" চিত্ত বিশুদ্ধি "
-----------আশিন ধর্মপাল
সাতটি বিশুদ্ধি(শীল বিশুদ্ধি, চিত্ত বিশুদ্ধি, দিট্ঠি বিশুদ্ধি, কঙ্খাবিতরণ বিশুদ্ধি, পটিপদা ঞাণদস্সন বিশুদ্ধি, মগ্গাঞাণদস্সন বিশুদ্ধি, লোকুত্তরঞাণদস্সন বিশুদ্ধি), এই সাতটির মধ্যে চিত্ত বিশুদ্ধি ও মগ্গাঞাণদস্সন বিশুদ্ধি ব্যতিত বাকি পাঁচটি অনেকের সাথেই সম্পর্কিত৷ এখানে চিত্ত বিশুদ্ধির সম্পর্কেই বলা হল৷
চিত্তের বিশুদ্ধি ব্যতিত প্রকৃত জ্ঞাণ অর্জনে অক্ষম হন যোগী৷ কেননা চিত্তই সকল কিছুর অাধার৷ অঙ্গুত্তর নিকায় একনিপাতের রূপাদিবর্গানুসারে চিত্তের নিজস্ব আভা আছে৷ যা কেবল চিত্তের পরিশুদ্ধ ও চিত্তের নির্মলাবস্থাতেই দর্শনীয়৷ যার চিত্ত যত পরিশুদ্ধ তার দেহকায় ও চিত্তজকায় উভয়ই সৌম্যতায় পূর্ণ থাকে৷ তাই উর্ধ ধ্যানাঙ্গে উত্তীর্ণ ধ্যানী ঋষি মহর্ষিদের দেহকায় সর্বদাই সৌম্যতায় ও দিব্যতায় পূর্ণ থাকে৷
সাধারণ দৃষ্টিতেই দেখতে পারেন৷ একজন লোক যে সবসময়ই প্রাণীদের ভালবাসে, স্নেহ অাদর মমতা দেয় তার চেহারায় সবসময়ই একধরনের নির্মলতা বা অাদরণীয় ভাব থাকে৷ কারণ একটাই তার চিত্তে সর্বদা মৈত্রী চিত্ত প্রবাহমান থাকে তথা অদ্বেষ চিত্ত ও সেই অদ্বেষ চিত্তজনিত রূপ৷ যার বহিপ্রকাশ বাহ্যিক রূপের মাধ্যমে হয়৷ কিন্তু অজ্ঞানী বা আমাদের ন্যায় ইন্দ্রিয় দর্শণে অনিপুন ব্যক্তির দৃষ্টিতে এগুলি দৃষ্টিগোচর হবে না৷
এগুলি হল চিত্ত পরিশুদ্ধির কেবল নার্সারী লেভেলের উদাহারণ৷ এভাবেই যতই চিত্ত পরিশুদ্ধির উর্ধদিকে অগ্রগামী হবেন ততই দর্শণ জ্ঞাণের পরমার্থ জ্ঞাণের পথে ধাবিত হবেন৷ তাই চিত্ত পরিশুদ্ধি অতীব প্রয়োজন৷
কিন্তু তার পূর্বে, যারা চিত্ত বিশুদ্ধির স্তরে পৌঁছাতে চান তাদের পূরণ করতে হবে শীল বিশুদ্ধি৷
সংক্ষেপে শীল বিশুদ্ধি
..........
যারা শীল বিশুদ্ধি পূরণ করতে চান তাদের পূরণ করতে হয় আজীবমট্ঠক শীল৷ অর্থাৎ অাটটি শীল
১—অজ্জতগ্গে পাণুপেতং পাণাতিপাতা বিরমামি৷
—আজ হতে শুরু করে সকল প্রকার প্রাণী হত্য হতে বিরত থাকব(এমনকি একটি ছোট্ট পিঁপড়া হতে স্থুল কায় হস্থি পর্যন্ত)৷
২— আজ হতে মরণ অবধি চুরি চৌর্য্যবৃত্তি হতে বিরত থাকব৷
৩—আজ হতে মরণ অবধি মিথ্যা কাম ব্যভিচার থেতে বিরত থাকব৷
৪—আজ হতে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত মিথ্যা বাক্য বলা থেতে বিরত থাকব৷
৫—আজ হতে দেহত্যাগ করা পর্যন্ত কর্কশ বাক্য বলা থেকে বিরত থাকব৷
৬— আজ হতে দেহের চ্যুতিকাল পর্যন্ত অনর্থক সম্প্রলাপ থেকে বিরত থাকব৷
৭—আজ হতে অাজীবন পিসুন বাক্য বলা থেতে বিরত থাকব৷
৮—আজ হতে অন্তিম যাত্রা পর্যন্ত মিথ্যাজীবিকা(কুপথে রোজগার করা) থেকে বিরত থাকব৷
বিঃদ্রঃ—গৃহী হলে গৃহীর শীল, ভিক্ষু হলে চতূর্পারিশুদ্ধি শীল(পাতিমোক্ষ সংবরণ শীল, ইন্দ্রিয়সংবরণ শীলসহ চারটি) যার যারটা পালন করা আবশ্যক৷
শীলের পরিশুদ্ধিতায় মন ও দেহ উভয়ই প্রশান্তি অনুভব করে৷ যার শীল যত পরিশুদ্ধ তার মন ততই প্রশান্তি লাভ করে৷ আর শীল পরিশুদ্ধিতার পরীক্ষা হয় কেবল ধ্যানে৷ অপরিশুদ্ধ চিত্তে বা অপরিশুদ্ধ শীলে ধ্যানের গতি উর্ধমুখী হয় না৷ বরং সংসয় অার অনুতাপের গ্লানি নেমে অাসে৷ আর শীলের পরিশুদ্ধি ধ্যানের গতি পর্যায়ক্রমে একের পর এক ধাপে ধাপে উর্ধদিকে অগ্রগামী হয়৷
এভাবে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সুসংযমতার দ্ধারা শীল যখন পরিশুদ্ধিতা লাভ করবে সেই পরিশুদ্ধ শীলের উপর আরোহিত হয়ে চিত্তের বিশুদ্ধি আনায়ন করতে হবে৷
চিত্তের বিশুদ্ধিতার জন্যে কায়গতাস্মৃতিই সর্বোত্তম৷
এর জন্যে বত্রিশ প্রকার অশুচির উপর আরম্মণ সংযোগ করে একাগ্রে দর্শন করা উচিত৷ কিংবা চার ইর্যাপথে স্মৃতিপ্রস্থান করেও চিত্তের বিশুদ্ধিতা অানায়ন করা যায়৷
চিত্তের বিশুদ্ধিতা ব্যতিত জ্ঞাণ দর্শন বিশুদ্ধি, কঙ্খা বিতরণ বিশুদ্ধি জ্ঞাণের উন্মেষ ঘটে না৷
.........
বিস্তারিত বিশুদ্ধি মার্গে পড়ুন৷
0 Comments