বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য

বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য 

ভদন্ত বুদ্ধানন্দ মহাথেরো 

---------------------

বাংলাদেশ, বাঙালি, বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃকির সঙ্গে বাংলাদেশের বৌদ্ধদের সুদৃঢ় মেলবন্ধ সুপ্রাচীনকাল থেকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। তার প্রমাণ ৮ম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত পাল রাজাদের শাসনামল এবং পাহাড়পুর সোমপুর বৌদ্ধ বিহার, জগদ্দল বৌদ্ধ বিহার, মহাস্থানগড়, ভাসুবিহার, ময়নামতি শালবন বিহার ও চট্টগ্রামে গ্রামের পণ্ডিত বৌদ্ধ বিহার, নরসিংদী উয়ারী বটেশ্বর, মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বর ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থান সমূহ।   পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এ ইতিহাস সম্পর্কে অনেক বাঙালি অবগত নন। যদিও পাল শাসনামলে হিন্দু বৌদ্ধসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করেছিলেন, ছিল পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন। কোনরকমের সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয়নি, সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়নি। তাই পাল শাসনামলকে বলা হয় স্বর্ণযুগ। তবে পাল সাম্রাজ্যের অবসানের পর, সেন রাজাদের আবির্ভাব ঘটে তারপর থেকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত প্রকট আঁকার ধারণ করে। নিরিহ বৌদ্ধদের ওপর চলে নির্যাতন নিপিড়ন। লক্ষ লক্ষ বৌদ্ধধর্মাবলম্বীকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে হিন্দু বানানো হয়। এর পর আসে ইসলাম ধর্ম। ইসলাম ধর্ম আসার পর অবশিষ্ট বৌদ্ধরা অকাতরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এভাবে বাংলার বৌদ্ধধর্মের পতন ঘটে।

 অনেকে মনে করেন বৌদ্ধরা এ বাংলায় অতি সম্প্রতি বসতি স্থাপন করেছে। অন্যকোন রাজ্য থেকে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তাদের বাংলায় কোন অবদান নেই। এ ধারণা একেবারেই অমূলক এবং অসত্য। বলা বাহুল্য এখন থেকে চারশত বছর পূর্বে এ বাংলার মানুষেরা ছিল হয় বৌদ্ধ না হয় হিন্দু। তাছাড়া অন্যকোন সম্প্রদায় এ অঞ্চলে ছিলনা। আজ হতে চারশত বছর পূর্বে তুর্কী থেকে এসে ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ার খিলজি বাংলা দখলের পর এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারিত হয়। তার আগে বঙ্গদেশে কোন মুসলিম ছিলানা।