———————ধর্মবাবা—————————
এক ব্যক্তিক্রমধর্মী বাবাও পুত্রের গভীর সম্পর্ক সম্বন্ধে পাঠক পাঠিকাদের সমীপে ব্যক্ত করছি। গত (১৯৯১ইংরেজী) শ্রদ্ধেয় বন ভন্তে খাগড়াছড়ি জেলায়। ছাব্বিশ দিনের জন্য এক ধর্ম অভিযাত্রায় পরিভ্রমণ করেন। বিভিন্ন স্থানে ধর্ম সভা করার জন্য সেই অঞ্চলের মাননীয় ব্রিগেড কমান্ডার মহাহোদয় একখানা গাড়ীর ব্যবস্থা করে দেন। বন ভন্তেকে সযত্নে গাড়ীতে উঠানামা করার জন্য একজন সৈনিককে দায়িত্বভার অর্পণ করেন। আনুমানিক ২২/২৩ বৎসরের অবিবাহিত যুবক, দেখতে নাদুস-নুদুস আদুরে চেহারা। সেবাকার্যে বেশ যত্নশীল, ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত আছেন।
কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন স্থানে ধর্মসভায় যোগদান করার পর উক্ত ক্যাপ্টেন একটু হেসে বন ভন্তের প্রতি কিছু বলবার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন।
বন ভন্তেঃ কিছু বলতে চান?
ক্যাপ্টেনঃ হ্যা।
বন ভন্তেঃ বলতে পারেন।
ক্যাপ্টেনঃ আপনার সংস্পর্শে এসে আমি খুবই আনন্দিত এবং নিজকে অতীব ধন্য বলে মনে করি।
বন ভন্তেঃ কেন?
ক্যাপ্টেনঃ আপনার কথাগুলি আমার খুবই ভাল লাগে। যদি কিছু মনে না করেন। একটা কথা বলতে পারি।
বন ভন্তেঃ (চিত্তের অবস্থা জেনে) বলতে পার।
ক্যাপ্টেনঃ আপনাকে বাবা ডাকতে ইচ্ছে হয়।
বন ভন্তেঃ কেন? তোমার বাবা নেই?
ক্যাপ্টেনঃ আছে।
বন ভন্তেঃ তবে কেন ডাকবে?
ক্যাপ্টেনঃ আমার মন যে চায় আপনাকে বাবা ডাকতে।
বন ভন্তেঃ আমি বৃদ্ধ হয়েছি, সেজন্য?
ক্যাপ্টেনঃ না, একান্ত ইচ্ছার কারণে।
বন ভন্তেঃ বাবা ডাকলে বাবা ও পুত্রের গুরুত্ব দিতে হয় জান?
ক্যাপ্টেনঃ অনুগ্রহ পূর্বক গুরুত্ব সম্বন্ধে একটু বলুন।
বন ভন্তেঃ তাহলে মন দিয়ে শুন, ধারণ কর এবং আচরণ করতে চেষ্টা কর। বাবা পুত্রের অমঙ্গল চায়না। সব সময় মঙ্গল কামনাই করে। তাই দায়িত্ব ও কর্তব্যের কারণে প্রকাশ করছি।
১। আমার মত বয়সের লোক দেখলে মনে করবে তোমার বাবার মত।
২। তোমার মত বয়সের লোক দেখলে মনে করবে আপন ভাই এর মত। শক্র বা অপর মনে করবেনা।
৩। যুবতী নারী আপন বোনের মত মনে করবে। চিত্তে কোন সময় কামভাব উৎপন্ন করবেনা।
৪। যে কোন বয়সের নারী পুরুষ দেখলে আপন ব্যতীত অপর মনে করবেনা।
৫। কারো প্রতি হিংসা, ঘৃণা ও অবজ্ঞা সূচক ভাব মনে স্থান দিও না। সকলের প্রতি মৈত্রী ভাব পোষণ করবে।
এ পাঁচটি উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চেষ্টা কর। তুমি বাংলাদেশের যেখানে যাওনা কেন সেখানে পাচটি উপদেশ মেনে চলিও। তোমার মনের শান্তি ও অনাবিল সুখ বহে আসবে। মানুষের মনের শান্তি ও সুখ খুব বড় সম্পদ “ধর্ম বাবা” যখন ডেকেছ, উপদেশ পালনে যথাযথ মূল্য দিও।
পরিশেষে উভয়ের মধ্যে বিদায় নেয়ার পালা। পুত্র সজল নয়নে ও করুণ স্বরে বললেন-বাবা আমাকে আশীর্বাদ করবেন। বাবাও অনাসক্ত ভাবে বললেন-তুমি শান্তিতে থাকো ও সুখে থেকো আশীর্বাদ করি কিন্তু আমার উপদেশগুলি পালন করবে
0 Comments