Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

ভিক্ষুদের অপবাদ দেয়ার কর্ম


ভিক্ষুদের অপবাদ দেয়ার কর্ম,

আরিয়ুপবাদ অন্তরায়-
আমি কেবল জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চাই। কোন ব্যক্তিকে আর্য ব্যক্তি (শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি) হওয়ার বিষয়টি জানা থাকুক বা না থাকুক, যদি কেউ নিন্দনীয় মনোভাব নিয়ে তাদের দোষারোপ করে, তবে সেটিকে আরিয়ুপবাদ বলা হয়।
বর্তমানে, শুধুমাত্র অন্য ধর্মাবলম্বীরাই নয়, এমনকি বৌদ্ধরাও ভিক্ষুদের সমালোচনা ও নিন্দা করছে। আমি অন্য ধর্মাবলম্বীদের কথা বলতে চাই না, বরং বৌদ্ধদের উদ্দেশেই কিছু বলতে চাই। বৌদ্ধদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নিব্বান লাভ করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেকে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদি কেউ নিজেই মার্গফল (মুক্তির পথ ও ফল) অর্জনের জন্য সাধনা করে, তাহলে তাকে অবশ্যই তার বাক্য সংযত রাখতে হবে যেন এই কুকর্মের অংশীদার না হয়ে যায়।

যদি কেউ এই কুকর্মের অংশীদার হয়, তাহলে সে যতই সাধনা করুক না কেন, ধর্মের উত্তম ফল লাভ করতে পারবে না।

যদি কেউ আর্য ব্যক্তিদের বা ভিক্ষুদের সম্পর্কে এভাবে বলে যে, "তাদের মধ্যে ধর্ম নেই," "সে প্রকৃত ভিক্ষু নয়," "ভিক্ষুর আচরণ নেই" — জেনে বুঝেই হোক বা না বুঝেই হোক, তাহলে সে আরিয়ুপবাদ অকল্যাণকর কর্ম সম্পাদন করছে।
এই কর্ম অত্যন্ত ভীতিকর। তাই অন্যের দোষ খোঁজার বদলে নীরব থাকাই উত্তম। যদি কারও দোষ সত্যিই থাকে, তবুও যদি সে একজন শুদ্ধাচারী ব্যক্তি হয়, তাহলে তাকে নিন্দা করলে গুরুতর পাপ সৃষ্টি হয়।

অনেকে শাস্ত্রের (বিনয় পিটক) প্রকৃত অর্থ না বুঝেই, শুধুমাত্র শোনা কথার ভিত্তিতে কোনো ভিক্ষুকে "রাতে আহার করেছেন," "উৎসবে অংশ নিয়েছেন" বলে দেখে মন্তব্য করে ফেলে — "এ কেমন ভিক্ষু!" এমন মন্তব্য করবেন না।
একজন ভিক্ষু যদি রাতে আহার করেন, অনুষ্ঠানে যান বা এমনকি মদ্যপানও করেন, তবুও তিনি ভিক্ষুই থাকবেন।
তবে যদি কেউ বলেন, "সে ভিক্ষু নয়," তাহলে এটা গুরুতর অপরাধ হয়ে যায়।
একজন ব্যক্তি তখনই ভিক্ষুতা হারান যখন তিনি চারটি অপরাধ করেন:
১. মেথুন সেবন- যে কোন নারীর সঙ্গে মেথুন সেবন বা কামাচার করলে।
২. চুরি- অন্যর অপ্রদত্ত বস্তু চুরি।
৩. হত্যা- মানুষ হত্যা ও হত্যার প্ররোচনা ।
৪. উত্তরিধম্ম- মার্গফল লাভ না করে, অসত্য দাবি করা যে তিনি আধ্যাত্মিক (মার্গফল) উচ্চস্তরে পৌঁছেছেন ।

এই চারটি গুরুতর অপরাধ (পারাজিকা) করলে তিনি আর ভিক্ষু থাকেন না। কিন্তু অন্যান্য ছোটখাটো বিধিনিষেধ  লঙ্ঘন করলে, তিনি এখনো ভিক্ষুই থাকেন।
যদি তিনি অন্য কোনো লঙ্ঘন করেন, তাহলে প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে তা শুদ্ধ করা সম্ভব।

তাই যদি কাউকে বলেন "সে প্রকৃত ভিক্ষু নয়," তাহলে আপনি আরিয়ুপবাদ অপরাধের অংশীদার হচ্ছেন, যা অত্যন্ত গুরুতর। যদি সেই ভিক্ষু আসলেই একজন আর্য ব্যক্তি হন, তাহলে পরিণাম আরও ভয়াবহ হবে। সুতরাং, সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত সর্বোচ্চ ১০টি শীল ও ৮-টি শীল (সদাচার) রক্ষা করা, ন্যূনতম ৫টি শীল মেনে চলা।

বর্তমানে, ৫টি শীল পালন করাও অনেকের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন ভিক্ষু যদিও কিছু শীল লঙ্ঘন করেন, তবুও তার অনেক শীল বজায় থাকে। সাধারণ মানুষের তুলনায় তার শীল বেশি।

এমনকি ভিক্ষুদের মধ্যেও একজন আরেকজনকে এইভাবে নিন্দা করা উচিত নয়। অনেকেই মনে করেন, "আমরা তো ভিক্ষু, আমাদের একে অপরের দোষ বলা দোষের কিছু নয়"। কিন্তু যদি কোনো ভিক্ষু "সে মার্গফল লাভ করেছেন" বলে, তাহলে কী হবে? তাই আরিয়ুপবাদ অপরাধ অত্যন্ত ভয়ংকর। এজন্য আমাদের সর্বদা সাবধান থাকতে হবে।

তথ্য: 
অভিধর্ম প্রশিক্ষণ,  দ্বিতীয় স্তর 
নন্দমালাভিৰংস মহাথের’র জীবনী এবং ধর্মদীপ গ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৫৭২

অনুবাদ: ভদন্ত বিবেকাজোতি
ফাগুন ১২ (চান লামনি) ২৫৬৮ সাসনৰস্স
২৫.৩.২০২৫

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement