------সপ্ত মহাপূণ্য স্হান পরিচিতি----
প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর কাছে বুদ্ধগয়া মহাপবিত্র তীর্থস্হান। রাজকুমার সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্ব লাভের স্হান বুদ্ধগয়া। সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধগয়ার মহাবোধি (অশ্বত্থ বৃক্ষ) মূলে গভীর একাগ্রতায় সাধনামগ্ন হন। সে দিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমার রাত। সিদ্ধার্থ গৌতম ধ্যানের গভীর থেকে গভীরতম স্তরে প্রবেশ করে অবিদ্যা-তৃষ্ণাদি মারকে সমূলে বিনাশ করে দুঃখ মুক্তির পথ সর্বজ্ঞতাজ্ঞান লাভ বা বুদ্ধত্ব লাভ করেন। ভগবান বুদ্ধের বুদ্ধত্ব লাভ ও পরবর্তী সাত সপ্তাহের কর্মকান্ডের স্হান এই মহাবোধি মহাবিহার চত্বর।
তাই বৌদ্ধদের কাছে
১. মহাবোধি বৃক্ষ ও বজ্রাসন,
২. অনিমেষ চৈত্য,
৩. চংক্রমণ স্হান,
৪. রতনঘর চৈত্য,
৫. অজপাল বৃক্ষ স্হান,
৬. মুচলিন্দ হ্রদ স্হান,
৭. রাজায়তন বৃক্ষ স্হান, সপ্ত মহাপূণ্য স্হান হিসাবে পরিচিত।
মহাবোধি মহাবিহার
খৃস্ট পূর্ব ৩য় শতকে সম্রাট অশোক কর্তৃক মহাবোধি বিহারটি নির্মিত হয়। ১৭০ ফুট উচ্চতা ও ৪০ বর্গফুট প্রশস্ত বহু বিশিষ্ট বর্গাকৃতি তলের উপর বিহারটি নির্মাণ করা হয়। বিহারের চার কোনায় মূল প অনুরূপ চারটি ছোট বিহার আছে। দ্বিতীয় তালায় বুদ্ধের মাতা রানী মায়াবতী দেবীর একটি মূর্তি আছে। মূল মন্দিরের ভিতরে দেড় ফুট উঁচু আসনে সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার ভূমি স্পর্শ মূদ্রার দর্শনীয় বুদ্ধমূর্তি প্রতিষ্ঠিত।
মহাবোধি বৃক্ষ ও বজ্রাসন:
মহাবোধি বিহারের পশ্চিমে অর্থাৎ পিছনের দিকে বিশাল মহাবোধি বৃক্ষের অবস্হান। বোধিবৃক্ষের বিহার বোধিপালঙ্ক বা বজ্রাসন অবস্হিত। এই আসনে বসে সিদ্ধার্থ গৌতম ধ্যানস্ত হয়ে সম্বোধি অর্থাৎ বুদ্ধত্ব লাভ করেন। বুদ্ধত্ব লাভের পর তিনি এই আসনে ধ্যানস্হ অবস্হায় প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত করেন।
অনিমেষ চৈত্য
মহাবোধি বিহারের উত্তর- পূর্ব কোনায় অনুচ্চ টিলার উপরে অনিমেষ চৈত্য অবস্হিত।এখানে দাড়িয়ে গভীর শ্রদ্ধায় ও কৃতজ্ঞতায় পলকহীন চোখে এক সপ্তাহ (২য় সপ্তাহ) বোধিবৃক্ষের দিকে তাকিয়ে বোধিবৃক্ষকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
চংক্রমণ স্হান :
বুদ্ধত্ব লাভের পর মহাবোধি বিহার ও অনিমেষ স্হানের মধ্যবর্তী স্হানে বুদ্ধ তৃতীয় সপ্তাহ চংক্রমণ করে কাটান। এ স্হানটি মহাবোধি বিহারের গা ঘেঁষে উওর পাশে অবস্হিত।
রতন ঘর চৈত্য :
বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের চতুর্থ সপ্তাহ ধ্যানস্হ অবস্হায় অতিবাহিত করেন। এ সময় বুদ্ধের শরীর থেকে নীল, পীত, হলুদ, শ্বেত, লাল ও এই পাঁচ প্রকার রং মিশ্রিত রশ্মি সহ ষড়-রশ্মির আলোকছটা বিচ্ছুরিত হতে থাকে। বর্তমানে এ স্হানটি রতন ঘর চৈত্য নামে অভিহিত হয়। এটি মহাবোধি প্যাগোডার উত্তর-পশ্চিম কোনে অবস্হিত।
অজপাল বৃক্ষ স্হান :
বুদ্ধত্ব লাভের পঞ্চম সপ্তাহ অজপাল বৃক্ষ মূলে বুদ্ধ ধ্যানস্হ অবস্হায় ধ্যান সুখ উপভোগ করে কাটান। এ স্হানটি মহাবোধি প্যাগোডার পূর্ব পার্শ্বে অর্থাৎ মন্দিরের প্রবেশ পথে সিড়ির নীচে অবস্হিত।
মুচলিন্দ হ্রদ স্হান :
বুদ্ধ ষষ্ঠ সপ্তাহ মুচলিন্দ হ্রদের তীরে ধ্যানমগ্ন থাকেন। ধ্যান করার সময় ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে নাগরাজ মুচলিন্দ, বুদ্ধকে তার দেহ দিয়ে বেষ্টন করে মাথার উপর ফনা বিস্তার করে ঝড় বৃষ্টি থেকে রক্ষা করেছিল। বর্তমানে এটি ছোট হয়ে পুকুরে পরিণত হয়েছে। মহাবোধি বিহারের দক্ষিনে অবস্হিত পুকুরটি নাগরাজের নাম অনুসারে মুচলিন্দ হ্রদ নামে পরিচিত।
রাজায়তন বৃক্ষ স্হান :
রাজায়তন নামক বন্য বৃক্ষের ছায়াতলে বুদ্ধ পরমার্থ সাধনায় সপ্তম সপ্তাহ অতিবাহিত করেন। এটি মহাবোধি বিহারের দক্ষিন-পূর্বে অবস্হিত। এ স্হানে এপুস ( তপস্ সু) ও ভল্লিক নামের দুই ব্যবসায়ী ভ্রাতার সাথে বুদ্ধের সাক্ষাত হয়। তারা বুদ্ধকে মধু ও পিঠা দান করেন। বুদ্ধত্ব লাভের ৪৯ দিন পর বুদ্ধ প্রথম বার আহার গ্রহণ করেন। বুদ্ধ তাদেরকে তাঁর নবলব্ধ ধর্মের বানী দেশনা করেন। তারা বুদ্ধের প্রথম উপাসক। তখনও যেহেতু সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়নি, তাই তারা বুদ্ধ ও ধর্মের শরণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বৌদ্ধ ধর্মে দ্বি- শরণাগত উপাসক নামে খ্যাত।
জগতের সকল প্রানী সূখী হওক।
সূত্র --সংগৃহিত।
0 Comments