ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু
বিদর্শন ভাবনাকালে কাল্পনিক কোনো বিষয়ের চিন্তা-চেতনা বা ধ্যান করতে নেই। কেবল চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক এবং মন এ ষড়েন্দ্রিয় দ্বারে যে সমস্ত আলম্বণ বা বিষয় বর্তমানে উপস্থিত হচ্ছে সেগুলিকেই স্মৃতি সহকারে জানতে হয়। সেখানে অতীতের কোনো কিছুতে যেমন মনোনিবেশ করতে নেই, তেমনি ভবিষ্যতের কোন বিষয়েরও পরিকল্পনা করতে নেই। তাই বুদ্ধ বলেছেন-
যদতীতং পহীনং তং, অপ্পত্তঞ্চ অনাগতং।
পচ্চুপন্নঞ্চ যো ধম্মং তত্থ তত্থ বিপস্সতি,
অসহীরং অসঙ্কুপ্পং তং বিদ্ধা মনুব্রূহযে।’
অর্থাৎ অতীতকে স্মরণ করে ব্যাকুল-উদ্বিগ্ন হতে নেই এবং ভবিষ্যতের কপোল-কল্পনার প্রতিও আসক্ত হতে নেই। অতীতকাল তো গত হয়ে গিয়েছে, ভবিষ্যৎ তো এখনও আসেনি। বর্তমান অর্থাৎ এক্ষণে ইন্দ্রিয় দ্বার সমূহের যেখানে যেখানে যা কিছু উৎপন্ন হচ্ছে, সে সব ধম্মকে, সে ধম্মের স্থিতিকে বিপস্সী সাধক-সাধিকাগণ দর্শন করে থাকেন অর্থাৎ স্মৃতি দ্বারা দেখে থাকেন। কিন্তু রাগ বা আসক্তি উৎপন্ন করে যেমন সেগুলিতে লেগে থাকতে নেই, তেমনি দ্বেষ-দূষিত চিত্তেও সেগুলির প্রতি ক্রোধ উৎপন্ন করতে নেই। এভাবে বিষয়ের প্রতি অনাসক্ত হয়ে সাক্ষীভাব রেখে যোগীকে বিদর্শন ভাবনা অনুশীলন করতে হয়।
বুদ্ধ আরও বলেছেন-
কম্মুনা বত্ততি লোকো, কম্মুনা বত্ততি পজা,
কম্মনিবন্ধনা সত্তা, রথস্সাণীব যাযতো।
এবমেতং যথাভূতং কম্মং পস্সন্তি পণ্ডিতা,
পটিচ্চসমুপ্পাদদস্স, কম্মবিপাকোবিদা।’
অর্থাৎ সংসার কর্মের ভিত্তিতে চলমান রয়েছে। কর্মের ভিত্তিতে সত্তগণ চলতে থাকে। চলমান রথের চাকা যেমন ধূরে আবদ্ধ থাকে, সেরকম প্রাণীগণও নিজেদের কর্মের দ্বারা আবদ্ধ রয়েছে। প্রতীত্য সমুৎপাদ দর্শী এবং কর্মবিপাক তথা কুশল জ্ঞানী বিদর্শন সাধক-সাধিকা কর্ম-সংস্কারকে যথাভূতভাবে দর্শন করে থাকেন। অর্থাৎ যখন যেভাবে যেভাবে বিষয় সমূহ উৎপন্ন হয়ে থাকে, সেভাবে সেভাবে সেগুলিকে দর্শন করে থাকেন।
তথাগত বুদ্ধ বলেছেন-
‘জিঘচ্ছা পরমা রোগা, সঙ্খার পরমা দুক্খা।
এতং ঞত্বা যথাভূতং, নিব্বানং পরম সুখং।’
অর্থাৎ ক্ষুধা হল সবচেয়ে বড় রোগ। সে কারণে যা কিছু সংস্কার তৈরী হয়, তা হল সবচেয়ে বড় দুঃখ। তৃষ্ণা এবং এর দ্বারা উৎপন্ন সংস্কার সমূহকে নিজের মধ্যে বিদর্শন ভাবনার মাধ্যমে যথাভূতভাবে জেনে যে নির্বাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহাই হল সবচেয়ে বড় সুখ।
0 Comments