প্রাত্যহিক জীবনে ভাবনা অনুশীলনের সুফল
ভান্তে গুণরত্ন
( ভাবনা সোসাইটি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, আমেরিকা )
প্রশ্ন: ভাবনা কোর্সে সবাই যেহেতু ভাবনা
করতে আসে, সেহেতু ভাবনা
অনুশীলন সহজতর হয়। ঘরে ফিরলে
ব্যস্ত আধুনিক জীবনে খুব কঠিন হয়ে
পড়ে স্মৃতি অনুশীলন করা। কিভাবে দৈনন্দিন
জীবনে ভাবনা অনুশীলনের সুফল বয়ে আনতে
পারি?
ভান্তে গুণরত্ন: ধীর গতি হলো
স্মৃতি সাধনার একটি পথ। যেখানেই
থাকি না কেন আমরা
এটা করতে পারি: বিহারে,
বাড়িতে এবং কর্মক্ষেত্রে। আমরা
সবসময় পৃথিবীতে শান্তি আনায়নের কথা বলি, কিন্তু
বুদ্ধের ধর্মে বলে, মানুষকে অবশ্যই
মানসিক শান্তি আনায়নে সচেতন হতে হবে-তাদের
মনকে সুসমৃদ্ধ ও শান্ত করতে
হবে। এবং সুসমৃদ্ধ মন
আসে স্মৃতিসাধনার মাধ্যমে।
যখন
আপনি কাজে অথবা যখন
আপনি দীর্ঘক্ষণ শান্ত পরিবেশে বসতে পারছেন না,
তারপরও আপনি স্মৃতিসাধনার কিছু
মুহূর্ত উপভোগ করতে পারেন। আমি
বলি যে প্রত্যেকে এক
মিনিট সময় নিন প্রতি
ঘণ্টার কাজে এটি করতে।
৫৯ মিনিট কঠোর পরিশ্রম করুন,
তারপর এক মিনিট ছুটি
নিন। এবং সম্পূর্ণরূপে শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ দিন।
যদি পারেন চোখ বন্ধ করুন।
অথবা খুব ব্যস্ত অফিসের
টেবিলে, আপনার চোখ খোলা রাখুন
চোখের সামনে কোন কিছুর ওপর।
নীরবে, শান্তভাবে ১৫ বার শ্বাস
ফেলুন- যা মাত্র ১
মিনিট লাগবে। ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করবেন
না, সেই এক মিনিটে
কোন কিছুই চিন্তা করবেন না। আপনার মনকে
সবকিছু থেকে দূরে রাখুন
তখন। যখন ১ মিনিট
শেষ হবে, এর অর্থ
হলো আপনার মনে নির্মলতা যোগ
হয়েছে। আপনি যোগ করেছেন
কিছু শক্তি পরবর্তি ঘণ্টার ৫৯ মিনিটের জন্য।
তারপর, নিজে সংকল্প করুন
যখন আরেকটি ঘণ্টা পার হয়েছে আপনি
আরেকটি মিনিট স্মৃতিসাধনার জন্য ছুটি নিন।
আপনি
রান্নাঘরের টেবিলে কিংবা অফিসের টেবিলে এটি করতে পারেন।
কার পার্ক ও ইঞ্জিন বন্ধ
করার পরও আপনি করতে
পারেন। প্রাকৃতিক কর্ম সারবার বিরতিতে
আপনি এটা করতে পারেন।
যদি আপনি এ ধরনের
ভাবনা পুরোদিন করেন, আট ঘণ্টা কাজের
শেষে, দেখবেন ৮ মিনিট সময়
ব্যয় করেছেন ভাবনায়। তাতে আপনি কম
বিচলিত হবেন, কম উত্তেজিত হবেন,
এবং কম ক্লান্ত হবেন
দিনের শেষে। তৎসঙ্গে মানসিক ও শারীরিকভাবে আপনার
থাকবে আরো কার্যক্ষম এবং
সুন্দর দিন।
প্রত্যেক
ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে
তাদের মনকে চার্জ করতে।
আমাদের সবাইকে শিখতে হবে কিভাবে ধীরেসুস্থে
সবকিছু করতে হয়। পৃথিবীতে
অমনোযোগি মানুষের সংখ্যা সবসময় বেশি। আপনি সহজে নিজে
সেই পথের পথিক হবেন
যদি আপনি নিজেকে যেতে
দেন। সেই ফাঁদে পা
দেবেন না। যেখানেই আপনি
থাকেন সে হোক বাড়িতে,
ভাবনা কেন্দ্রে, গাড়িতে, অথবা দোকানের লাইনে
স্মৃতিসাধনা আমাদেরকে উদ্ধার করবে উদ্বেগ, মানসিক
কষ্ট থেকে। আমি স্মৃতিসাধনাকে জরুরি
ওষধের সরন্জাম বলি। আপনার শরীর
কেটে বা পুড়ে গেলে
আপনি নিজে তাড়াতাড়ি প্রাথমিক
চিকিৎসার জন্য দ্রুত সাজ
সরন্জাম পেতে পারেন সেসব
সবসময় রাখেন। ঠিক অনুরূপভাবে সেটি
সত্য মনের ক্ষেত্রেও। যখন
মন কষ্ট পেলে, উত্তেজিত
কিংবা অস্থির হলে, যখন আপনি
মানসিকভাবে দুঃখাক্রান্ত, তখন আপনার সত্যিকারভাবে
প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন, যা আপনাকে স্বাভাবিক
মানসিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে দেবে আর
মহৌষধ হলো স্মৃতিসাধনা (Mindfulness)।
কিন্তু
যদি আপনি বেদনাক্রান্ত মানসিক
অবস্থার যত্ন না নেন,
তারা আরো বেশি ভাবে
বাড়তে পারে-ঠিক ক্ষতের
মতো। সে অবস্থায় আমরা
হতাশায় নিমজ্জিত হবো এবং স্নায়ুবিক
অবস্থার ব্যাঘাত ঘটবে। এবং আমাদের মানসিক
দুঃখগুলো নিজেরা প্রকাশ পাবে নানা ধরনের
অসুস্থতায়, পাকস্থলী সমস্যা থেকে হৃদরোগ পর্যন্ত।
আপনার মনের মধ্যে অনেক
কিছু ঘটতে থাকবে। যখন
কোন কিছু আপনার স্বাস্থ্যের
ব্যাঘাত ঘটাবে অথবা সাংঘাতিক শারীরিক
অসুস্থতা নিয়ে আসবে, আপনি
পেছনে ফিরে তাকাবেন দেখতে,
আপনি সময় ব্যয় করেছেন
সবসময় আপনার জীবনকে সমস্যাবহুল ও বিশৃঙখলা করতে।
তাই, আপনার নিজেকে অবশ্যই নিয়ে আসতে স্মৃতিসাধনায়
যেখানেই আপনি থাকেন, সবসময়।
অতএব, আপনার নিয়মিত ভাবনা অনুশীলনের ভাবনা কোর্সের সঙ্গে, যোগ করুন প্রাত্যহিক
জীবনে ভাবনা অনুশীলন যেমন ১ মিনিট
ভাবনা অনুশীলন প্রতি ঘণ্টায়। এ পথে নিজেকে
প্রশিক্ষিত করুন-যখনই মানসিক
উপদ্রব উৎপন্ন হবে, বন্ধ করুন,
দিনের অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠ হবার আগেই।
ধম্মপদে
উল্লেখ হয়েছে:
'মা
পঞঞেথ পুঞঞস্স ন মং তং
আগমিস্সতি,
উদবিন্দু
নিপাতনে উদকুম্ভোপি পুরতি;
ধীরে
পুরতি পুঞ্ঞসস থোকথোকমপি।'
‘এই
পুণ্য আমায় ফল দিবে
না’ এই ভাবিয়া পুণ্যকার্যে
অবহেলা করিও না; বিন্দু
বিন্দু জল পড়িয়া কুম্ভ
পূর্ণ হয়, অল্প অল্প
পুণ্য সঞ্চয় করিয়া বিজ্ঞ ব্যক্তি পুণ্যের পূর্ণতা সাধন করেন।‘
(অনুবাদ:
ধর্মাধার
মহাস্থবির)
***************************************************************************
ভাষান্তর: রতন জ্যোতি ভিক্ষু
0 Comments