বুদ্ধের নিকট শুভ মানবের চৌদ্দটি প্রশ্ন ও বুদ্ধের উত্তর: ------
১. অল্পায়ু (অল্প বয়সে মৃত্যু),
২. দীর্ঘায়ু (বেশি বয়সে মৃত্যু),
৩. বহু ব্যাধিগ্রস্ত (বেশি রোগে আক্রাত),
৪. নীরোগী (রোগে আক্রাত নয়),
৫. বিশ্রী (দেখতে সুন্দর না),
৬. সুশ্রী (দেখতে সুন্দর),
৭. পরাক্রমহীন অবহেলার পাত্র (সম্মান বা শ্রদ্ধা পাই না),
৮. মহাপরাক্রমশালী গৌরবের পাত্র (সম্মান বা শ্রদ্ধা পেয়ে থাকে),
৯. অল্প ভোগ - সম্পত্তি শালী (গরিব),
১০. মহাভোগ সম্পত্তিশালী (ধনী),
১১. হীনবংশীয়,
১২. উচ্চবংশীয়,
১৩. দুষ্প্রাজ্ঞ (জ্ঞান বিবেক নেই এমন ব্যাক্তি), ও
১৪. প্রজ্ঞাবান দেখা যায় (জ্ঞানী ব্যাক্তি)।
মানবগণের মধ্যে এইরুপ হীনশ্রেষ্ঠ তারতম্য দেখা যায় কেন?
বুদ্ধের সংক্ষিপ্ত উত্তর:-
হে শুভ, জীবগণ স্ব-কৃত কর্মই ভোগ করে, স্বীয় কুশল-অকুশল (ভালো-খারাপ) কর্মরই উত্তরাধিকারী হয়, কর্মানুযায়ী জম্ম গ্রহণ করে। কর্মই নিজের বন্ধু স্বরুপ এবং কর্মই নিজের আশ্রয় স্বরুপ, কর্মই সত্ত্বদিগকে হীন-শ্রেষ্ঠ বিভাগ করে।
শুভ ভগবানের এই সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর বুঝিতে না পারিয়ে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করিবার জন্য পুনরায় ভগবানকে প্রার্থনা করিলেন। ভগবান পুনরায় তাহা বিস্তৃতভাবে বলিতে আরম্ভ করিলেন।
১. প্রাণী হত্যাকারী নর-নারীগণ মৃত্যুর পর তির্যক, প্রেত, অসুর ও নিরয়াদিতে উৎপন্ন হয়। তাঁহারা মনুষ্যত্ব লাভ করিলেও অল্পায়ু সম্পন্ন হয়।
২. প্রাণীদের প্রতি মৈত্রী পরায়ণ ব্যাক্তিগণ মৃত্যুর পর স্বর্গ কিংবা মনুষ্যলোকে উৎপন্ন হইয়া দীর্ঘায়ু সম্পন্ন হয়।
৩. হস্ত, দন্ড, ঢিল ও অস্ত্রের দ্বারা প্রাণীকে নিস্পীড়নকারী ব্যাক্তিগণ চারি অপায়ে উৎপন্ন হয়। তাঁহারা মনুষ্যলোকে উৎপন্ন হইলেও দুরারোগ্য পীড়াগ্রস্ত হয়।
৪. প্রাণীদের প্রতি মৈত্রী পরায়ণ ব্যাক্তিগণ নিরোগী হয়।
৫. ক্রোধান্দ বা রাগী নর-নারীগণ জন্মে জন্মে বিশ্রী ও কদাচার হয়।
৬. দয়ালু নর-নারীগণ জন্মে জন্মে সুশ্রী ও লাবণ্যময় হয়।
৭. অপরের লাভ, সৎ কাজ, সম্মান বন্দনা ও পূজা দর্শনে ঈর্ষাপরায়ণ ব্যাক্তিগণ জন্মে জন্মে পরাক্রমহীন অবহেলার পাত্র হয়। তাদেরকে কেউ শ্রদ্ধা বা সম্মান করে না।
৮. পরের লাভ, সৎ কাজ, দর্শন আনন্দ লাভী ঈর্ষাহীন ব্যাক্তিগণ জন্মে জন্মে মহাপরাক্রমশালী গৌরবের পাত্র হয়। সবার কাজ থেকে সম্মান পেয়ে থাকে।
৯. কৃপণগণ জন্মে জন্মে ভোগসম্পত্তি লাভে বঞ্চিত হয়।
১০. দানকারী দাতাগণ জন্মে জন্মে মহাধনবান হয়।
১১. অহঙ্কারী ব্যাক্তিগণ হীনকুলে জম্মগ্রহণ করে।
১২. নিরহংকারী নর-নারীগণ জন্মে জন্মে উচ্চকুলে জম্মগ্রহণ করে।
১৩. যাঁহারা কুশলাকুশল (ভালো) সম্বন্ধে জানিবার জন্য জিজ্ঞাসা করেনা, করিতেও চাহে না, তাঁহারা জন্মে জন্মে নির্বোধ হয়। অজ্ঞানী হয়ে থাকে।
১৪. কুশলাকুশল (ভালো) সম্বন্ধে প্রশ্নকারিগণ জন্মে জন্মে মহাজ্ঞানী হইয়া থাকে।
ভগবানের এই সারগর্ভ উপদেশ জ্ঞানীমাত্রেরই চিন্তা করা এবং তদনুরূপ আচরণ করা একান্তই প্রয়োজন।
সাধু সাধু সাধু।
জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক
0 Comments