Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

বিদর্শনাচার্য ভদন্ত প্রজ্ঞাজ‍্যোতি মহাস্থবিরের বুদ্ধ সাসন সেবায় অবদান ঃ (৪র্থ পর্ব)

 বিদর্শনাচার্য ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাস্থবিরের বুদ্ধ সাসন সেবায় অবদান ঃ

(৪র্থ পর্ব)
***************





ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি ১৯৬২ তে জোবরা সুগত বিহার সীমায় ভিক্ষুত্ব বরণের পর ১৯৬৩ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত সেই বিহারের দায়িত্বে ছিলেন । তখন জানতাম না যে তিনি কেন স্নানে এতো জল ব্যবহার করতেন । আমি তখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশোর । পূর্বে উল্লেখ করেছি তখন আমার সহপাঠী ছিল জগদীশ নামে নোয়াখালী সোনাইমুড়ির কিশোর টি । ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতির শ্রামণ্য গুরু উপ-সংঘরাজ ভদন্ত গুণালংকার মহাথেরো লক্ষণ আর জগদীশ দুই কিশোর কে সোনাইমুড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন জীবনের অন্তিম সময়ে। লক্ষণ কে রেখেছিলেন ভান্তের গৃহী বাড়ীতে গরু চরাণো আর স্কুলে পড়তে । জগদীশকে রেখেছিলেন বিহারের সেবা কর্মে আর পড়তে । তিনি এভাবে কুমিল্লা নোয়াখালী থেকে অনেক কিশোরকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতেন বিভিন্ন বিহারে রেখে । নিজে থাকতেন তাদের অভিভাবকের দায়িত্বে।দুর্ভাগ্য ক্রমে এই দুই কিশোরের আগমণ হয় শ্রদ্ধেয় ভান্তের যখন গলায় কেন্সসার রোগ ধরা পড়ে। রোগটি চিহ্নিত করতে অনেক বিলম্ব হওয়ায় ঢাকায় দীর্ঘ সময় চিকিৎসা সত্ত্বেও জীবন রক্ষা হয়নি। ১৯৬১খৃস্টাব্দে তিনি নিজের চির আবাস জোবরা সুগত বিহারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ভদন্ত কালগত হওয়ার পর লক্ষণ আর জগদীশ নামের কিশোর দুটি ভয়ানক অসহায়ত্বের শিকার হয়। লক্ষণকে দেখতাম বিকেলে আমাদের সাথে মাঠে গরু চড়ানোর সময় আমাদের আড্ডা থেকে দূরে বসে করুণ স্বরে কান্না করতো প্রায় সময়। একই অবস্থা ছিল জগদীশের । জোবরা সুগত বিহারের অধ্যক্ষ তখন ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি ভিক্ষু । এখন আমার মনে হয় ভদন্ত মহোদয় মা বাবা থেকে দূরে থাকা শিশুর মানসিক অসহায়ত্ব বুঝতেন না। এমনকি শিশুর খেলাপ্রিয়তাও বুঝতেন না । বিহারে ঝাড়মোচ করা বা স্নান ও শৌচাগারে জল সরবরাহে একটু ব্যতিক্রম হলেই তিনি হাতে বেত নিয়ে তেড়ে আসতেন জগদীশের প্রতি । জগদীশও গায়ে বেত লাগার আগেই শুরু করতো উচ্চ স্বরে কান্না । প্রিয় বন্ধুর এদৃশ্য আমার ভালো লাগতো না । বিহারের পাশেই আমার বাড়ি। তাই সময় পেলেই বিহারে আসতাম তার সাথে বিহারের ঝাড়মোচ করা আর স্নান শৌচাগারের জলাধার গুলো পুকুরের জলে ভর্তি করে দিতে । তাতে সে রক্ষা পেতো ভান্তের হুমকি ধমকি থেকে।
কিছু দিন পরে বিহারের সামনে নলকূপ বসানো হলো। গ্রামের সত্তুর আশি পরিবারের মাত্র এই একটি মাত্র নলকূপ । গ্রামের মায়েরা সন্ধ্যার পরেও পানীয় জলের জন্যে লাইন দিতেন। যখন তাদের আগমণ বন্ধ হতো ; বিহারার্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি আসতেন নলকূপের জলে স্নান করতে। কিশোর জগদীশকে নলকূপের হাতলে ঝুলে ঝুলে বহুক্ষণ ভদন্তের নাভিতে জল সরবরাহ করতে হতো। অথচ বিহারে রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার তার জন্যে থাকতো কি না সন্দেহ । তার সেই কষ্ট দূর করতে আমি প্রায় সময় ঠিক ঐসময়ে নলকূপের নিকট হাজির হতাম। সুযোগ পেয়ে সে ভদন্ত মহোদয়ের নাভিতে জল ঢালার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে বিহারে চলে যেতো । আর আমিও বিনা আপত্তিতে নলকূপের হাতলে ঝুলে ঝুলে জল সরবরাহ করতে গিয়ে ক্ষুধার্ত ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। মনে মনে ভাবতাম ভদন্ত মহোদয় সারা দেহের চেয়ে এই নাভিতে এতো জল কেন ঢালেন ? আরো কতক্ষণ ঢালতে হবে এভাবে । আমাকে ততক্ষণ তিনি যেতে বলতেন না ; যতক্ষণ আমার মা ডাকতে শুরু না করতেন । বহুকাল পরে ১৯৭১ খৃস্টাব্দে রাংকূটেও পাহাড়ের চুড়ায় থাকা বিহারটিতে নীচের পুকুর থেকে কেরোসিনের টিনের খালি আধারে জল ভরে কাঁধে করে স্নান,হাতমুখ ধোবন , পাত্র ও থালা বাসন ধোওয়া, পায়খানা প্রস্রাবের যাবতীয় জল মধ্যম সাইজের চৌবাচ্চায় সকাল সন্ধ্যায় ভরে রাখা ছিল আমাদের চার জনের কঠিন দায়িত্ব। তাই একবার প্রশ্ন করে ভদন্তের এই জল চিকিৎসার রহস্য উদ্ঘাটনে সক্ষম হলাম। এশিক্ষায় তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কত্তালা বিহারে ভদন্ত বংশদীপ মহাথেরো সাথে অবস্থান কালে । ভদন্ত মহোদয় নাকি জ্বর আসলে জলে ডুবে থাকতেন । দেহে ব্যথা বেদনা হলে কাদা লেপন করতেন । আর এ চিকিৎসার নাম নাকি প্রাকৃতিক চিকিৎসা। ১৯৭৩এ আমি ভিক্ষু হওয়ার পর যখন একদিন সেই কত্তলা বিহারে গেলাম তখন পূজ্য বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাথেরো মহাপ্রয়াণ করেছেন । কিন্তু ভদন্ত মহোদয় পুকুরের জলে নাক উঁচিয়ে বসে থাকার পাকা আসনটি দেখে মনে মনে হেসেছিলাম।
বলছিলাম আমার ভাবি গুরু ভদন্ত প্রজ্ঞাজোতি ভিক্ষু মহোদয়ের প্রসঙ্গ । তিনি জোবরা সুগত বিহারে বছর দুই অবস্থান করে হঠাৎ কোথায় চলে গেলেন জানতাম না। বহুকাল পরে ১৯৭০ এরদিকে সারা পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর ছাত্র আন্দোলনে আমাদের চিটাগাং পলিটেকনিক কলেজও প্রায় ধর্মঘটে বন্ধ থাকতো। এমন সময়ে জোবরায় ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি ভিক্ষু শ্রামণ সারিপুত্র(ডক্টর অধ্যাপক পিন্টু মুৎসুদ্দি) কে সহ টিনের এক মাঝারি বক্স ভর্তি বই নিয়ে উপস্থিত হলেন জোবরা সুগত বিহারে। বোঝাটি মোটামুটি ভারি ছিল। পিন্টু তো জীবনে বোঝা বহন করেনি। কারণ রেঙ্গুনে সেলাই কারিগর বাবা বিনোদ দর্জীর ঘরে তারা সব ভাই বোনের জন্ম । সেখানের বাঙালী বৌদ্ধদের তীর্থ ধর্মদূত বৌদ্ধ বিহারের ভদন্ত প্রজ্ঞালোক , ভদন্ত আর্যবংশ, ভদন্ত বিমলাচার, ভদন্ত ধর্মপ্রিয় ভিক্ষু (বর্তমান উপ সংঘরাজ) প্রমূখ ভিক্ষু সংঘের স্নেহ সান্নিধ্যে বেড়ে উঠা জীবন । তাই বোঝা বহনে অনভ্যস্ত পিন্টু এই ভারী বোঝা বহনের ভয়ে গুরুকে জোবরা সুগত বিহারে ঘুমের ঘোরে রেখে রাতের অন্ধকারে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন। গুরু ভোরে ঘুম থেকে উঠে শ্রামণ সারিপুত্রকে না পেয়ে মহা বিপদে পড়লেন । আমি সকালে বিহারে ভান্তের দর্শনে গেলে বললেন কালু (আমার ডাক নাম) শ্রামণ তো কিছু না বলে কোথায় চলে গেছে । আমার জন্মবাড়ী হাইদচকিয়া থেকে বই গুলো নিয়েছি শ্রামণটা সাথে থাকায় । এখন তো ভারি বিপদে পড়েছি । তুমি কি আমার সাথে রাংকূটে বেড়াতে যাবে ? ভাবলাম কলেজের ক্লাশ অচল । প্রায় অখন্ড অবসর । মন্দ কি ? এসুযোগে নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো যাক্ । সম্মতি দিলাম । তাহলে তৈরী হও । আজ দুপুরে খাওয়ার পর রওনা দেবো । বললাম আমাকে কিন্তু সহসা ফিরতে হবে । বাড়ীতে কাজ আছে । অসুবিধা নাই । চলে আসতে পারবে ।
আমি সামান্য পরণের পোষাক আর ছাত্র আই ডি টা সহ মা থেকে কিছু পথ খরচ নিয়ে যথাসময়ে হাজির হলাম বিহারে । বই ভর্তি টিনের বাক্সটি কাঁধে নিলাম । তখনই বুঝলাম কেন শ্রামণটি পালিয়েছে । বোঝা বহনে অভ্যস্ত আমি । তাই বিশেষ কোন অসুবিধে হচ্ছে না । ভদন্ত মহোদয় শহরে একটু কাজ আছে বলে গিয়ে উঠলেন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে । উনার জন্যে বরাদ্দ করা কক্ষে বাক্সটা রাখলে তিনি বললেন ; আমার কাজ সারতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে । দেরী হলে তুমি ঘুমিয়ে যাবে । আমি যে গৃহী যুবক । রাতে যে কিছু খেতে হবে ; তা তিনি ভাবেননি । যাক্ , মায়ের দেয়া কিছু তো হাতে আছে । ভান্তে চলে গেলেন থলে আর লাঠি নিয়ে । এই থলে,লাঠি আর সাদা ছাতা বিহারের কক্ষ থেকে বের হওয়া মাত্রই ছিল ভদন্তের নিত্য সঙ্গী । অথচ হালকা পাতলা ছিমচাম দেহী ভদন্তের জন্যে লাঠি টা প্রয়োজন কেন ? জানতে চাইলে বলতেন ; এই লাঠি গাম্ভীর্য বাড়ায় ; কুকুর জাতীয় দ্বিপদী চতুষ্পদীর সামনে সাহস যোগায় । যুক্তিপূর্ণ উত্তর শুনে মুচকি হাসলাম ।
ভদন্ত কাজ সারতে দীর্ঘ সময় বাইরে থাকবেন । ভাবলাম এখানে আমার পরিচিত তেমন কেহই নেই । যাক্ কলেজে এসে যেদিন ধর্ম ঘটে ক্লাস চলতো না ; সেদিন সোজা চলে যেতাম সিনেমা প্যলেস এর পাশে মুসলিম হলের পাবলিক লাইব্রেরিতে । পছন্দ মতো বই পড়ে পড়ে প্রায় সময় সন্ধ্যার পর বাড়ী ফিরতাম । আজও পাবলিক লাইব্রেরিতে সময় কাটাতে গেলাম । একটি বই কিছুক্ষণ পড়ার পর ইচ্ছে হলো সিনেমা দেখার । কারণ বেশ কিছু দিন সিনেমা দেখা হয়নি । পাকিস্তান সরকার ছাত্র আন্দোলন থামাতে ছাত্রদের যেকিছু শান্তনার ব্যবস্থা করেছিলেন ; তন্মধ্যে ছাত্র আই ডি অন্যতম । এই আই ডি দ্বারা অধ্যয়ন ফি , বিনোদন টিকেট ও সরকারি বেসরকারি যেকোনো যানবাহনে অর্ধেক খরচ কমে যেত। তাই সরাসরি সিনেমা হলে ঢুকে পড়লাম । কিন্ত হিসেব করিনি সিনেমার সেটা ছিল শেষ শো । সিনেমা হল থেকে বের হয়ে দেখলাম রাস্তা জনমানব শূন্য । মনে হয় সিনেমা হলের সর্বশেষ যাত্রীর জন্যে নাজিরহাট রুটের একটি বাস তখনো অপেক্ষামান ছিল । আমি একপ্রকার আতঙ্কিত মনে বৌদ্ধ মন্দির সড়ক বেয়ে বিহারের সামনে পৌঁছলাম । বন্ধ গেইটের তালা খোলতে অনেক ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হলাম । কোথায় যাবো হালকা শীতের এই গভীর রাতে ? শহরে জানাশোনা একজনও নেই যে ; তাদের কাছে যাই । অগত্যা দেয়াল টপকে নীচের হল ঘরের বারান্দার তিন দিকে ঘুরে একটি জানালা খোলা পেলাম । সড়কের লাইটের হালকা আলোতে জানালায় উঁকি দিয়ে দেখলাম কাছে একজন কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছেন । অনেক ডাকাডাকি কাকুতি মিনতি করেও জাগাতে না পেরে ভাবলাম সিঁড়ির তলায় ছোট্ট খোপটিতে আশ্রয় নিলে শীতের প্রকোপ কিছুটা কম হবে । কিন্তু সেখানে বসে বুঝলাম কুকুরের গাত্র গন্ধ এতটাই কড়া যে ; শ্বাস নেয়া কঠিন হচ্ছে । তাই নিরুপায় হয়ে শেষ চেষ্টা করতে জবা ফুলের একটি ডাল ভেঙ্গে তা দিয়ে গুতানো শুরু করে করে বলতে থাকলাম; আপনি আমাকে দরজা খুলে না দিলে আপনাকেও ঘুমোতে দেবো না। উত্তেজিত হয়ে দরজা খুলে দিলেন। এতোক্ষণে আমাকে দেখে তিনি দয়া করে এক কয়েক টুকরো ছেঁড়া কেশী কম্বল ও ভাঙা পাটি দিলেন । জুতোকে বালিশ করে এই গন্ধ কম্বল গাঁয়ে গোলাকার মুঁড়িয়ে বিছানায় শুয়ে অচিরেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে ভদন্ত মহোদয়ের কক্ষে গিয়ে বললাম ; আমি বাড়ী যাচ্ছি । আপনি অন্যকারো সহায়তায় আপনার বাক্স নিয়ে যান। বলতেই তিনি জড়ায়ে ধরে মাথায় হাত বুলায়ে বললেন ; আমি এসে তোমার অনেক খোঁজ করেছি । ভেবেছি তোমার পরিচিত কোন বাসায় রাত কাটাবে । বললাম , তেমন কোন পরিচিত বাসা শহরে আছে কি না , তা জিগেস না করেই চলে গেলেন । আপনি আমার রাতের খাবার নিয়ে ভাববেননি কেন? নিজের দোষে যে শাস্তি পেলাম ; সেই বোধ জেগে উঠায় শান্ত ভাব ধারণ করলাম । সকালের প্রাতঃরাশ খেতে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক ভদন্ত শীলাচার শাস্ত্রী আমার ভাবি গুরুদেব ও আমাকে নিয়ে গেলেন বিহারের পাশে বাবু মুকুন্দ বড়ুয়ার বাসায়। পরোটা ও সবজির সাথে দিলেন কপি । কপির কাপ মুখে দিতেই ভারী তেতো লাগলো । কষ্ট করে কুইনিনের মতো দুই চুমুক দিয়েই রেখে দিলাম । তাতে মুকুন্দ বাবু বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করলে লজ্জা পেলাম । বিহারে আসা মাত্র ভাবি গুরুকে বললাম ; আপনি আরো কয়দিন থাকবেন শহরে ? না না , আজ দুপুরে খাওয়ার পরেই রওনা দেবো । দুপুরে আমি হোটেল থেকে খেয়ে আসবো। আপনি তৈরি থাকবেন । এই বলে বেরিয়ে গেলাম ।
১৯৭০ এ চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে ঘটে যাওয়া সেই রাতের স্মৃতি মনে পড়লো ১৯৮৯ এ ভদন্ত শীলাচার শাস্ত্রীর প্রয়াণের পর আমাকে যখন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ পদে বরণ করা হয়। মনে মনে কতোবার হেসেছি যখন রাতে আশ্রয় নেয়া সিড়ির সেই কোটর টি চোখে পড়তো। জীবনের ভবিষ্যৎ সত্যি বড়ো প্রহেলিকাময় !
কক্সবাজারে গাড়িতে উঠে ভাবি গুরু ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি বললেন , কিছু মনে করো না ; পথে আমার গুরুকে বন্দনা করতে যাবো । ভাবলাম মন্দ না । উনার এই গুরুটা কেমন জানা যাবে ; নতুন জায়গা, নতুন বিহার দেখা যাবে । আসলে আমার স্বভাবটা চিরকাল এমনই থেকে গেল । নিত্য নতুনের প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ! আমার ভাবি গুরুর স্বভাবও ঠিক ততটাই । পটিয়া পালের ঘাটায় গাড়ি থেকে নামলাম । উনাইনপুরা লঙ্কারামে গিয়ে ভদন্ত কৃপাশরণ নির্মিত বিহারে বিরাট আকৃতির বুদ্ধ মূর্তি বন্দনার পর টিনের চৌচালা বেড়ার নির্জন ঘরে আলো আঁধারি ঘরে ইজিচেয়ারে অর্ধশায়িত চোখে সানগ্লাস চশ্মা উজ্জ্বল গৌরবর্ণের দীঘল দেহী মহাপুরুষটির দেহ থেকে মনে হলো এক অপূর্ব স্নিগ্ধ আভা ঘিরে আছে । আমি বিস্ময় বিমুগ্ধ মনে নাতি দূরে নিরবে একাকী বেশ কিছুক্ষণ ভদন্ত মহোদয়ের প্রতি তাকিয়ে বসে ছিলাম। মহাপুরুষ ভদন্ত জ্ঞানীশ্বর ! সমগ্র পিটক অধিগমকারী তেজস্বী শীল বিনয় গারবী বিদর্শনে উঁচু মার্গের এই ধ্যানীর বিষয়ে এতোকিছু জেনেছি গুরুর মুখে পরবর্তীকালে । কিন্তু এই আমি দেখলাম ভদন্ত বিড় বিড় করে কিছু বলার পর অহো! বুদ্ধ; অহো বুদ্ধ করে বড়ো করে শব্দ করেন।
বস্তুত তিনি বিশুদ্ধ মার্গ গ্রন্থের ব্যখায় শ্রদ্ধা বহুল শ্রদ্ধা চরিতের একজন সাধক । আমার গুরুর কাছে শুনেছি তিনি অসাধারণ বুদ্ধগত প্রাণা ছিলেন । বুদ্ধ পূজা করার সময় তিনি সব কিছু ভুলে নিশ্চল একাগ্র চিত্তে বিভোর হয়ে যেতেন। আর সেই বিভোর চিত্তে কতো বিচিত্র ভাবে ফল কেটে কেটে যে বুদ্ধ পূজা সজ্জিত করতেন , তা নিজ চোখে না দেখলে বর্ণনা করা কঠিন ।
আমার গুরু দেবের আচরণেও আমি সেই একই দৃশ্য অবলোকন করতাম। রাংকূটে তিনি প্রবর্তন করেছিলেন চুরাশী হাজার ধর্মস্কন্ধ পূজা। তার প্রচারণা এতো ব্যাপকতা পেয়েছিল যে ; বর্তমানে বিশাল কোন কঠিনচীবর দানসভার মতোই জন সমাবেশ হতো বুদ্ধ পূর্ণিমায় আয়োজিত এই ধর্মস্কন্ধ পূজায় ।এক বড়ো ট্রাকের পরিমাণ ফল মূল দান আসতো উখিয়া হতে উত্তর চট্টগ্রামের নানুপুর হাইদচকিয়া থেকে পর্যন্ত পূজারীরা আসতেন এই পূঁজায় । রাত ভর কীর্তন আর পূজা সজ্জা চলতো বিচিত্র ভাবে সজ্জার মাধ্যমে । সেই ধারা এখনো চলমান আছে। তবে ২০০৮ খৃস্টাব্দে আমি যখন রাংকূটের দায়িত্ব গ্রহণ করি , তখন দেখলাম পূজোর পরে প্রায় সপ্তাহকাল পঁচা দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠতো রাংকূটের আশপাশ। প্রতিবেশীরা এমন কি পথ চলা মানুষও অভিযোগ করে থাকেন । তাই বেশী কাটাকুটি না করে অধিকাংশ ফলমূল আমি রামু হাসপাতালের রোগীদের জন্যে পাঠিয়ে দিতাম। ১৯৮৯ এ যখন আমি চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করি তখনও অনেক বাঁধা সত্ত্বেও এই পদক্ষেপ নিয়ে ছিলাম । কিন্তু অতি শিক্ষিতদের কারণে বাস্তায়িত করতে পারিনি।
১৯৭১ এ রাংকূটে আমার অবস্থান সময়েই জানতে পারি যে ; জোবরা থেকে ঘুরতে ঘুরতে তিনি চলে গিয়েছিলেন বাঁশখালীর উত্তর জলদি বনবিহারে। সেখানে অবস্থান কালে পার্শ্ববর্তী হিন্দু সাধু চিন্তাহরণ ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি ভিক্ষু মহোদয়ের কাছে বৌদ্ধ ধ্যান শিক্ষা করেন।সেই চিন্তাহরণ সাধু পরবর্তী কালে স্বামী পরমহংস দেব হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর তুলসীধামের মঠাধ্যক্ষ হয়ে ছিলেন।
জলদি বনবিহারে অবস্থান কালে ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যেতি ভিক্ষু মহোদয় প্রব্রজ্যাজীবনের ভিত্ দান করেন ভদন্ত সাধনমিত্র(বন ভান্তের দিঘীনালার সেবক), ভদন্ত জ্ঞানজোতি(শিলিগুড়ি),ভদন্ত প্রজ্ঞামিত্র(রামু উত্তর মিঠাছড়ী),ভদন্ত তিলোকানন্দ(আনোয়ারা),ভদন্ত জ্ঞানরত্ন(চন্দনাইশ জোয়ারা) সহ আরো বেশ কিছু বাঁশখালী জাত সন্তানকে।
অতঃপর মনের মতো ধ্যান সাধনা অনুকুল স্থানের সন্ধানে সেখান থেকে চলে এলেন রামু । সেখানেই সন্ধান পেলেন দীর্ঘকাল পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ রাংকূট বনবিহারটির । ১৯৬৬ খৃস্টাব্দ থেকে তিনি সেই রাংকূটে অবস্থান শুরু করেন। আর সেই ধারাবাহিকতা গুরু শিষ্য পরম্পরায় বজায় ছিল ২০১৩ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত। শুরুতে সঙ্গে ছিলেন জলদীর সন্তান শ্রামণ প্রজ্ঞামিত্র , শ্রামণ ধর্মরত্ন(রাজারকুল ও মুম্বাই ), শ্রামণ জিনসেন(অধ্যাপক জ্যোতিষ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), শ্রামণ সারমিত্র(ডক্টর পিন্টু মুৎসুদ্দী, অধ্যাপক রাঙ্গুনিয়া কলেজ) এবং পর পর আরো কয়েকজন ।
রাংকূট তখন কেমন ছিল জানি না । কিন্তু আমি ১৯৭১ এ সেখানে অবস্থান কালে দেখলাম তিনটি পাড়ার মাত্র ২৯ টি পরিবার নিয়ে ভদন্ত অবস্থান করছেন এই রাংকূট বনাশ্রমে। তন্মধ্যে তিনটি পরিবার মাত্র নিজের জমিতে চাষাবাদ করে বছরের খরচ মেটাতে পারতো । অবশিষ্টরা প্রায় সবাই দিনে এনে দিনে খাওয়ার লোক । আমরা সারা গ্রাম ঘুরে কখনো একটি ভিক্ষা পাত্র পূর্ণ আহার লাভ করতাম ; কখনো তাও পাওয়া যেতো না । অধ্যক্ষ ও দুই সেবক সহ সংখ্যায় ছিলাম পাঁচ জন। তদুপরি ছোট ছয় প্লেটে বুদ্ধ পূজা দিতে গিয়ে অর্ধেক মতো চলে যেতো। সকালে পালা ভিত্তিক আহার দুই পরিবার থেকে যা আসতো তাতেও একই ব্যবস্থায় প্রত্যেকের পাতে ভান্তে নিজের হাতে সম পরিমাণে দিতে গিয়ে বড়ো এক মুষ্টি করে দিতে পারতেন । তখন আমাদের মুখের দিকে অবলোকন করে অতীতের বিভিন্ন দুর্ভিক্ষে ভিক্ষুরা বুদ্ধ ও সাংঘিক জীবনকে অন্তরের গভীর ভালোবাসায় কিভাবে আত্ম উৎসর্গ করেছিলেন সেই গল্প শোনাতেন। বলতেন, আজ যেই দায়কেরা আমাদের আহার দান করলেন , তা তো তাদের পরিবারেরই খাদ্যের অংশ । সেই খাদ্য সন্তানদের না দিয়ে আমাদের জন্যে যে দান করছেন , তার বিনিময়ে আমরা কি দিলাম ? যদি আমরা ধর্ম বিনয় আচরণে সমৃদ্ধ না হই ; দাতাদের কে চলমান দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্তির জ্ঞান দানে সক্ষম না হই ; তাহলে দায়কদের দান আমরা গ্রহণ করবো কি যোগ্যতায় ? এভাবে আরো কতো সংবেগ উদ্দীপক কথা শুনতে শুনতে আমার মনের কষ্ট দূর হয়ে কৃতজ্ঞতায় ভরে যেতো দায়কদের প্রতি ।
শুরুতেই উল্লেখ করেছি ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা । ১৯৭০খৃস্টব্দ ছিল ১৯৪৭ এ অখন্ড ভারতকে ভাগ করে পাওয়া পূর্ব পাকিস্তানের সর্বশেষ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা জনাব শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ব্যাপক বিজয়ের মুখ দেখার কারণ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের পান্জাবী সেনাদের নিয়ন্ত্রিত সরকার গুলো দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানীদের শোষণ বন্চনা আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছয় দফা ভিত্তিক প্রচার আন্দোলন । একমাত্র বামপন্থী কমিউনিস্ট ভাবধারার স্বল্প সংখ্যক ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের বেশীরভাগ মানুষ কখনো পাকিস্তান হতে পৃথক হয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেনি। এমন কি আওয়ামীলীগও না । তারপরও পান্জাবীদের আধিপত্যবাদী মানসিকতার কারণে নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামীলীগ কে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার কারণেই মুসলিম লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক পার্টি একজোট হয়ে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের ডাক দেয়া হয় ।
শেখ মুজিব এই ডাক দেয়ার পর পরই পাকিস্তানের কারাগারে অবস্থান করতে হয় । আওয়ামী নেতা তাজউদ্দীন প্রমূখ অন্যান্য নেতারা ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়ে মুক্তি যুদ্ধ শুরু করেন। কিন্তু ভারতের সহায়তায় মুক্তি যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জনাব শেখ মুজিব ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে । তিনি জানেনা পাকিস্তান পন্থী বাঙালিরা অমুসলিম আর বুদ্ধিজীবীদের উপর কেমন নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে। তাই তিনি বাচবিচার না করেই স্বাধীনতা বিরোধীদের জন্যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা দিয়ে দিলেন একপ্রকার একতরফা ভাবেই। ধীরে ধীরে মুক্তি যোদ্ধা তাজউদ্দীন প্রমূখদের সাথে শেখ মুজিবের দূরত্ব বাড়তেই থাকে । আর সেই সুযোগে অতি কাছের মানুষ হয়ে যায় পাকিস্তান পন্থীরা । বিপ্লব বিরোধীদের প্রতি সাধারণত এমন ক্ষমা আত্মঘাতীই হয়ে থাকে । বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পন্চাশ বছর পর আজ তা ই হয়েছে। এই নিরেট সত্যটি প্রতিবিপ্লবীরা খুব ভালো করে বুঝে বলে তারা অতীতের মতো আজ বাংলাদেশ থেকে মুক্তচিন্তার মানুষ গুলোকে সমূলে উৎপাটিত করতেছে কোন ভূল করছে না।
যাক্ এক সময়ে বিপ্লবী চিন্তাধারার যুবক আজকের প্রজ্ঞাবংশ সেই ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিভীষিকার মাঝেই কক্সবাজার রামু রাংকূট এর নিবীড় অরণ্য বিহারে আগমণের সৌভাগ্য হয়। তার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম ও দর্শনের সাথে পরিচিত ব্যক্তিত্ব ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি ভিক্ষুর সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব হলো । সেই ভদন্ত মহোদয় পুরো একটি বছর প্রতিদিন আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সদৃশঃ রেলওয়ের একাউন্টস অফিসার জোবরার নূতন চন্দ্র বড়ুয়া আর চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কলেজে অধ্যয়নরত দুই শিক্ষিত যুবক পেয়ে একটি চব্বিশ ঘন্টার রুটিন করে দিলেন । তাতে বিহার পরিচর্যা থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল ধ্যান ও বিশেষ কিছু পিটকীয় গ্রন্থের উপর আলোচনা । মিলিন্দপ্রশ্ন, বিশুদ্ধি মার্গ, অভিধর্মার্থ সংগ্রহ, মজ্ঝিম নিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড, দীর্ঘ নিকায়, মহাপরিনির্বাণ সুত্র, সতিপট্ঠান সুত্র, প্রব্রজ্যিতের ব্রতরাশী , ধম্মপদ ও কায়বিজ্ঞান এই গ্রন্থ গুলোর বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা এবং ক্ষেত্র বিশেষে মুখস্থ করে আবৃত্তির পাঠ দান হতো । কায়বিজ্ঞান , সতিপট্ঠান অনুযায়ী ধ্যান অনুশীলন ছিল প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রুটিন টি ছিল মূলতঃ বিনয়াচার্য ভদন্ত জীনবংশ মহাস্থবিরের সংকলিত প্রব্রজ্যিতের ব্রতরাশী ভিত্তিক । এই দৈনিক রুটিনের সুবাদে জীবনে এই প্রথম বুদ্ধের শিক্ষা ও বৌদ্ধিক জীবনের সাথে পরিচয় হলো আমার । তদুপরি বাছাইকৃত গ্রন্থ গুলো ছিল আমার মতো কমিউনিস্ট মনা যুবকের জন্যে খুবই উপযোগী । শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু মহোদয় বলতেন ; প্রব্রজ্যা জীবনের শুরুতেই ধর্ম বিনয় সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জানতে হয় । তা নাহলে গভীর ধ্যান চর্চার পর অথবা ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে মনোনিবেশের পর ধর্ম বিনয় শিক্ষার মানসিকতা খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। পূজ্য শিক্ষা গুরুর এই অভিজ্ঞান কতো যে বাস্তব তা আমি মর্মে মর্মে বুঝেছি। তাই জীবনে এতো উঁচুমানের বৌদ্ধ পন্ডিতজনের সান্নিধ্যে যাওয়ার পরও বার বার মনে হয়; রাংকূটের একটি বছরে বুদ্ধের শিক্ষা আমার সারা জীবনের ভিত্তি ।
আরো বলা দরকার ; জীবনের ১৯ বছর পর্যন্ত বুদ্ধ শিক্ষার উপর এজাতীয় কোন জ্ঞানের ছোঁয়া বা কোন গ্রন্থ এযাবত হাতে পড়েনি। মা বাবা এমনকি কোন গুরুজনও বলেননি বুদ্ধ শিক্ষা বিষয়ে কিছু জানতে । ভেবে দেখুন কেমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আমাদের বৌদ্ধ মাতা পিতারা । নিজ আত্ম পরিচয়ের এমন নৈতিক গুরুদায়িত্ব টির প্রতি কতো উদাসীন এই সমাজ ! বিশেষ করে চট্টগ্রামী বড়ুয়া ও চাকমারা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী। মারমাদের প্রতিটি বিহারে শিশুদের বর্মী ভাষা শিক্ষা ও বুদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষা দানের প্রথা সেই সমাজে আছে । কিন্তু বড়ুয়া ও চাকমারা সন্তানদের কে দিন রাত কেবল স্কুল কলেজের লেখাপড়ার কথাই বলেন । আরো অভিজাত্য পরিচয় দিতে বাদ্য বাজনা,নাচ গানের জন্যেও সন্তানদের উৎসাহীত করেন । অথচ নিজের আত্মপরিচয়ের জ্ঞানদানের কথা ভাবেন কয় জন ? এমন উদাসীনতা কেবল লজ্জার নহে ; নিজের রক্তের জাতী গোত্র, ইতিহাস ঐতিহ্যের নাম ধাম মুছে দেওয়ার মতো চরম আত্মঘাতীও বটে।
হা, ১৯৭১ এ উত্তর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আরাকান সামন্ত রাজবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী গ্রাম জোবরা । সেই রাজবাড়ীর মাটিতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান স্থল । সেখানে মানে আমাদের গ্রামের বড়ুয়া পাড়ায় অস্র ভান্ডার ছিল ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের( রামগড় বর্ডার গার্ড)। তাই আমাদের পা পাড়াটি ছিল প্রতি রাতে পাক সেনাদের তল্লাশির টার্গেট। এমতাবস্থায় পাক সেনাদের হত্যযজ্ঞ হতে জীবন রক্ষার তাগিদে কক্সবাজারের রাংকূটে গমণ টি আমার জন্যে একারণেই স্বার্থক হলো ; অর্থপূর্ণ হলো ; জীবন ও জীবনদৃষ্টির আমূল পরিবর্তনের কারণে । মা বাবার সেরা সন্তানটি গৃহী জীবন ত্যাগ করে বুদ্ধের জীবনাদর্শে উৎসর্গীত হলো ভূরিপ্রাজ্ঞ বিদর্শনাচার্য ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথেরোর বিচক্ষণ বিদ্যাবর্তায়। গৃহী সুব্রত বড়ুয়া ক্রমে হয়ে উঠলেন ভিক্ষু প্রজ্ঞাবংশ !!! ( চলবে)

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement