Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

প্রজ্ঞা বচন Words of Wisdom বঙ্গানুবাদ: রতন জ্যোতি ভিক্ষু

প্রজ্ঞা বচন

Words of Wisdom

                                                 ভদন্ত প্রঞ্ঞানন্দ ভিক্ষু (থাইল্যণ্ড)

Ven. Pannayananda Bhikkhu

Translated from Thai into English:

Dr. Somseen Chanawangsa

প্রজ্ঞা বচন

০১। জীবনকে আলোকিত করার পাঁচটি বিষয়

      0 চিন্তা

      0 সুবাক্য

      0 সুকর্ম

      0 সৎসঙ্গ

      0 ভালো পরিবেশের সংসর্গ

০২। ভদন্ত পঞ্ঞানন্দ ভিক্ষুর ১১টি আশীর্বাদ বাণী

(ক) সচেতন থেকো, গতিশীল হও, উন্নতি করো।

(খ) কাজই জীবন, জীবনই কাজ এবং এভাবেই সুখ……..

(গ) সৈন্য দিয়ে জয় মানে মানুষের হৃদয় জয় করা নয়।

(ঘ) যে হেরে যায়, সে মূলত জয়ী।

(ঙ) সুখ, দুঃখ, ভাল এবং মন্দ মানুষ নিজের কৃত কর্মের দ্বারা আনে।

(চ) মানুষের পার্থক্য শারীরিক ও মানসিক উভয়ই। এটি হলো কর্মফল।

(ছ) যারা তাদের কৃতকর্ম সুচারুরূপে সম্পাদন করে, তারাই হলো ধর্মানুশীলনকারি।

(জ) ধর্ম হলো জীবনের পথ যেটি মানুষকে দুঃখ মুক্তি দেয়।

(ঝ) বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের সান্নিধ্যে আসা মানেই মনের অধিক সুখ ও শান্তি নিয়ে আসা।

(ঞ) প্রত্যেকটি কাঠ পেন্সিল রবার সংযুক্ত, যখনই ভুল করো, দ্রুত মুছে ফেলো।

(ট) ভুল করা মানুষের ধর্ম; মানুষকে “এটি আমার ভুল অর্থাৎ ভুল স্বীকার করা” শিক্ষানীতি গ্রহণ করা উচিত।

৩। যে বিষয়গুলো বৌদ্ধদের মনে রাখতে হবে

(ক) বৌদ্ধরা বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘকে নিজেদের আর্যশরণ হিসেবে শ্রদ্ধা করে।

(খ) বৌদ্ধরা কর্মফলে প্রগাঢ় বিশ্বাসী: “ভালো কর্ম ভালো ফল আনে, খারাপ কর্ম খারাপ ফল বয়ে আনে।“

(গ)  বৌদ্ধরা মানে বুদ্ধকে তাদের জীবন পথের পথ নির্দেশক, ধর্ম হলো জীবন পথ, আর ভিক্ষুসংঘ হলো আদর্শ প্রতীক যারা জীবনধারাকে নির্দেশনা দেয় আর ভিক্ষুসংঘের পদাঙ্ক সারাজীবন অনুসরণ করতে বলে।

(ঘ)বৌদ্ধরা এমন কিছুকে পূজা অর্চণা করবে না যা জাগতিক কুসংস্কারে মনে করে শক্তিশালী ও পবিত্র।

(ঙ)বৌদ্ধরা ভাগ্য গণনাকারীর কথায় তাদের জীবনের ভাগ্যকে বিশ্বাস করবে না। তৎ পরিবর্তে তারা বিশ্বাস করবে যে তারা নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ন্তা।

(চ) বৌদ্ধরা যখন সমস্যায়, তখন নিজেদের মধ্যেই দুঃখাক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান করবে, অযথা ভাগ্য গণনাকারীর কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই।

(ছ) বৌদ্ধরা সুযোগে বিশ্বাস করে না। সবকিছুই কার্যকারণের মাধ্যমে ঘটে। কোন কারণ ছাড়া কোন ফল দেয় না। প্রকৃত কারণ নিজের কৃতকর্মের মধ্যেই নিহিত।

(জ) বৌদ্ধদের দুর্ভাগ্য দূরীকরণের জন্য কোন পূজা অর্চনা নেই, যা ভাগ্য গণনাকারীরা করে। দুর্ভাগ্যকে দূরী করা যেতে পারে যদি তার কারণকে দূর করা যায় আর তখনই দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি।

(ঝ) বৌদ্ধদের জন্য কোন শুভক্ষণ বা মুহূর্ত নেই। যখন কোন কুশলকর্মকৃত হয়, সেই ক্ষণই শুভতে পরিণত হয়। যখন কোন অকুশলকৃত হয়, সেই মুহূর্ত পরিণত হয় অশুভ। শুভ কি অশুভ এটা সময়ের ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে কৃতকর্মের ওপর।

৪। ধর্ম ও জীবন

(ক) সবকিছুই প্রকৃতির অধীন।

(খ) প্রকৃতি নিরপেক্ষ স্বভাব, এটি সর্বদা যেভাবে চলে সেভাবেই চলতে থাকে।

(গ) এটি তাকে যেভাবে চলতে হবে শুধুমাত্র সেগুলোর জন্য সে প্রাকৃতিক।

(ঘ) যেভাবে আমরা আশা করি সেভাবে কিছুই ঘটে না।

(ঙ) আমাদের ইচ্ছেমত কোন কিছুকে নিজেদের মতো করে বাধ্য করা অসম্ভব। বুঝতে হবে যে এটি প্রাকৃতিকভাবেই সে পথে এগোবে।

(চ) সমস্ত কিছুই যৌগিক উপাদানে গঠিত এবং সারবস্তু ছাড়া। যখনই উপাদানগুলোর ঘাটতি দেবে, তারা আর বাঁচতে পারবে না।

(ছ) লাভ এবং অলাভ হাতে হাত রেখে এগিয়ে যায়, তাই আছে আর নাই এর জন্য প্রস্তুত থাকুন।

(জ) যখন আমাদের কিছু থাকে, আমাদের অবশ্যই ভাবা উচিত নয় যে এটি আমাদের সঙ্গে সারাজীবন থাকবে।

(ঝ) বুদ্ধ সবাইকে বলেছেন এভাবে চিন্তা করুন:”দিন আর রাতগুলো চলে যাচ্ছে, আমি কি করছি?” এই একটি বাক্যের চিন্তা সময়ের মূল্যকে গুরুত্ব দিতে আমাদেরকে ইঙ্গিত দিয়েছে। সময় শূন্যভাবে চলে যায় না, এটি আমাদের বয়স বাড়ায় আর মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। অতএব, আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে যে সময় খুবি গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যই একে সর্বোত্তম ব্যবহার করুন।

(ঞ) ধর্মসহ এই পৃথিবী সুন্দর শান্তময় জায়গা হবে যেখানে সকল প্রকার সমস্যা থাকবে না। ধর্ম তখনই সুফল দেবে যখন মানুষরা এর জীবন চর্চায় আনবে। চর্চা ছাড়া, তথাগত বুদ্ধের অমৃতময় ধর্মবাণী অর্থহীন হয়ে পড়বে।

(ট) বুদ্ধের শিক্ষা মশালের মতো যেটি মনকে আলোকিত করে। আমরা যেনো ধর্মকে সন্ধান করি জাগতিক সামগ্রী সন্ধানের সঙ্গে সঙ্গে এবং বেঁচে থাকতে আয় উপার্জনের সময়, আমাদের চাকুরি জীবনের সঙ্গে ধর্ম অনুশীলনও করতে হবে।

(ঠ) পৃথিবী শান্তিময় হবে যদি আমরা জানি, কিভাবে ক্ষমা করতে হয়। আমরা দুঃখ ও সমস্যায় আক্রান্ত হই ক্ষমাশীলতা না থাকার কারণে।

(ড) ধর্মের পথ ধরে যে জীবন চলে তা হয় শান্তিপূর্ণ।

     যে জীবন ধর্মচর্চাহীন, তা হয় সমস্যাবহূল ও চঞ্চল।

(ঢ) ধার্মিকতায় জীবনের মূল্য নিহিত।

(ণ) জীবনের বাধাসমূহগুলো অবশ্যই ধর্মের মাধ্যমে অতিক্রম করুন।

(ত) জীবনের মহৎ শিক্ষা হলো দুঃখ, আমাদের গড়ে তুলে, সামনে এগিয়ে নিতে এটি অনুঘটক হিসেবে কাজ সম্পাদন করে।

(থ) কঠোর শ্রমসাধ্য জীবন হলো সেই পথ যা মানুষের জীবনকে দৃঢ়ভাবে গড়ে তোলে।

(দ) কোন কঠোর শ্রম ও সংগ্রাম ছাড়া, কিভাবে একজন মানুষ শক্তিশালী হতে পারে।

(ধ) যেহেতু মানুষ হিসেবে জন্মলাভ করেছি, আমাদের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই অবধারিত। জন্মের সময় আমরা কিছুই সঙ্গে নিয়ে আসিনি। মৃত্যুর সময়ও আমরা কিছুই নিয়ে যেতে পারবো না। শুধুমাত্র পুণ্য আর পাপ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পুণ্য সুগতিতে আর পাপ দুর্গতিতে নিয়ে যায়। যারা নিজেকে ভালোবাসে, তারা পুণ্যকাজে নিয়োজিত রাখবে, যা ইহলোকে ও পরলোকে তাদের শরণ হবে।

(ন) শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের কর্ম যা আমাদেরকে ধার্মিক কিংবা পাপী করে।

(প) বৌদ্ধধর্ম না দুঃখবাদী ধর্ম, না সুখবাদী ধর্ম।

সুখবাদী দৃষ্টিভঙ্গী মোহান্ধতা, আর অবহেলাতে নিয়ে যাবে, আবার দুঃখবাদী দৃষ্টিভঙ্গী বিপদ ও আতঙ্কের কারণ হবে।

(ফ) বৌদ্ধধর্মে প্রচুর বাহ্যিক আবরণে ভরপুর। বুদ্ধ এগুলো প্রচার করেনি, কিন্তু মানুষরাই এগুলোকে একটির ওপর অন্যটি রেখে ভরপুর করেছে। বুদ্ধ বলেছেন এরূপ: “যে আমার ধর্মকে দেখে সে বুদ্ধকে দেখে। যে বুদ্ধকে দেখে, সে ধর্মকে দেখে। যে ধর্মকে লাভ করেছে, সে বুদ্ধকে লাভ করেছে।“ বাইরের সেই আবরণগুলোকে ফেলে দিন এবং শুধু সারবস্তু মনের মধ্যে রাখুন, এগুলোকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করুন যাতে করে জন্মান্তরের আবর্তন থেকে বের হয়ে আসতে পারেন।

৫। শেখা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা

(ক) পৃথিবীতে প্রচুর শেখার যোগ্য বিষয় রয়েছে। প্রাথমিক ভুল শেখার প্রথম পাঠ। মনে রাখবেন এটি আর ভুলের পুনরাবৃত্তি করবেন না।

(খ) জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সময়ের লাভজনক সদ্ব্যবহার করুন এবং অর্জিত জ্ঞান মস্তকে ধারণ করুন।

(গ) জ্ঞানার্জনের জন্য নিজেকে সচেষ্ঠ রাখা মানুষের জন্য খুবি জরুরি।

(ঘ) যতক্ষণ পর্যন্ত গভীর পরীক্ষা-নীরিক্ষা এবং নিজে সঠিক অনুধাবন না করেন; ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছুকে বিশ্বাস করবেন না।

(ঙ) আপনি কতো কিছু জানেন এটা কোন বিষয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি নিজেকে জানতে ব্যর্থ হন, এটি কখনো আপনার অজানা।

(চ) একসময় আমরা জেনেছি ও বুঝেছি যে জীবন আশীর্বাদপূর্ণ।

(ছ) যেখানে ন্যায়, সেখানে উন্নতি। যেখানে অন্যায়, সেখানে অবনতি।

(জ) একসময় আমরা মন্দ থেকে ভালো জানি এবং উন্নতি থেকে অবনতি। যখন মনে কোন চিন্তা উৎপন্ন হয়, আমরা সেই জ্ঞানকে এটি কি বুঝতে ছাকনির মতো নিয়োজিত করি।

(ঝ) যদি একটি কর্মের মূল একাগ্রচিত্তে ও প্রজ্ঞায় হয়, ইহার সুফল আসবে।

(ঞ) ধর্ম অধ্যায়ন হলো একটি হাতিয়ার, যা আমাদের জীবনকে সুরক্ষা দেবে, জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান দেবে।

(ট) আমাদের জীবনে যা কিছুই ঘটুক, আমাদেরকে একাগ্রতা আর প্রজ্ঞার মাধ্যমে সংগ্রাম করতে হবে। কখনো চিন্তা করবেন না এগুলো থেকে পালিয়ে যেতে।

(ঠ) ভুল করা মানুষের খুবি স্বাভাবিক বিষয় অথবা ক্রটি বিচ্যুতিও হয় কখনো কখনো, যতক্ষণ পর্যন্ত না একাগ্রচিত্তে ও প্রজ্ঞায় বিভূষিত না হয়।

(ড) শুধু বয়সে বেড়ে ওঠো না, সঙ্গে প্রজ্ঞায় বেড়ে ওঠো।

(ঢ) জ্ঞান অর্জিত বই থেকে, কিন্তু প্রজ্ঞা অর্জিত হয় অভিজ্ঞতা থেকে।

(ণ) প্রজ্ঞা উদিত হবে যদি আপনি ধর্মানুশীলন করেন।

(ত) যতক্ষণ পর্যন্ত প্রজ্ঞা লাভ করবো না, আমরা দুঃখ ভোগ করবো ততক্ষণ।

(থ) অনুসন্ধানশীল চিন্তার দ্বারা মুক্তি প্রভাবিত হয়।

৬। নিজেকে ও অপরকে

(ক) আমাদের সুখ আমাদেরই কৃত, আমাদের দুঃখ আমাদেরই কৃত।

(খ) সর্বদা নিজেকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখো, নিজেকে সতর্ক করো, এবং নিজেকে শুদ্ধ করো।

(গ) সর্বদা নিজেকে উপলব্ধি আর সতেজ করো।

(ঘ) প্রতিটি মুহূর্তে নিজে নিজে মনে করো কি বিদূরিত করেছো, কি বর্জন করেছো।

(ঙ) নিজের মধ্যে থেকেই ফলাফল অর্জন করো, বাইরের কোন উৎসগুলো থেকে নয়।

(চ) জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু অন্য কেউ নয়, সে নিজেই।

(ছ) আমরা মানুষরা একাকী থাকতে পারি না। সাধারণ জীবন যাপনের জন্য, সুখী জীবনের জন্য, আমাদের একসঙ্গে বসবাস করতে হবে, পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে, পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে। তাই, আমাদের নিজেদেরকে অবশ্যই একে অপরকে দানের শিক্ষা নিতে হবে এবং একজন আরেকজনের সুবিধা যেনো না নিই।

(জ) আমরা একে অপরকে ধ্বংস করতে জন্ম নেয়নি, কিন্তু আমরা একে অপরকে সাহায্য করতে জন্ম নিয়েছি, উৎপাদনশীল, সুখ ও সমৃদ্ধি আনতে কারণ আমরা সবাই এগুলোই আশা করি।

(ঝ) বুদ্ধ এভাবে শিক্ষা দেয়: “কখনো হিংসা দ্বারা হিংসা দূর হয় না, তবে হিংসা দূর হবে শুধুমাত্র অহিংসার দ্বারা।“ অতএব, আমাদের রাগ, হিংসা, বিদ্বেষ পরায়নতা এবং একে অপরকে ভেদাভেদ পরিহার করতে হবে।

তৎ পরিবর্তে, আমাদের বুঝতে হবে সমস্ত মানুষ সঙ্গি হিসেবে জন্মেছে এবং দুঃখের একই সমস্যা শেয়ার করছে। আমাদের সবাইকে বংশধরের মতো সহাবস্থান করা উচিত এবং সহযোগিতার জন্য একে অপরের সঙ্গে সুবন্ধন গড়ে তোলা যাতে আমরা সবাই কোন সমস্যা ছাড়া সুখময় জীবনযাপন করতে পারি।

(ঞ) যদি তুমি জানো যে দুঃখ তোমার পছন্দ নয়, তুমি অবশ্যই কখনো এটি অন্যের ওপর প্রদান করবে না। অপরের ওপর দিয়ে নিজের সুখ কখনো কামনা করো না, তবে এমনভাবে করো, যাতে অন্যরাও সুখী হয়। একই সময়ে, সাধারণ সব মানুষের কল্যাণ ও সুখের জন্য সর্বদা নিজেকে আত্মত্যাগের পথ খুঁজো।

(ট) যখন আমরা কিছু চায়, অন্যরাও এটি চায়। যখন আমরা সুখ চায়, আমাদের অবশ্যই অন্যদের সাহায্য করতে হবে, তাদের সুখী করতে।

(ঠ) আপনার কাছের মানুষদের সুখকে ভাবুন নিজের বলে।

(ড) সুখ সন্ধানে শুধুমাত্র আমাদের সুখের চিন্তা করা উচিত নয়, আমাদের আশে পাশের মানুষদের জন্য চিন্তা করতে হবে। যাতে উভয়ই আমরা ও তাহারা একসঙ্গে সুখী হতে পারি।

(ঢ) যখন আমরা সুখী আমাদের উচিত অন্যদেরকেও সুখী করা। যখন আমরা আরাম আয়েশী, আমাদের উচিত অন্যদেরকেও আরাম আয়েশী করা।

(ণ) অপরের দোষ খোঁজা মানে নিজের দোষ বাড়িয়ে তোলা।

(ত) নিজেকে নিজে না দেখলে, আপনি কখনো নিজের দোষগুলো খুঁজে পাবেন না।

(থ) বুদ্ধের শিক্ষা দেয় একজন মানুষ নিজেকে নিজে জানতে এবং কি ঘটছে নিজের মধ্যে তা পর্যবেক্ষণ করা।

(দ) আমাদেরকে মানব চরিত্রের অন্ধকার দিকগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে যেগুলো সবসময় আমাদেরকে বিচলিত করে।

(ধ) যিনি ভালো জীবনযাপন করেন তাকে অবশ্যই বিজয়োচিত বাস করতে হবে, যিনি মানব চরিত্রের অন্ধকার দিককে জয় করছেন।

(ন) “আমি শান্ত মেজাজধারী হবো। আমি কারো সঙ্গে রাগান্বিত হবো না; আমি মানব চরিত্রের নীচু দিকের কাছে কখনো নতি স্বীকার করবো না। আমি সবসময় নিজেকে ভালোর দিকে রাখবো। আমি কখনো নিজেকে একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি হতে কাউকে সুযোগ দেবো না।“ এটি হলো যাদুকরি মন্ত্র যা সর্বদা, মনে জন্ম দিতে হবে। বিশেষ করে, যখন কোন ঘটনার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়, তাকে অবশ্যই বারবার এই মন্ত্রটি নিজে নিজে বলতে হবে।

(প) সত্যিকারভাবে ও সুনির্দিষ্টরূপে যা জীবনে নির্ধারণ করবে এবং জীবনে প্রতিফলন ঘটাবে আর এগুলোই একান্ত নিজের।

(ফ) প্রজ্ঞা উৎপত্তি হয় তখন, যখন কেউ নিজেকে জানতে পারে।

(ব) নিজেকে রক্ষা করতে প্রজ্ঞা থাকা মানে মনের মধ্যে বুদ্ধকে রাখা।

(ভ) কারো জীবনের সবচেয়ে শোচনীয় বিষয় হলো নিজেকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া।

(ম) সবার দায়িত্ব হলো নিজেদের এবং অপরের যা কিছু মন্দ তা নির্মূল করা।

(য) মানুষকে ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহ দান একটি মহৎ গুণ। এটির নীতি হলো: নিজের জন্য ভালো কাজ কর, অন্যকে ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহ যোগাও। এবং যারা ভালো কাজ করে, তাদের নৈতিক সমর্থন দাও যাতে করে তারা আরো ভালো কিছু করতে পারে।

(র) আপনারা সবাই ঘুম ও মোহান্ধ থেকে জেগে উঠুন। জাগুন, যা কিছু আপনার ও অন্যদের জন্য কল্যাণকর, তা সম্পাদন করুন নির্ভুলভাবে। বুদ্ধ দ্বারা প্রদর্শিত পথ ধরে এগিয়ে যেতে একে অন্যকে উৎসাহ উদ্দীপনা প্রদান করুন। কখনো থামবেন না, সামনে এগিয়ে যান যতক্ষণ না আপনার আকাঙ্খিত গন্তব্য দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ না হয়।

৭। দান ও মৈত্রী

 (ক) দান হলো সুখের উৎস।

       অপরের সুযোগ সুবিধা আত্মসাৎ করা হলো দুঃখ-দুর্দশার উৎস।

(খ) সুখ দূরে নয়, যদি আমরা একে অন্যের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু আদান প্রদান করি।

(গ) দান করা মানে পাওয়া, দান না দেয়া মানে কিছু না পাওয়া।

(ঘ) যতই আপনি দান করবেন, ততই আপনি পাবেন।

(ঙ) সবাইকে দান দিতে অবশ্যই কাজ করতে হবে, কিছু পেতে বা অর্জন করতে না।

(চ) চিন্তা করুন না নিতে, বরং দান করতে।

(ছ) নেয়ার চিন্তা করার চেয়ে দেয়ার চিন্তা করার মন অনেক সহজ সরল।

(জ) মৈত্রীময় ভালোবাসা আর বন্ধুত্বপূর্ণতা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

(ঝ) মৈত্রীর কারণে পৃথিবী এখনো সজীব। পৃথিবীটা ধ্বংস হবে হিংসার কারণে।

(ঞ) অপরকে ধ্বংস করার চিন্তা দুঃখকে নিয়ে আসা।

       অপরের প্রতি দয়ার্দ্র চিন্তা সুখকে নিয়ে আসা।

(ট) যাদের হৃদয় দয়া ও করুণায় পরিপূর্ণ তাদের কোন শত্রু থাকে না।

(ঠ) দয়ার্দ্র হৃদয়ের মানুষ সবসময় সুখী, ঘুমে থাকুক কিংবা জাগরণে।

(ড) যারা শিক্ষক তারা কখনো মারা যান না। তারা সবসময় স্মৃতিতে বেঁচে থাকেন।

৮। দুঃখ ও সুখ

(ক) বৌদ্ধধর্মের মৌলিক শিক্ষা হলো প্রত্যেককে সম্যকজ্ঞান সম্পন্ন হওয়া। বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া, নিজেকে বিশ্বাস করা, নিজের এবং অপরের মঙ্গল সাধিত হয় তেমন কাজ করা, কুসংস্কারে বিশ্বাসী না হওয়া যা উদ্ভট ও যুক্তিহীন। সুখ, দুঃখ, ভালো এবং মন্দ নিজস্ব কর্ম দ্বারাইই সৃষ্টি হয়। নিজস্ব কর্ম ছাড়া কেউ সুখ ও দুঃখকে যাদুকরীভাবে দেখাতে পারে না।

(খ) একজন মানুষ দুঃখ-কষ্টে ভোগে কারণ সে জানে না কিভাবে চিন্তা করতে হয়। যদি সে জানে, সঠিকরূপে চিন্তা করতে হয়, তাহলে সে সুখ ভোগ করবে।

(গ) শুধুমাত্র যখন কেউ দুঃখকে দেখে, তখনই সে সুখী হতে পারে।

(ঘ) যতই আপনি কোন কিছুকে আঁকড়ে ধরে থাকবেন, ততই আপনি কখনো এর থেকে নিবৃত্তির চিন্তা করবেন না।

(ঙ) যদি আমরা সুখের মধ্যে দুর্দশা দেখতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমরা ইহার মোহগ্রস্থতায় জড়িয়ে পড়বো।

(চ) দুঃখকে আপনার শিক্ষক মনে করুন, ইহাকে আপনার পাঠ হিসেবে নিন।

(ছ) ক্ষণিক সুখ সেই সুখ যা বস্তুসামগ্রী থেকে উদ্ভূত।

(জ) যে সুখ বস্তুসামগ্রীর ওপর নির্ভর করে তা অনিত্য এবং সহজেই পরিবর্তনশীল।

ধর্মানুশীলনই জীবনে প্রকৃত সুখ আনে।

(ঝ) প্রকৃত সুখ লোভনীয় ও উদ্দীপক বস্তুর ওপর নির্ভর করে না।

(ঞ) সংযমতার মধ্যেই সুখ নিহিত। অতিমাত্রা দুর্দশার কারণ হতে পারে এবং ঘাটতি ঘটাতে পারে। তাই আমরা যা কিছু করি, তা যেনো সংযমতার মধ্যেই করি।

(ট) সুখ কি? ইহা দুঃখকে কমায়।

(ঠ) প্রকৃত সুখ হলো দুঃখের নিঃশেষ।

(ড) প্রশান্তি হলো মনের সুখ।

৯। মানব মন ও আসব

(ক)  মন্দ চামড়ার ওপর এমন কিছু নয় যা মন্ত্রের জলের স্নানে পরিস্কার হয়ে যাবে। এমন কি গঙ্গার জলে শুধুমাত্র বাইরের ময়লা পরিস্কার করতে পারে। মন্দ হলো মনের বিমূর্ত কিছু, যা ধুয়ে মুছে ফেলা যাবে না যতোবারই স্নান করুন না কেন। যদি আপনি এটি পরিস্কার চান, অন্য এক ধরনের জলের দরকার-এটি শীল, সমাধি আর প্রজ্ঞার সমন্বয়ে গঠিত, যেটি অসামান্য ধরনের জল যা মন্দকে ধুয়ে মুছে ফেলতে পারে।

(খ) একজন ব্যক্তি দুঃখ বা সমস্যা থেকে রেহাই পাবে না, যেহেতু তার মন লাভ আর যশে মোড়ানো যাতে সে মোহগ্রস্থ।

(গ) সতর্ক থাকুন, আপনার মন যখন বাহ্যিক বস্তুর সংস্পর্শে এলেও উল্লসিত হবেন না। আবার বিষন্নও হবেন না। যারা মনকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখেন এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাদের শরীরও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে, এবং তারা দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য উপভোগ করবে।

(ঘ) ধর্ম মনকে সুশোভিত করে যে একে সাজায় এবং ঠিকভাবে রাখে। ধর্ম ছাড়া একজন মানুষ মূল্যহীন। মানুষের মূল্য তার সম্পদ কিংবা গৌরবের মধ্যে নিহিত থাকে না, যা পৃথিবীর মানুষের দ্বারা প্রশংসিত। কিন্তু মনের মহত্বতায় মানুষের মূল্য নিহিত।। তাই, আপনার উচিত প্রতিটি মুহূর্ত মনের উৎকর্ষ সাধনের দ্বারা আপনার নিজস্ব মূল্যকে বৃদ্ধি করা।

(ঙ) সমস্ত মন্দকে ছাড়িয়ে আপনার মনকে উন্নত করুন, এবং তারপর অন্যকে সাহায্য করতে এগিয়ে যান।

(চ) সবচেয়ে পবিত্র, সবচেয়ে চমৎকার বাণী সৃষ্টি করা হলো ধর্মবাণী, যা আমাদের হৃদয়ে থাকে, আমাদের শরীরের সঙ্গে থাকে, যেমন ছোটখাটো আলমিরা থাকে ঘরের মধ্যে এবং পাথরে যেমন শিলালিপি থাকে। আমাদের মনের সঙ্গেও ধর্মবাণীগুলো থাকে যাতে করে এগুলো মনের ওপর রেখাপাত করতে পারে।

(ছ) মনের মধ্যেই সবকিছু। মন প্রত্যেক কিছুকে সিদ্ধ করে।

(জ) মানুষের মনের উন্নতি ছাড়া যা কিছু উন্নতি সাধিত হউক না কেন তা ফলপ্রসূ হতে পারে না।

(ঝ) প্রকৃত মানুষ হতে হলে তাকে অবশ্যই আধ্যাত্মিক মূল্যবোধকে নির্মাণ করতে হবে।

(ঞ) মানসিক আসবাক্রান্ত হয়ে কোন কিছু করো না, যেহেতু এরা কাউকে দয়া দেখায় না-এরা কখনো ভালো কিছু করে না, এরা শুধু ধ্বংস করে।

(ট) প্রকৃত সুখ হলো যার মন শান্ত আর মানসিক আসব শূন্য।

(ঠ) আসব সমূহকে আপনাকেই হত্যা করতে হবে যা আপনার নিজের মধ্যেই। হত্যা করুন তাদের-হত্যা করুন আপনার লোভকে, আপনার দ্বেষকে, আপনার মোহকে, এবং আর তখনই আপনি সুখী হবেন।

(ড) মানসিক আসব সমূহকে দূর করুন যেভাবে সর্প নিজের খোলসকে ছাড়িয়ে ফেলে।

(ঢ) বৌদ্ধ ধর্মের প্রকৃত লক্ষ্য হলো প্রকৃতির সমস্ত কিছুকে পরিপূর্ণ ও গভীর জ্ঞানের মাধ্যমে বোঝা। যখনই আমরা উপলব্ধি করবো যে শারীরিকভাবে বৃদ্ধ হবো এবং এক সময় মৃত্যুমুখে পতিত হবো স্বাভাবিক নিয়মে। যৌবন আর সুবল দেহের মোহান্ধতা মারা যাবে, এবং আমাদের মন এক সময় আসক্তি থেকে মুক্তি পাবে। এই মুক্তিই উচ্চমার্গীয়।

১০। দুঃখ মুক্তির পথ

(ক) যখন দুঃখ উৎপত্তি হয়, ভাববেন যে এখানে অবশ্যই কারণ আছে।

(খ) দুঃখের কারণ নিজের মধ্যে, বাহ্যিক কোথাও থেকে নয়।

(গ) বাহিরের যা হোক এটি বস্তু অথবা ব্যক্তি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি নিজেই, অন্য কেউ বা কিছু নয়।

(ঘ) কারণ খুঁজতে, আপনার মনকে শান্ত করতে হবে। আপনার প্রশান্ত মনের জন্য নির্জন জায়গায় যান।

(ঙ) বৌদ্ধধর্মে বন্দনা আর ভাবনা কারো কাছ থেকে সাহায্যের জন্য নয়, এটি শুধু শান্তমনের জন্য আশা করা।

(চ) যখন মন শান্ত হবে, আপনার সমস্যাজনিত দুঃখকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখুন, গভীরভাবে পারিপার্শ্বিকতাকে দেখুন, যতক্ষণ না পর্যন্ত দেখবেন পরিস্কারভাবে কী আসলে দুঃখের কারণ।

(ছ) আপনি যখন কারণ আবিষ্কার করবেন, তার থেকে মুক্তি পেতে দৃঢ় সংকল্প করুন। নিজেকে দুর্বল ব্যক্তি হতে দেবেন না। কখনো মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যের নিম্ন প্রকৃতির কাছে নতি স্বীকার করবেন না।

(জ) যদি আপনি এভাবে ধর্মানুশীলন করেন, দুঃখ থেকে আপনার মুক্তি আশা করতে পারেন।

সাধু! সাধু!! সাধু!!!

বঙ্গানুবাদ: রতন জ্যোতি ভিক্ষু

শ্রী পঞ্ঞাসিহে ভাবনা কেন্দ্র,

পামডেল, ক্যালিফোর্নিয়া।

১১ জুন ২০১৫।

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement