সৌভাগ্যের প্রতীক লাফিং বুদ্ধ গৌতম বুদ্ধ নয়,
তাহলে লাফিং বুদ্ধ কে ছিলেন ?
আমরা অনেকেই চীনের বৌদ্ধ ভিক্ষু লাফিং বুদ্ধকে মহামানব গৌতম বুদ্ধ ভেবে ভুল করি। তাই আসুন মহামানব বুদ্ধ সম্পর্কে বিকৃত জ্ঞান পরিহার করতে লাফিং বুদ্ধ সম্পর্কে জেনে নিই।
চীনে মহামানব বুদ্ধের ধর্ম প্রচারিত হওয়ার পর দক্ষিণ ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু বোধিধর্মের নিকট হতে চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধ্যান (চীনা ভাষায় চান) শিক্ষা লাভ করেন। সেসময় চীন ভিয়েতনাম কোরিয়া হয়ে বৌদ্ধধর্ম প্রচারিত হয়েছিল জাপানেও।
আনুমানিক দশম শতাব্দীতে চীনে একজন চান সন্ন্যাসী বা বৌদ্ধ ভিক্ষু ছিলেন, নাম “কেইশি”। তিনি মূলত চীনের জেইজিয়াং প্রদেশের উত্তরে অবস্থিত “ ফেঙা” শহরের বাসিন্দা ছিলেন। চীনের লোকাচার মতে জানা যায়, কেইশি বেশ স্থূলকায় ও মুণ্ডিত মস্তকের ছিলেন। তার ছিল থলথলে ভুঁড়ি আর স্ফিত কান। লম্বা ঢিলেঢোলা পোশাক পড়তেন। গলায় জপমালা। কাঁধে সব সময় থাকত একটা কাপড়ের ব্যাগ আর হাতে একটা হাতপাখা রাখতেন। এই ধ্যান বা চান সন্ন্যাসীকেই চীনে বুদাই বা পুতাই, ভিয়েতনামে বোডাই, জাপানে হোতেই নামে ডাকা হয়। পশ্চিমা বিশ্বে তিনি “ লাফিং বুদ্ধ ” বা “মোটা বুদ্ধ নামে পরিচিত।
অনেকে এই লাফিং বুদ্ধকে গৌতম বুদ্ধ বলে মনে করেন। গৌতম বুদ্ধ ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর মানুষ; যেখানে লাফিং বুদ্ধ ছিলেন দশম শতাব্দীর মানুষ। গৌতম বুদ্ধ ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ ও বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক অন্যদিকে লাফিং বুদ্ধ ছিলেন চীনা বংশোদ্ভূত বুদ্ধ শিষ্য বা ধ্যানী সন্যাসী। আশা করি এখন আর কেউ লাফিং বুদ্ধকে মহামানব গৌতম বুদ্ধের ভিন্নরূপ ভেবে ভুল করবেন না।
এক অদ্ভুত স্বভাবের সন্ন্যাসী এই লাফিং বুদ্ধ চীনের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন। তার কাঁধের ঝোলা সব সময় খাবার, পানিয় বা কোন না কোন উপহারে ভর্তি থাকত। সেখান থেকে তিনি ছোট ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কিছু দিতেন। তাকে দেখলেই ছোট ছেলেমেয়েরা তার পেছনে পেছনে ঘুরত, তাকে ঘিরে থাকত। তার বিভিন্ন মূর্তিতে তার সাথে ছোট ছেলেমেয়েদেরও দেখা যায়।
তার আরেকটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট হল, তিনি বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে যে কোন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে একাই হাসা শুরু করতেন। তার হাসি এত ছোঁয়াচের মত ছিল যে, তার সাথে সাথে একে একে সবাই হাসতে শুরু করত কিছু না ভেবেই। সারা গ্রাম হাসত এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর সাথে। হাসি শেষে গ্রামের মানুষ দেখত, তাদের অনেক হালকা লাগছে। কষ্ট কমে গেছে। গ্রামের মানুষ আগ্রহ নিয়ে তাঁর আসার অপেক্ষায় থাকত। তিনি আবার তেমন কথা বলতেন না, কিন্তু তিনি বুদ্ধের বানী এক নাগাড়ে মুখস্থ বলতে পারতেন।
চীন-জাপানের লোকাচারে তার একটি অদ্ভুত স্বভাবের কথা কথিত আছে যে, তিনি নির্ভুলভাবে যে কারও সম্পর্কে ভাগ্য গণনা করতে পারতেন। তবে যারা নাকি সত্য জানতে চাইত না, তাদের তিনি কিছু বলতেন না। লোকাচার মতে, তাঁকে সৌভাগ্যের দেবতা মনে করা হয়। তাই বিভিন্ন মন্দির, রেস্টুরেন্ট ও বাড়িতে তাই তাঁর ছবি দেখা যায়। ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, তবে লোকাচার মতে মনে করা হয়, লাফিং বুদ্ধের এর পেটে হাত ঘষলে সুখ, অর্থ আর সমৃদ্ধি আসে।
বৌদ্ধ ভিক্ষু অত্যন্ত সবল মানুষ ছিলেন, এত হাসতে পারতেন, তবু ও ক্লান্ত হতেন না। শোনা যায়, তিনি ঘুমের মাঝে ও হাসতেন। হাসি তার প্রাকৃতিক স্বভাবের মতই ছিল। তিনি কোন কৌতুক বা অন্য এর ওপর হাসতেন না। তিনি নিজের ওপর হাসতেন। তার কোন নিজস্ব মতবাদ, আদর্শ, দর্শন ছিল না। তাকে ধর্ম, দর্শন, জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ও তিনি শুধুই হাসতেন। হাসিতেই তিনি সবার মন জয় করে নিতেন, দুঃখ ভুলিয়ে দিতেন। মূলত হাসিতে দুঃখ জয় করাই ছিল লাফিং বুদ্ধের দর্শন।
---সংগৃহিত,ত্রিরত্ন সংকলন।
নং-১৯২.
----------লাফিং বুদ্ধের সংক্ষিপ্ত জীবনি......
লাফিং বুদ্ধ চীন অঙ্গরাজ্য তিব্বতে ৯২৩সালে মধু পূর্ণিমা দিবসে রাজ পুত্র রূপে জন্মগ্রহন করেছেন। জ্যোতিষীরা রাজপুত্রকে শাংসু নাম রেখে দিয়েছেন। পূর্ণিমা দিবসে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে শাংসু নামটি রেখে দিয়েছেন, অর্থাৎ,"পূর্ণিমার চাঁদ"। রাজপুত্র শাংসু ছােট কাল থেকে হাঁসি খুশি থাকতাে এবং বিপদাপন্ন প্রাণীদেরকে স্নেহ করেন।রাজপুত্র শাংসু জন্ম নেয়ার পর থেকে রাজ্য ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়েছিল। সেই মহা সৌবাগ্যবান শাংসু যথােপযুক্ত বয়সে রাজ্য সিংহাসনে অসীন হয়ে তিব্বত সহ সারা চীন মহাদেশ শাসন করতঃ উন্নয়ন করেছিলেন।এবং প্রজাদের শান্তিতে রেখেছিলেন। অতঃপর,দীর্ঘ কয়েক বৎসর রাজ্য শাসনের পর বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ভিক্ষু চারি ব্রম্মবিহার ভাবনা করে অলৌকিক শক্তির অধিকারি হয়।
ফুটন্ত পদ্ম ফুলের মত প্রফুল্ল বদনে জাপান কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অহিংসা মৈত্রী বাণী প্রচার করেছিলেন।তিনি যেখানে যেতেন বা থাকতেন সেখানে উন্নতি হতাে।আর যারা তাকে সেবা পূজা করতাে তাদের বাড়িতে শান্তি আর উন্নতি হতাে।তাকে সেবা পূজা করে প্রার্থনা করলে মনের আশা পূর্ণ হয়।তবে হ্যাঁ,যারা নীতিহীন, চরিত্রহহীন,আদর্শহীন,এবং কুকর্মে রত থাকে তাদের মনের আশা পূর্ণ হয়না।আর যারা সৎ ভাবে চলেন এবং পরােপকারী দয়ালু তারাই লাফিং বুদ্ধকে সেবা পূজা করে উপকার পেয়ে থাকেন।
বিঃদ্রঃ সংগৃহিত বই" ফেং শুই লাফিং বুদ্ধ সমৃদ্ধি লাভ ও সৌভাগ্যের উপায়।
---- সংগৃহিত,ত্রিরত্ন সংকলন।
0 Comments