Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

কশ্যপ বুদ্ধের কথা লিখেছেনঃ-ভদন্ত জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু

কশ্যপ বুদ্ধের কথা
লিখেছেনঃ-ভদন্ত জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু


----------------
আজ লিখব কশ্যপ বুদ্ধকে নিয়ে। কশ্যপ বুদ্ধ ছিলেন গৌতম বুদ্ধের আগের বুদ্ধ। তার ব্যাপারে দীর্ঘনিকায়ের মহাপদান সূত্রে বুদ্ধ বলেছেন, হে ভিক্ষুগণ, এই ভদ্রকল্পে কশ্যপ অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন। এই ভদ্রকল্পেই বর্তমানে আমি অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছি।
হে ভিক্ষুগণ, কশ্যপ সম্যকসম্বুদ্ধের আয়ু ছিল বিশ হাজার বছর। বর্তমানে আমার আয়ু অল্প, সামান্য। যে বেশি বাঁচে সে একশ বছরের কম বা বেশি বাঁচে।
মধ্যম নিকায়ের ঘটিকার সূত্রে (ম.নি.২.২৮২)কশ্যপ বুদ্ধের ব্যাপারে আরেকটু বিস্তারিত বলেছেন আমাদের গৌতম বুদ্ধ। কশ্যপ বুদ্ধকে নাকি একবার কিকী রাজা নিমন্ত্রণ করেছিলেন তার নগরীতে বর্ষাবাসের জন্য। নগরীতে বর্ষাবাস করলে ভিক্ষুসংঘের সেবাযত্নে কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু কশ্যপ বুদ্ধ বললেন তিনি ইতিমধ্যেই অন্য এক জায়গায় বর্ষাবাস করবেন বলে কথা দিয়েছেন। তিনবার অনুরোধের পরেও রাজি না হওয়ায় কিকী রাজা খুব মনক্ষুণ্ণ হলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন - ভান্তে, আমার থেকেও উত্তম অন্য কোনো সেবক আছে নাকি?
কশ্যপ বুদ্ধ বললেন, হে মহারাজ, ঘটিকার নামে এক কুমোর আছে। সে আমার প্রধান সেবক। হে মহারাজ, আমি বর্ষাবাসের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করি নি বলে আপনার খুব মনোকষ্ট হয়েছে। কিন্তু সেটা ঘটিকার কুমোরের হবে না। হে মহারাজ, সে বুদ্ধের আশ্রয় গ্রহণ করেছে, ধর্মের আশ্রয় গ্রহণ করেছে, সংঘের আশ্রয় গ্রহণ করেছে। সে প্রাণিহত্যা থেকে বিরত, চুরি থেকে বিরত, মিথ্যা কামাচার থেকে বিরত, মিথ্যাবলা থেকে বিরত, মদ ও মাদক জাতীয় জিনিস থেকে বিরত।
হে মহারাজ, বুদ্ধের প্রতি তার অটল শ্রদ্ধা। ধর্মের প্রতি তার অটল শ্রদ্ধা। সংঘের প্রতি তার অটল শ্রদ্ধা।
হে মহারাজ সেই কুমোর ঘটিকার একবেলা আহারকারী। [এখানে একবেলা আহারকারী কথাটার ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি। একবেলা আহারকারী বলতে অনেকেই হয়তো বুঝে থাকেন একবার মাত্র আহারকারী। ব্যাপারটা সেরকম নয়। একবেলা আহারকারী কথাটির পালি হচ্ছে একভত্তিক। তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দীর্ঘ নিকায়ের ব্রহ্মজাল সূত্রের অর্থকথাা বলছে, দুইবেলা আহার আছে - প্রাতরাশের ভাত এবং সান্ধ্যভোজের ভাত। প্রাতরাশের ভাত হচ্ছে দুপুরবেলা পর্যন্ত। অন্যটি হচ্ছে দুপুর থেকে পরদিনের সূর্যোদয় পর্যন্ত। তাই দুপুরের আগ পর্যন্ত দশবার খেলেও ঐ একবেলা আহারকারীই হয়।]
হে মহারাজ, সেই কুমোর ঘটিকার সোনাদানা ব্যবহার করে না, টাকাপয়সা ব্যবহার করে না।
হে মহারাজ, সেই কুমোর ঘটিকার নিজ হাতে মাটি খনন করে না। সে নদীর পাড়ের ভেঙে পড়া মাটি অথবা ইঁদুরের খনন করা মাটি সংগ্রহ করে পাত্র বানিয়ে বাজারে নিয়ে যায়। এরপর বলে, "এখানে যার ইচ্ছা চাল, মুগডাল অথবা ছোলার বস্তা দিয়ে যা ইচ্ছা নিয়ে যাবেন।"
হে মহারাজ, সেই কুমোর ঘটিকার অন্ধ বুড়ো মাতাপিতাকে ভরণপোষণ করে।
হে মহারাজ, সেই কুমোর ঘটিকার অনাগামী। সে আর সেই জগত থেকে ফিরবে না।
কুমোর ঘটিকার কশ্যপ বুদ্ধের একজন বিশ্বস্ত সেবক ছিলেন
----------
এরপর কশ্যপ বুদ্ধ রাজাকে বললেন, হে মহারাজ, একদিন আমি কুমোরের ঘরে গেলাম। সেখানে গিয়ে তার মাতাপিতাকে বললাম - ওহে, এ কোথায় গেছে?
ভান্তে, আপনার সেবক তো বাইরে গেছে। হাঁড়ি থেকে ভাত নিয়ে তরকারি নিয়ে খান, ভান্তে।
আমি সেই হাঁড়ি থেকে ভাত নিয়ে তরকারি নিয়ে খেলাম। কুমোর ঘটিকার ফিরে এলে তার মাতাপিতা তাকে ব্যাপারটা জানাল। তখন তার মনে হলো - আহা বড় লাভ হয়েছে আমার। যে আমাকে কশ্যপ ভগবান বুদ্ধ এমন বিশ্বাস করেন। হে মহারাজ, কুমোর ঘটিকার আধমাস পর্যন্ত সেটা স্মরণ করে করে প্রীতিসুখে ডুবে ছিল। তার মাতাপিতাও সেই সুখে দিন কাটিয়েছিল এক সপ্তাহ।
[এখানে অর্থকথা বলছে, ঘটিকার নাকি ভাত তরকারি রান্না করে মাতাপিতাকে খাইয়ে স্বয়ং খেয়ে নিয়ে বুদ্ধের জন্য ভাত ও তরকারি ব্যবস্থা করে, আসন সাজিয়ে, পাত্র রেখে দিয়ে, পানি রেখে দিয়ে, মাতাপিতাকে বলে দিয়ে অরণ্যে চলে যেত।]
ঘরের চাল খুলে আনলেও খুশি হয়েছিল কুমোর ঘটিকার
----------
কশ্যপ বুদ্ধ আবার কিকী রাজাকে শোনালেন আরেক কাহিনী - হে মহারাজ, একবার আমার বাসস্থানে বৃষ্টি পড়তে লাগল। তখন আমি ভিক্ষুদেরকে বললাম, যাও হে ভিক্ষুগণ, কুমোর ঘটিকারের বাসস্থানে ঘাস খুঁজে দেখ। সেরকম বললে ভিক্ষুরা বলল, ভান্তে, কুমোর ঘটিকারের বাসস্থানে তো ঘাস নেই। তবে তার ঘাসের চাল আছে অবশ্য।
যাও, হে ভিক্ষুগণ, কুমোর ঘটিকারের বাসস্থানের ঘাস খুলে নাও।
তখন হে মহারাজ, ভিক্ষুরা কুমোর ঘটিকারের বাসস্থানের ঘাসগুলো খুলে আনল। কুমোরের পিতামাতা জিজ্ঞেস করল, কে বাসস্থানের ঘাস খুলে নিচ্ছে?
"ভিক্ষুরা বোন। কশ্যপ ভগবানের কুটিরে বৃষ্টি পড়ছে তো"।
"নিয়ে যান ভান্তে। নিয়ে যান।"
পরে কুমোর ঘটিকার তা শুনে আবারো মনে মনে ভাবছিল - আহা বড় লাভ হয়েছে আমার। যে আমাকে কশ্যপ ভগবান বুদ্ধ এমন বিশ্বাস করেন।
সেই থেকে সেই জায়গাটায় নাকি এখনো বৃষ্টি হয় না।
এই বিষয়টা এমন অসাধারণ লাগে আমার কাছে, বলার মতো নয়। আমার ঘরের চাল যদি একজনে নিয়ে যায়, তাহলে তো আমি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠব। অথচ কুমোরের মাতাপিতা বলেছিল, নিয়ে যান, ভান্তে। নিয়ে যান। বুদ্ধের প্রতি তাদের কী অসাধারণ ভক্তি। কী অসাধারণ শ্রদ্ধা।
তাই শ্রদ্ধাবান হোন। আপনাদের শ্রদ্ধা আরো বাড়ুক। মিথ্যাদৃষ্টির অবসান হোক। সম্যকদৃষ্টি উৎপন্ন হোক।

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement