Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

বিদর্শনাচার্য ভদন্ত প্রজ্ঞাজ‍্যোতির বুদ্ধ সাসনে অবদানঃ(৫ম পর্ব) লেখা,ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো,

 

বিদর্শনাচার্য ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতির বুদ্ধ সাসনে অবদানঃ(৫ম পর্ব)
*******************
১৯৭১ থেক ২০১৩ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত আমার রক্তের সাথে সম্পর্কিত কক্সবাজারের রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার ও দায়কগণ । গুরুদেব ভদন্ত প্রজ্ঞাজোতি তখনো ভিক্ষু জীবনে দশ বছর পূর্ণ না হওয়াতে কোন প্রার্থী কে শ্রামণ প্রব্রজ্যা বা শ্রামণ শিষ্যের ভিক্ষুত্ব গ্রহণে উপাধ্যায়ের দায়িত্ব নিতে পারছিলেন না। ফলে বাঁশখালীর সন্তান শ্রামণ শিষ্য সাধনমিত্র কে ভিক্ষু করালেন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির (ত্রয়োদশ সংঘরাজ); শ্রামণ জ্ঞানজোতিকে ভিক্ষু করালেন সপ্তম সংঘরাজ ভদন্ত অভয়তিষ্য মহাস্থবির ; শ্রামণ প্রজ্ঞামিত্র(রামু উত্তর মিঠাছড়ি)কে ভিক্ষু করালেন খুব সম্ভব বিনয়াচার্য জীনবংশ মহাস্থবির ; রামু রাজার কূলের শ্রামণ ধর্মরত্ন(মুম্বাই) কে ভিক্ষু করালেন অষ্টম সংঘরাজ শীলালংকার মহাস্থবির; শ্রামণ জীনসেন (বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক জ্যোতিষ) কে ভিক্ষু করালেন ভিক্ষু মহাসভার সম্পাদক ভদন্ত শান্তপদ মহাথেরো । শ্রামণ সারীপুত্র( ডক্টর পিন্টু মুৎসুদ্দি) প্রমূখ অনেকে নানা কারণে শ্রামণ্য জীবন ত্যাগ করলেন ।
১৯৭১ আমি ও বড় ভাই নতুন চন্দ্র কে শ্রামণ করাতে প্রথমে আবেদন করতে গেলেন রামুর জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথেরোর কাছে । তিনি বিশ্রী ভাষায় প্রত্যাখ্যান করাতে শেষতক বর্ষণমুখর পড়ন্ত বিকেলে নিয়েগেলেন প্রতিবেশী রামু লামার পাড়ার রাখাইন সংঘ প্রধান ভদন্ত উ পান্ডবা মহাথেরোর কাছে । সেই রাখাইন সংঘপ্রধান জ্যোতিষ শাস্ত্র বিচার করে নতুনধার নাম রাখলেন আরিয়া ওয়াছা সমণ; আমার নাম রাখলেন উ পঞাওয়ানছা তথা প্রজ্ঞাবংশ শ্রামণ । ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত এভাবেই গেল ভদন্ত প্রজ্ঞাজোতির শিষ্য ভাগ্য।
খুব সম্ভব ১৯৭২ এ তিনি ভিক্ষুত্ব জীবনের দশ বছর অতিক্রম করেছেন । সেই সুবাদে ১৯৭৩ এ তিনি আমার ভিক্ষুত্বে উপসম্পদায় উপাধ্যায়ের দায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম হয়েছিলেন । তাই বিদর্শনাচার্য ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতির প্রথম ভিক্ষু শিষ্য হলাম আমি ; শ্রীমৎ প্রজ্ঞাবংশ ভিক্ষু ।
১৯৭১ এর জৈষ্ঠ মাসে আম কাঁঠালের গাছে ছায়া সুনিবীড় রাংকূট বড় মন্দির পাহাড়ে গাছ ভর্তি কাঁঠাল । এটির চেয়ে ওটির স্বাদ বেশী । প্রতিটি কোষা রসে ভরা । সকালেও কাঁঠাল, দুপুরেও কাঁঠাল খেতে খেতে এক সময় হঠাৎ বমি শুরু হয়ে গেল আমার । সেই বমি আর থামে না। মুখে জল পর্যন্ত দিতে পারছি না ; বমি হয়ে যাচ্ছে । এভাবে দিন রাত চলতে থাকায় শয্যা থেকে মাথা তোলা দায় হয়ে গেল। দুই দিন ধরে পিন্ডচারণে অনুপস্থিত দেখে অপুত্রক দাদু চিন্তাপ্রু মহাজন আমার সন্ধানে আসলেন বিহারে । অবস্থা কাহিল দেখে নিজে কাঁকন চাল কে দুধ দিয়ে যাগু করে খাওয়ালেন। কাজ হলো এবার । বমি আর হলো না । এতো দুর্বল হলাম যে ; বিছানা ছাড়তে আরো সময় লাগলো। ঠিক এসময়েই বিশাল বিশাল বোমের আওয়াজ শুনতে পেলাম । বোমারু বিমানের শব্দও কানে এলো । পরে জানতে পারলাম কক্সবাজারের সার্কিট হাউসের পাকিস্তানী সেনাঘাঁটি ভারতের বোমারু বিমান তচনচ করে দিয়েছে । কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অতিনিকটে রাশিয়ার বিশাল নৌবহর মোতায়েন হয়েছে । তাতে পাকিস্তানের পক্ষে লড়তে আসা আমেরিকার সপ্তম নৌবহর পালিয়ে গেছে । মুক্তি যুদ্ধের এসকল খবর যথাযথ ভাবে পরিবশন করতো বি বি সি । ভারতের আগরতলা থেকে জয়বাংলা বেতার কেন্দ্রের উদ্দীপনামূলক গান গুলো জনমনে স্বাধীনতার পরশ জাগালেও খবর গুলোর উপর মানুষ তেমন আস্থা রাখতো না । যাক্ , ভারত আর রাশিয়ার সহায়তায় চীন আর আমেরিকার মদদ পুষ্ট পাকিস্তানের কজ্বা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেদিন ঘোষিত হলো ঠিক সেদিন আমিও রাংকূটের রোগশয্যা ত্যাগে সক্ষম হলাম সেই ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ খৃস্টাব্দে ।
জন্মভূমির স্বাধীনতা নিয়ে একসময় বুকে ছিল অনেক স্বপ্ন । কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে বামপন্থী নেতাদের ব্যক্তিস্বার্থান্ধতা, নীতি আদর্শকে পায়ে মাড়িয়ে ভেল পাল্টানো কান্ডগুলুর বিপরীতে বুদ্ধের সাংঘিক জীবনের নিঃস্বার্থ ত্যাগময় আদর্শ আমাকে পরবর্তী কালে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করলো।তাই ধীরে ধীরে ইহাকে আজীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করলাম।
রাংকূটে শত অনটনের মাঝেও গরীব পরিবার গুলোর অকৃত্রিম ভালবাসা আমাকে একপ্রকার চির কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করে ছিল । সেই বন্ধন এখনো অটুট থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার মাস খানেক আগে কঠিন চীবর দান না যেতেই রাতের আঁধারে একদল ডাকাত আক্রমণ করলো । আমি একটা বড়ো চড় খেলাম । গুরুদেব রাইফেলের বাটে মাথায় বেশ আঘাত পেলেন। রাতভর ভান্তের ভীষণ জ্বর আর বমি নিয়ে যুদ্ধ করে সকালে স্থানীয় সরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম । ডাক্তার বেন্ডেজ ও ঔষধ দিয়ে বিদায় দিলে বিহারে নিয়ে আসলাম । কিন্তু দায়কেরা ডাকাত চলে গেলে এতো ডাকাডাকির পরও বিহারের কোনজন না আসায়; নিজেকে বড়ো অসহায় মনে হলো । কারণ কি ? কয়দিন আগে গ্রামের মাতব্বরদের অনুমতি ছাড়া গুরুদেব গাছের কাঠাল স্থানীয় এক মুসলিমের কাছে অল্প মূল্যে দিয়ে দেয়ার অপরাধ । কিন্তু তারা দলবদ্ধ হয়ে বিহারে এসে গুরুদেবের সাথে যেভাবে খুব তুচ্ছ ব্যবহার করলো ; তাতে আমার মনে বেশ চোট লেগেছে । অথচ, বেশ কিছু গাছে তখনো কাঁঠালে ভরতি । জনশূন্য বাজারে এই কাঁঠাল নিয়ে যাওয়ার মানুষও নেই আর্মীর আতঙ্কে । গ্রামের লোকেরাও ব্যবহার করছে না । গাছের কাঠাল গাছে পেকে ঝরে পড়ছে । ভান্তের অপরাধ তাদের মতামত নিয়েই সবকিছু করতে হবে ; এমন মানসিকতা মেনে না নেয়া । রাংকূটকে রক্ষার জন্যে নিজের জীবন যিনি সমর্পিত করেছেন তেমন একটি নিবেদিত জনের প্রতি এমন আচরণ আমার মোটেই ভালো লাগেনি। এসকল কারণে রাংকূট ত্যাগ করার জন্যে মন একপ্রকার স্থির করে ফেলেছি ।
কিন্তু চারিদিকে আতঙ্কিত পরিস্থিতি। যাবো কোথায়? ইতিমধ্যে যার মায়ের দুধ ভাগাভাগি করে খেয়ে আমার শিশু জীবন রক্ষা পেয়েছে সেই দুধভাই দুর্দান্ত সুবাস প্রাণের ভয়ে শ্রামণ হয়ে রাংকূটে এসেছে আমার সাথে থাকতে। সে একটু ইছড়েপাকা স্বভাবি ছিল। তার মায়ের মেজ সন্তান সুবোধ অকালে মারা যাওয়ায় সুবাস মায়ের আসকারা একটু বেশি পায়। তাতে সে নানা ছল চাতুরীতে সব সময় চেষ্টা করতো রোজগারশীল মা থেকে টাকা পয়সা আদায় করে ফূর্তির কাজে লাগানো । দোকান থেকে রকমারি খাবার কিনে সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাওয়া । উদ্দেশ্য আমাদের লোভাতুর করা । কখনো খেলনার নানান দ্রব্য কিনে আমাদের পাগল করা ।সে এমন ধূর্ত ছিল যে ; মা টাকা দিতে গড়িমসি করলে ; সে তার বাড়ী সংলগ্ন রেললাইন দিয়ে গাড়ি আসার আগমুহূর্তে মা কে হুমকি দিত গাড়িতে পড়ে আত্মঘাতী হওয়ার । অথচ তখনো সে প্রাইমারি পড়ুয়া । এক সময় সে আমাদের কে ফুটবলে শট্ কিভাবে করতে হয় তা দেখাতে গিয়ে শক্ত রাবার দিয়ে বাঁধা তার পাঠ্য বইগুলোতে শট্ মারতে শুরু করলে আমি আঁতকে উঠি । কারণ প্রতিদিন এই বই ভক্তিতে মাথায় ঠেকাই বিদ্যা লাভের কামনায় ! আর সেই বই কে এভাবে লাথি মারা ? সুবাস এই শৈশবেই নিজে নিজে শহরে গিয়ে সিনেমা পর্যন্ত যে দেখতো তা টের পেলাম হাই স্কুলে গিয়ে যখন আমার জ্যামিতির স্কেলের বক্স কেনার দরকার হয় । সে ই আমাকে বুদ্ধি দিল শহরে খুব কম দামে এই বক্স পাওয়া যায় । সেই প্রলোভনে আমি বাবা থেকে টাকা নিয়ে তার সাথে সিনেমা প্যলেসের সামনে থেকে একটি জ্যামিতির স্কেল বক্স নিলাম । আর সিনেমার হলে ঢুকে সিনেমা দেখলাম জীবনে প্রথম । কী অসাধারণ অনুভূতি সেদিন । জীবনে শহরে এই আগমণ ছিল দ্বিতীয় বার । প্রথম বার এসেছিলাম প্রাইমারিতে পাঠ শুরুর আগে মায়ের কোলে বসে শহরে ২৫০০ বছরের বুদ্ধ জয়ন্তীর বিশাল সমারোহে । সুবাসের এই ইছড়ামী হাটহাজারী হাইস্কুলে গিয়ে আরো ভিন্নমাত্রা পেলো । সে সিনিয়র ক্লাশের ছাত্রদের সাথে ছাত্রলীগ কর্মী হয়ে গেল । আর আমাকেও সবসময় সঙ্গী করতে চাইতো। তার এই রাজনৈতিক পরিচিতির কারণেই ১৯৭১ একাত্তুরের এই নৈরাজ্যে ইসলামী দলগুলোর হাতে ধরা পড়ে হাটহাজারী মাদ্রাসায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে । তাই জীবন রক্ষার তাগিদে শ্রামণ হয়ে ছুটে এসেছে এই সুদূর রাংকূটে আমার কাছে । আমার গুরুদেব সুবাসের এই চরিত্র ভালো করেই জানতেন । তাই তাঁকে মাত্র এক রাত থাকতে দিয়ে পরদিন চলে যেতে বাধ্য করলেন। আমার আশৈশব বন্ধু কে এমন নির্মম ভাবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়াটা আমার কাছে মর্মান্তিক ছিল । তাই আমি তাকে চোখের জলে বিদায় দিয়ে অনেক্ষণ রাংকূট শ্মশানের জঙ্গলে বসে অঝোরে কান্না করেছি ।
দেশ স্বাধীন হলো । জন্ম গ্রাম থেকে সঙ্গী নতুন দাদার ভাই নেপাল আসলেন উনাকে বাড়ী নিয়ে যেতে।মা খুব অসুস্থ। বড়ো পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী প্রাণ প্রিয় জ্যেষ্ঠ সন্তানের উপস্থিতি এখন অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু শ্রামণ আর্যবংশ মানে নতুনদা গুরুর অনুমতি ছাড়া মা কে দেখতে যাওয়া অসম্ভব জানিয়ে দিলেন। গুরু জানেন যে ; বাড়ীতে গেলে আর্যবংশকে প্রব্রজ্যা ত্যাগে বাঁধ্য করবে। তাই তিনিও অনুমতি দানে অনিচ্ছুক। মেঝভাই নেপাল অগত্যা চোখের জলে বিদায় নিলেন আমাকে মেঝদা ভূপতির এক চিঠি ও কিছু টাকা হাতে দিয়ে । তাতে দেখলাম , তিনি আমার জন্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওয়াল হলে অফিস সহকারীর পদে চাকুরীর ব্যবস্থা করেছেন । তিনি নেপালদার মাধ্যমে তাই এই পথ খরচও পাঠিয়েছেন ; যেন সহসা বাড়ি ফিরে আসি । আসলে বহুদিন ধরে ছাত্র আন্দোলনে পড়া লেখা বন্ধ থাকায় ইতিপূর্বে আমিও শহরের মেহেদী বাগে পাকিস্তান এয়ারফোর্সের রিক্রুট সেন্টারে পরীক্ষায় পাশ করেছিলাম । ট্রেনিং এর জন্যে আমাদের কে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যেতে যেই চিঠি পাঠানো হয়েছিল তা অনেক বিলম্বে হাতে আসায় আমার যাওয়া সম্ভব হয়নি । আর এখন মেঝদাও চাকুরীর জন্যে বলছেন । কিন্তু, মানসিক ভাবে পুণঃ গৃহীজীবনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে এখন আর কোথায় ? তারপরও রাংকূট ত্যাগের জন্যে গুরুদেবকে গ্রামে মা বাবাকে দেখতে যাওয়ার আবেদন করলাম ; যখন তিনিও নিজের মা কে দেখতে হাইদচকিয়া যাচ্ছিলেন । কিন্তু না ; অনুমতি দিলেন না ।
