ব্রাহ্মণ প্রতারক এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্ম প্রতারণার ধর্ম
ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু
ব্রাহ্মণ্য ধর্ম যাকে বর্তমানে হিন্দু ধর্ম বলা হচ্ছে তার ভিত্তি হল প্রতারণা, ছল-কপট, ভণ্ডামি ও ঠকবাজ। ব্রাহ্মণেরা নিজেদেরকে সব দেবী-দেবতাদের থেকেও উপরে বলে দাবী করে থাকেন। এমনকি ঈশ্বরের অবতার থেকেও ব্রাহ্মণেরা নিজেদেরকে পবিত্র বলে দাবী করে থাকেন। তার প্রমাণ হল কথিত ভগবান রাম, কৃষ্ণ ইত্যাদি ঈশ্বরের অবতারেরা মাতা-পিতার ঔরস এবং গর্ভের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু ব্রাহ্মণেরা হলেন অযোনী সম্ভবা। তাঁরা সরাসরি ভগবান ব্রহ্মার মুখ হতে জন্ম নিয়েছেন বলে দাবী করেন। সুতরাং তাঁরা সেজন্য অবতার বা দেব-দেবীর চেয়েও শ্রেষ্ঠ, পবিত্র এবং মহান।
ব্রাহ্মণেরা অন্যদের সবাইকে তাঁদের নীচে বলে গণ্য করে থাকেন। তাঁরা অন্যান্যদের দ্বারা নানা ভগবান ও নানা দেব-দেবীর মূর্তি ও মন্দির করিয়ে সেগুলিকে পূজা অর্চনা করানোর মাধ্যমে অর্থোপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। নিজেরা কিন্তু সে সমস্ত দেব-দেবীকে বিশ্বাস করেননা। তাঁরা সেগুলিকে তাঁদের পায়ের সমতুল্য মনে করেন। অথচ অন্যদেরকে সেগুলি মাথায় রেখে পূজা করতে উপদেশ দেন। ভণ্ডামি আর কাকে বলে! তাঁরা যে সমস্ত শাস্ত্রীয় গ্রন্থ রচনা করেছেন, সেগুলিও ভণ্ডামিতে ভরা। সেরকম ভণ্ডামি ও ধূর্ততার কিছু উদাহরণ তাঁদের রচিত গ্রন্থ হতে প্রমাণ দিচ্ছি।
হিন্দু ধর্মের শিব হল একজন প্রভাবশালী দেবতা। যাকে শঙ্কর ভগবান বলা হয়। তিনি হলেন দেবাতিদেব সংহার কর্তা। শিবের নামে অনেক ব্রত পালন করা হয়, সর্বত্র শিব লিঙ্গ পূজা করা হয় এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য শিব মন্দির। শিবের উপাসনাকারীদেরকে শৈব বলা হয়। যে শিবকে ভগবান বলে গণ্য করে হর হর মহাদেব বলে শক্তির প্রতীকরূপে ব্রাহ্মণেরা তাঁর লিঙ্গ পূজা করিয়ে থাকেন, সে ভগবান শিব লিঙ্গ সম্পর্কে ব্রাহ্মণ্য গ্রন্থ শিব পুরাণের বিন্দেশ্বর সংহিতায় লিখা হয়েছে-‘শিবলিঙ্গস্তু শুদ্রাণাম‘……. অর্থাৎ পাথরের শিবলিঙ্গ শুদ্ররাই পূজা করে থাকে। এখানে তা ব্রাহ্মণদের পূজ্য নয়।
মুর্খ লোকেরা মূর্তিকে ঈশ্বর মনে করে থাকে। ব্রাহ্মণেরা মূর্তিকে কখনও ঈশ্বর মনে করেননা। এসম্পর্কে ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্র ‘মহানির্বাণ তন্ত্র’ গ্রন্থে লিখিত হয়েছে-
‘মৃচ্ছিলা ধাতুর্দার্বাদি মূর্তাবীশ্বর বুদ্ধ:,
ক্লিশ্যন্তিতপসামূঢ়া: পরাংশান্তি ন যান্তি তে।’
অর্থাৎ মুর্খ লোকেরা মাটি, পাথর, ধাতু অথবা কাঠ দ্বারা নির্মিত মূর্তি সমূহকে ঈশ্বর বলে গণ্য করে থাকে। সেগুলি পূজার দ্বারা তাদের কখনও শান্তি আসতে পারেনা।
জলময় স্থানও তীর্থ হয়না এবং মাটির নির্মিত মূর্তিও দেবতা হয়না। অথচ ব্রাহ্মণেরা নদীকে পবিত্র তীর্থ বানিয়ে পূজা করিয়ে থাকে এবং মাটির দেবী-দেবতা বানিয়েও পূজা করিয়ে থাকে। তাঁদের রচিত ভাগবত পুরাণের ১০ স্কন্ধে ৮৪ অধ্যায়ে ১১ শ্লোকে বলা হয়েছে-
‘ন হ্যাম্যানি তীর্থানি ন দেবা মৃচ্ছিলামযা:,
অর্থাৎ জলময় স্থানকে তীর্থ বলা যায়না, মাটি এবং পাথরের মূর্তিও দেবতা হয়না।
এজন্য ব্রাহ্মণেরা শিব লিঙ্গের উপর পা রেখে শুদ্রদের দ্বারা পূজা করিয়ে থাকেন (নীচের ছবি দেখুন)। ব্রাহ্মণদের দৃষ্টিতে অব্রাহ্মণ তথা শুদ্রেরা হল মহামুর্খ। যেরূপ মুসলিমেরা অমুসলিমদেরকে কাফের বলে গণ্য করে থাকেন, অনুরূপভাবে ব্রাহ্মণেরাও অন্যদেরকে মুর্খ মনে করে থাকেন।
নীচে আরেকটি ভিডিও দেখা যাচ্ছে সেখানে ব্রাহ্মণ কি বলছে শুনুন।বেশ-ভূষায় এ ব্যক্তি হলেন ব্রাহ্মণ, তাঁর কথাগুলো ভালভাবে শুনার চেষ্টা করুন। তিনি বলছেন মন্দিরে কিংবা ঘরে যে সমস্ত দেবী-দেবতা রয়েছে সেগলিকে তিনি তাঁর চরণে অর্থাৎ পায়েই স্থান দেন।
অথচ ব্রাহ্মণদের কথায় আস্তিক বা অন্ধভক্তগণ যে সমস্ত দেবী-দেবতাদেরকে পূজা-অর্চনা করে থাকেন, তাঁদের সাথে ব্রাহ্মণ বর্ণের ব্যবহার কিরকম আপনারা নিজেরাই শুনে দেখুন। ব্রাহ্মণ বর্ণের লোকেরা ভালভাবে জানেন যে, দেব-দেবী সব হল কাল্পনিক। কাল্পনিক দেব-দেবীর পাথর, মাটি, ধাতু বা কাঠ দ্বারা নির্মিত মূর্তি কিছুই দিতে পারবেনা। কিন্তু ব্রাহ্মণেরা যাঁদেরকে আস্তিক বা অন্ধভক্ত বানিয়েছেন, যাঁদের কামাই দ্বারা ব্রাহ্মণেরা জীবিকা নির্বাহ করছেন, সে সকল অন্ধভক্তেরা তা জানেননা। অন্ধভক্তেরা যতদিন পর্যন্ত ব্রাহ্মণদের মায়াজালে ফেঁসে থাকবেন, ততদিন ব্রাহ্মণদের পরিশ্রম করে খেতে হবেনা। বিনা পরিশ্রমেই অর্থ রোজগার করতে পারবেন। এদের পাতানো জাল হতে মুক্ত হওয়া ব্যতীত আস্তিক বা অন্ধভক্তেরা পাথরের মূর্তি এবং ব্রাহ্মণদের প্রকৃত উদ্দেশ্য জানতে পারবেননা। সুতরাং, কাল্পনিক দেবী-দেবতাগণ মূর্তিকে পূজা করিয়ে ব্রাহ্মণ পূজারীবর্গ অব্রাহ্মণদের কাছ থেকে অর্থ লুঠ করতে থাকবেন এবং তাঁদের এরূপ ধান্ধার ভিত্তি হল অব্রাহ্মণদের অজ্ঞানতা। মুর্খদের অজ্ঞানতার কারণে ব্রাহ্মণদের ধূর্তামি, ছল-কপটতা, ভণ্ডামি ও প্রতারণা টিকে রয়েছে।
0 Comments