আনিচ্চা বত সাংক্খার" বলতে কী বুঝায়?

 

আনিচ্চা বত সাংক্খার" বলতে কী বুঝায়?

কেউ পরলোকগত হলে আমরা সবাইকেই এই পালি গাথাটি বলতে শুনি। আসলে এর অর্থ কী? এর সহজ বাংলা অর্থ হচ্ছে "সকল সংস্কার অনিত্য"। এটির সাথে মৃতের সম্পর্ক কী?
এটি আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন।

প্রথমে আসি সংস্কার কী?
আসলে যিনি পরলোকগত হয়েছেন। তিনি ছিলেন নাম-রূপ। মহামতি বুদ্ধের মতে সকল সত্তগণই নাম-রূপের অধীন। অর্থাৎ আমি, আপনি, সে, তিনি। অথবা পাখি, পশু, সাপ, কীট পতঙ্গ, দেবতা, ব্রম্মা সবাই নাম-রূপ। এই নামরূপকেই এখানে সংস্কার বলা হয়েছে।

তাহলে অনিত্য কি?
যখন কোন জীবিত প্রাণী মারা যায়। তখন তার "নাম-রূপ" হতে "নাম"টি "রূপ"কে ত্যাগ করে অন্য রূপের মধ্যে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করে। বর্তমান "রূপ" টি মৃত অবস্থায় পরে থাকে, আমরা সবাই মিলে এই "রূপ" এর সৎকার করি। অর্থাৎ তার এই "রূপ" টি মারা গিয়েছে কিন্তু "নাম" টি মারা যাননি (যদি অরহৎ না হন) নামটি অন্য রূপ ধারণ করেছেন।

তাহলে এই "নাম-রূপ" এর মধ্যে "নাম" এর যে দেহ পরিবর্তনের কারনে "রূপ" টির অনিত্যতা। "রূপ" টি কিছুক্ষণ আগেও কি সুন্দর চলাচল করছিল তা এখন আর করছে না। চিরতরের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছে (অনিত্য হয়েছে)। এই "রূপ" কে যদি এখনই সৎকার করা না হয় তাহলে এটি খনে খনে পরিবর্তন(অনিত্য হতে) হতে থাকবে, এক সময় গন্ধ ছড়াবে(অনিত্য হবে) পঁচে যাবে(অনিত্য হবে) রূপ বিকৃত হবে(অনিত্য হবে) হাড্ডি থেকে মাংস ঝরে যাবে(অনিত্য হবে)।
একসময় পুরোপুরি মাটির সাথে মিশে যাবে( অনিত্য হয়ে যাবে)। অথবা এটাকে সৎকার করলেও তা অনিত্যতা। অনিত্য শব্দের অর্থ পরিবর্তন। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটাকে কখনই থামানো যাবে না। রূপ অনিত্য হবেই । নাম অনিত্য হবেই । নাম রূপের এই সংস্কার অনিত্য হবেই । তদ্রূপ আমার এই রূপ ও অনিত্য হবেই। অর্থাৎ আমাকেও একদিন মরতেই হবে।

তাই কেউ মারা গেলে এই অনিত্য গাথা বলার অর্থ হলো, অন্যের মৃত্যুর মাধ্যমে নিজের মৃত্যুকে শরণ করা। এবং যাবতীয় অকুশল কর্ম থেকে বিরত থাকা। এবং দান, শীল,ভাবনা ও শীল সমাধি প্রজ্ঞার অনুশীলন করা যাতে বার বার মরতে না হয় একবারই মরে যাতে পরম সুখ নির্বাণ সাক্ষাৎ করতে পারি। এটাই মহামতি বুদ্ধের শিক্ষা। এক কথায় মৃত দর্শনের মাধ্যমে নিজের মধ্যেও মৃত্যু ভাবনা বা মরণ স্মৃতি স্বরণ করা।