মনে জেদ এসে গেলো। ভাবলাম ভান্তে এই একটি বছর আমাদেরকে কেবল কায়গতানুস্মৃতি ভাবনাই করতে দিলেন। এতো অনুরোধ সত্ত্বেও বিদর্শন ভাবনা টা করতে দিলেন না। অথচ , উখিয়া রেজুরকুলের উপাসক অনঙ্গ মোহন বড়ুয়াকে বিদর্শন ধ্যানে বসিয়ে আমাদের দ্বারা সেবা করালেন । আর আমি ও আর্যবংশ(নতুনদা)কে শুধু মধ্যাহ্ন ভোজের পর দুরের পাহাড়ে নির্জন মাটির গুহা কুটিরে গিয়ে নরকঙ্কাল টি নিয়ে পালাক্রমে ধ্যান করতে আদেশ দিলেন । আমরা দুইজন এভাবে প্রায় মাসাধিক কাল অতিবাহিত করেছি । তাতে বিহারে ও পিন্ডচারণাদি গমনাগমণে পথে দেখা লোকজনকে কঙ্কাল রূপে দেখার শক্তি উৎপন্ন হলো । ফলে মনে একপ্রকার অনাসক্ত প্রশান্তিও অনুভব করতে লাগলাম । কিন্তু ইদানীং ঘটনা গুলো মনকে উথলা করেছে । তাই ভাবলাম রাংকূট ত্যাগ করে গুরুদেবের প্রিয় বন্ধু পূজ্য বনভান্তের সান্নিধ্যে গিয়ে থাকবো । সেই পরিকল্পনায় ভান্তে যখন নিজের মা কে দর্শনে রওনা দিলেন তখন বড়ো শ্রামণ আর্যবংশকে বললাম চলুন না একবার গ্রাম থেকে ঘুরে আসি । আমার মেঝদা টাকা পাঠিয়েছেন। বললেন, ভান্তে অনুমতি না দিলে যাবো না । তাই আমি একা রওনা দিলাম জোবরার উদ্দেশ্যে ।
পথে পূর্ব পরিচিত চকরিয়া পাল্লাকাটার( নিছপানখালী) মাস্টার সীতানাথ বাবুর বাড়িতে উঠলাম । তিনি ছোট ভাই সারঙ্গকে নিয়ে কয়েক বার রাংকূটে গুরু দর্শনে গেছেন । আমাদের গুরু দেবের তিনি গৃহী শিষ্য । এমন শিষ্য ছিলেন ঢাকার রোডস এন্ড হাইওয়ের চীফ ইঞ্জিনিয়ার অশোক বড়ুয়া ও পি সি এস শশাঙ্কবিমল বড়ুয়া আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রণধীর বড়ুয়া । মূলতঃ এই তিন জনের পাঠানো মাসিক দানেই রাংকূটে গুরুদেবের মাসিক খরচ খুব কৃচ্ছতার সাথে চলতো। কারণ তখনো রাংকূটে শুধু পূর্ণিমা দিনে পূজার জন্যে যারা আসা যাওয়া করতেন তাঁদের মধ্যে রামুর সুবর্ণ মহাজন , অরুন মহাজন, আর হাজারী কুলের প্রেমলাল মহাজন । অপরদিকে অনেকদিন পর পর আসতেন উখিয়া রেজুর কুলের অনঙ্গ সাধু , মরিচ্চা ও ভালুকিয়া থেকে হাঠাপথে মাত্র দুই জন লোক । মাঝে মধ্যে রাজার কুল, শ্রীকুল, ও হাজারীকুলের দু চারটি সংঘদানের আমন্ত্রণ । বছরের অবশিষ্ট মাস পুরোটাই নির্ভর করতে হতো রাংকূটের সেই ২৯ টি অতিদরিদ্র পরিবারের ওপর। (চলবে )

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement