামে আখ্যায়িত হন।
বোধিসত্ব কি করে ‘বুদ্ধ’ হন?
বোধিসত্বকে অবিরাম চতুরসংখ্য লক্ষ কল্পকাল পর্যন্ত পারমী পূরণ করতে হয়।
বোধিসত্ব জন্ম গ্রহণ করে এক এক জন্মে এক এক পারমী পূরণ করতে করতে বুদ্ধত্বের পথে পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হন।
এ পারমী পূর্ণ করার সময় তিনি দশ ভূমিও প্রাপ্ত করে থাকেন।
১) দশ ভূমির প্রথম ভূমি হল ‘ মুদিতা’ ভূমি। যে রকম স্বর্ণকার সোনা-রূপাকে আগুনে পুডিয়ে ময়লা দূরীভূত করেন, ঠিক সে রকম বোধিসত্বও স্বীয় চিত্তের ময়লা দূরীভূত করতে ইহা স্পষ্টরূপে দেখে থাকেন যে, মানুষ প্রথমে প্রমাদগ্রস্থ থাকলেও পরে যদি প্রমাদ ত্যাগ করে থাকে, তিনি মেঘ মুক্ত চন্দ্রের মত প্রকাশিত হয়। তাঁকে এ বিষয়ে বোধ হলে তখন তাঁর মনে মুদিতা উৎপন্ন হয়। এবং সকল প্রাণীর প্রতি তাঁর মনে কল্যাণ করার ভাবনা প্রকট হয়ে থাকে।
২) দ্বিতীয়ত তিনি ‘বিমল’ ভূমি প্রাপ্ত করেন। এ সময় বোধিসত্ব কাম চেতনা হতে সর্বদা মুক্ত থাকেন। তিনি কারুণিক হয়ে থাকেন। সবার প্রতি সমান কারুণিক হন। তিনি যেমন কারো দোষকে যেমন বৃদ্ধি করে দেখেন না, তেমনি গুণকেও খাটো করেন না।
৩) বোধিসত্ব তৃতীয়ত ‘প্রভকারী-ভূমি’ প্রাপ্ত হন। এ সময় বোধিসত্বের প্রজ্ঞা দর্পণ সমান স্বচ্ছ হয়ে থাকে। তিনি অনিত্য এবং অনাত্ম তত্বকে ভালমতে বুঝে থাকেন। তা তাঁর গভীর হৃদয়ঙ্গম হয়ে যায়। এ সময় তাঁর একমাত্র আকাঙ্খা হল উঁচ্চ হতে উচ্চ প্রজ্ঞায় আরোহন করা এবং সে জন্য তিনি মহান হতে মহানতম ত্যাগে করতেও কুণ্ঠিত হন না।
৪) চতুর্থ পর্যায়ে হল ‘অর্চিস্মতী-ভূমিকে লাভ করা। এ সময়ে বোধিসত্ব স্বীয় সমস্ত ধ্যান আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের চার সম্যক ব্যায়ামের মধ্যে এবং চার ঋদ্ধিবল ও পাঁচ প্রকার শীলেই কেন্দ্রীভূত করে থাকেন।
৫) পন্চম স্তরে প্রাপ্তভূমি হল ‘সুদুর্জয়া’। এ অবস্থায় বোধিসত্ব সাপেক্ষ এবং নিরপেক্ষ এর মধ্যে অবস্থান করে সম্বন্ধকে ভালমতে হৃদয়ঙ্গম করে থাকেন।
৬) ষষ্ট পর্যায়ে বোধিসত্ব লাভ করেন ‘ অভিমুখী-ভূমি’। এ সময়ে বোধিসত্ব বিষয় সমূহের বিকাশ, সেগুলোর কারণ দ্বাদশ নিদানকে হৃদয়ঙ্গম করে বোধিসত্ব সম্পূর্ণরূপে তৈরী হয়ে যান, যাতে আরো অভিমুখী নামক বিদ্যা তাঁর মনে সমস্ত অবিদ্যাগ্রস্থ প্রাণীদের জন্য অসীম করুণার সন্চার করে দিয়ে থাকে।
৭) এ স্তরে বোধিসত্ব ‘দূরঙ্গমা-ভূমি’ প্রাপ্ত করে থাকেন। এ সময় বোধিসত্ব দেশ, কালের যে বন্ধনে ছিলেন তা হতে অনন্তের সাথে একীভূত হয়ে যান। কিন্তু এখনও প্রাণী সমূহের প্রতি করুণাভাব রাখার কারণে দেহধারী থাকেন। তিনি অন্যদের মত ভব তৃষ্ণাগ্রস্থ হন না। পৃথক থাকেন। যেমন পদ্মকে জল স্পর্শ করে না। তিনি তৃষ্ণা মুক্ত থাকেন। তিনি দানশীল ও ক্ষমাশীল হয়ে থাকেন। সর্বদা কুশলে রত থাকেন। তিনি বীর্যবান হয়ে থাকেন। এ সময় তিনি অধিকতর শান্ত, বুদ্ধিমান ও প্রজ্ঞাবান হন।
স্বীয় এ জীবনেই সকল ধর্ম সমূহ তিনি জেনে থাকেন। কিন্তু লোকের সামনে সেগুলি এভাবে উপস্থাপন করেন যে, যাতে লোকেরা বুঝতে পারে। তিনি জানেন যে, তাঁকে কুশল ও ক্ষমাশীল হতে হবে। অন্য লোকেরা তাঁর সাথে যে রকমই আচরণ করুন না কেন, তাতে উদ্বিগ্নতা রহিত হয়ে তা তিনি সহ্য করে থাকেন। কেননা তিনি জানেন যে, অজ্ঞানের কারণেই তারা তার মনকে ঠিক ঠিক বুঝতে অক্ষম হচ্ছে। সাথে সাথে তিনি অন্যদের কল্যাণ করতে নিজের প্রয়াস সমূহের সামান্যতম শিথিলতাও রাখেন না। এবং তিনি নিজের চিত্তকেও কোন দিকে বিচলিত করেনা। এ সময় তাঁ নিকট যতই বিপত্তি সমূহ আসুক না কেন তিনি স্বীয় লক্ষ্য হতে একবিন্দুও বিচ্যুত হননা।
৮) অষ্টম স্তরে বোধিসত্ব জীবনে ‘অচল-ভূমি’ অবস্থা প্রাপ্ত হন। এ অবস্থায় বোধিসত্ব কোন প্রয়াস করেন না। তিনি কৃত-কৃত্য হয়ে থাকেন। তাঁর দ্বারা যা কিছু কুশল কর্ম হয়ে থাকেন সে সব অনায়াসেই হয়ে থাকে। যা কিছু করে থাকেন তাতে সফল হয়ে থাকেন।
৯) এ পর্যায়ে বোধিসত্ব ‘সাধুমতি-ভূমি’ প্রাপ্ত করে থাকেন। এ স্তরে বোধিসত্ব সমস্ত প্রকার ধর্মের পদ্ধতি সমূহ জয় করে থাকেন। অথবা সেগুলির ভিতরে প্রবেশ করে থাকেন। সর্বদিশাকে তিনি জয় করেন এ স্তরে। সমস্ত সীমাকেও অতিক্রম করে থাকেন। ইহাকেই সাধুমতি অবস্থা বলা হয়।
১০) স্বীয় দশম স্তরে বোধিসত্ব ‘ধর্ম-মেধা’ভূমিতে চলে আসেন। এ অবস্থায় তাঁর দিব্যদৃষ্টি লাভ হয়।
বুদ্ধ হওয়ার অবস্থার জন্য আবশ্যক এ দশ বল বা শক্তি বোধিসত্ব লাভ করে থাকেন। এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থা প্রাপ্ত হতে বোধিসত্বকে কেবল এ দশ ভূমিকেই প্রাপ্ত করলে হয় না, বরং সাথে সাথে পারমী সমূহও পালন করে আসতে হয়।
বোধিসত্ব এক এক জন্মে এক পারমী সমূহ পূরণ করে থাকেন। পারমিতা সমূহের পূরণ ক্রমশ: করে থাকেন। যখন দশ পারমিতা এবং দশ ভূমি উভয় সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়ে থাকেন সে বোধিসত্বই ‘বুদ্ধ’ হয়ে থাকেন।
জাতক সমূহের সিদ্ধান্ত অথবা বোধিসত্বের অনেক জীবনের সিদ্ধান্ত ব্রাহ্মণদের অবতারবাদের সিদ্ধান্ত হতে সম্পূর্ণ পৃথক ও প্রতিকুল।অর্থাৎ ঈশ্বরের অবতাররূপে বার বার জন্ম নেওয়া সিদ্ধান্ত ইহার সামন্জস্য নয়।
ব্রাহ্মণবাদ শাশ্বতবাদ অর্থাৎ আত্মার নিত্য অস্তিত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বুদ্ধ প্রমাণিত করেছেন যে, জগতে কিছুই শাশ্বত নয়। সমস্ত পদার্থ বা বস্তু বিচারাদি হল অনিত্য। পরিবর্তনশীল। বুদ্ধ সন্ততিবাদের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়েছেন। যাতে মন বা চিত্ত সারাক্ষণ সংসরণ হয়ে থাকে। চ্যুতি চিত্ত যখন প্রতিসন্ধিতে পড়ে থাকে তখন নতুন বিজ্ঞান বা চেতনা উৎপন্ন হয়। নতুন বিজ্ঞান সে চ্যুত চিত্ত হতে উৎপন্ন হয়ে থাকে সে জন্য তাকে তাই মান্য করা হয়, কেননা চ্যুতির সময় যে গুণধর্ম হয় সে গুণধর্ম নিয়েই নতুন চিত্ত উৎপন্ন হয় । অর্থাৎ ‘তাই’ নয় কিন্তু ‘উহা’ হতেই উৎপন্ন হয়েছে। এজন্য ইহা ‘উহা’ই।
এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, চিত্ত সংসরণ করে থাকে। সেদিক হতে বোধিসত্ব বুদ্ধ হওয়ার জন্য জন্মের পর জন্ম গ্রহণ করে থাকেন। জাতক কথা সমূহে ভিত্তি যে, বুদ্ধের ব্যক্তিত্বে গুণ সমূহের পরাকাষ্ঠার সমাবেশ ঘটেছে।
অবতারবাদ অনুসারে ভগবানকে স্বীয় অস্তিত্বে নির্মল হওয়ার আবশ্যকতা নাই। ব্রাহ্মণী অবতারবাদের ব্রাহ্মণী-সিদ্ধান্ত ইহা বলে থাকে যে, ঈশ্বরাবতার নিজের আচরণে অপবিত্র হলেও, ঘোর অনৈতিক হলেও, কিন্তু তিনি নিজের অনুসারী ভক্তদের রক্ষা করে থাকেন।
বুদ্ধ হওয়ার পূর্বে বোধিসত্বের জন্য দশ পারমিতা পালন করতে জন্ম নেওয়া হল শ্রেষ্ঠতম জীবনের শর্ত। এরকম কোন ধর্মে দেখা যায়না। ইহা হল অনুপম। অন্যকোন ধর্মের সংস্থাপকের জন্য এ প্রকার কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আবশ্যকতা নাই।
যিনি বুদ্ধ হবেন তাঁর মধ্যে দশ প্রকার গুণ হতে হয়। সেজন্য বুদ্ধকে ‘দশবল’ওবলা হয়। তথাগত বুদ্ধকে অনেক নামে সম্বোধিত করা হয়েছে। সেগুলির মধ্য একটি হল ‘দশবল’।
ভারতের গুজরাত রাজ্যের ধরিত্রীও বুদ্ধবাণীর দ্বারা পল্লবিত রয়েছে। সেখানকার অরবল্লী জিলার দেবকী মৌরী নামক স্থানে বুদ্ধ বিহার করতে খোদাই করার সময় কিছু পুরাতত্ব সামগ্রী পাওয়া গিয়েছে। তম্মধ্যে বুদ্ধের ধাতুর সাথে শিলালেখও পাওয়া গিয়েছে।
সে শিলালেখনীতে উল্লিখিত হয়েছে-
‘দশবলশরীরনিলযশশুভশৈলময: স্বযং বরাহেণ।
কুট্টিমকতোকৃতোযে সমূদগকস্সেনপূত্রেণ।।’
‘অর্থাৎ দশবল শরীরের এ শুভ পাষাণের নিবাস স্থান স্বয়ং সেন পুত্র বরাহের কূট্টিমঠে রাখা হয়েছে।’
বুদ্ধের দশবল কি কি তা এবার দেখব। অর্থাৎ কেন বুদ্ধকে দশবল বলা হয়?
সম্যক সম্বুদ্ধের দশবল হল-
১) বুদ্ধ উচিতকে উচিত এবং অনুচিতকে অনুচিতরূপে সম্যক প্রকারে জেনে থাকেন।
২) বুদ্ধ ভূত, ভবিষ্যত এবং বর্তমানে করা কর্ম সমূহের বিপাকের স্থান এবং কারণের সাথে সম্যকরূপে জেনে থাকেন।
৩) বুদ্ধ সর্বত্র গামিনী প্রতিপদাকে সম্যকরূপে জেনে থাকেন।
৪) বুদ্ধ অনেক ব্রহ্মাণ্ড এবং নানা ধাতু সম্পন্ন লোক সমূহের সম্পর্কে সম্যকরূপে জেনে থাকেন।
৫) বুদ্ধ নানা বিচার সম্পন্ন প্রাণীদেরকে সম্যকরূপে জেনে থাকেন।
৬) বুদ্ধ অন্য প্রাণীদের ইন্দ্রিয় সমূহের প্রবলতা এবং দুর্বলতা সম্পর্কে সম্যকরূপে জেনে থাকেন।
৭) ধ্যান, বিমোক্ষ, সমাধির মলকে নির্মলকরণ এবং উত্থানকে সম্যকরূপে জেনে থাকেন।
৮) বুদ্ধ অতীত সম্পর্কে সম্যকরূপে জেনে থাকেন।
৯) বুদ্ধ অলৌকিক বিশুদ্ধ দিব্যচক্ষু দ্বারা প্রাণীদের উৎপন্ন হওয়া, মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা সম্যকরূপে জেনে থাকেন।
১০) বুদ্ধ হলেন সম্যক আশ্রব রহিত চিত্তের বিমুক্তি এবং প্রজ্ঞার বিমুক্তির সাক্ষাতকার।
উপরোক্ত শক্তি সমূহের জন্য বুদ্ধকে দশবলধারী বলা হয়। বুদ্ধ হচ্ছে ডিগ্রী। যেরকম, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, ব্যরিষ্টার, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি।
যে কোন ব্যক্তি বুদ্ধগুণ লাভ করার প্রয়াস করে গুণ অর্জন পূর্বক বুদ্ধ হতে পারে। বৌদ্ধ সাহিত্যে যেখানেই বুদ্ধ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে, তা মুখ্যত গৌতম বুদ্ধকেই বুঝানো হয়েছে। সেজন্য সাধারণভাবে বুদ্ধ বলতে গৌতম বুদ্ধকেই বুঝায়। বাস্তবে বুদ্ধ শব্দ হল একটি বিশেষণ।
0 Comments