পরম পূজ্য বনভান্তে মহোদয়ের দিব্যজ্ঞান
পরম
পূজ্য বনভান্তেকে কে না চেনেন? সবাই জানেন তাঁর ধ্যানসাধনার কথা, লব্ধ জ্ঞানের কথা।
তাঁর নাম ভিক্ষু সাধনানন্দ (মহাস্থবির) হলেও বহু বছর গভীর বনে ধ্যানসাধনা করার কারণে
তিনি বনভান্তে হিসেবেই দেশে-বিদেশে সুপরিচিত। তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয় ও পরম পূজনীয়। কঠোর
ধ্যানসাধনার ফলে তিনি যে দিব্য (অলৌকিক)-জ্ঞানের অধিকারী হয়েছিলেন তার সাক্ষপ্রমাণ
তিনি তার কথায় ও আচরণে দেখিয়েছিলেন। যারা মহাপুরুষ বনভান্তের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে এসেছিলেন
তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ অত্যন্ত আশ্চর্যজন কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, যেখানে তাঁর দিব্যজ্ঞানের
উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তেমনই একটি অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ঘটনা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা
করছি।
ফেব্রুয়ারি
মাস, ১৯৮৪ সাল। একদিন পরম পূজ্য বনভান্তে বিহারে উপস্থিত উপাসক-উপাসিকা তথা ভক্তদের
উদ্দেশ্যে ধরমদেশনা দিচ্ছিলেন। হটাৎ তাঁর কি যে মনে পড়ল। তিনি ধর্মদেশনার মাঝখানে উপেন্দ্র
লাল চাঙমা নামে এক উপাসককে একটি কাজের নির্দেশ
দিলেন। তিনি জুরাছড়ির মিতিঙাছড়ি ছড়ার বুকে পড়ে থাকা সেই দুটি পাথরের সন্ধান করতে বললেন,
যে পাথর দুটির ওপর বসে বহুকাল আগে মুনিষিরা ধ্যান করতেন। বনভান্তের কথা শুনে উপেন্দ্র
লাল-সহ উপস্থিত সবাই অবাক হলেন, কারণ তাঁরা জানতেন বনভান্তে মিতিঙাছড়ি কেন জুরাছড়ির
কোথাও কোনোদিন পা পর্যন্ত রাখেননি। উল্লেখ্য, উপেন্দ্র লাল ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা।
অতঃপর পূজ্য বনভান্তের নির্দেশে তিনি নিজ গ্রাম মিতিঙাছড়ির ছড়ায় ফিরে এসে উক্ত পাথর
দুটির অনুসন্ধানে লেগে গেলেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তিনি মিতিঙাছড়ি ছড়ার বুকে
সেরকম কোনো পাথর খুঁজে পেলেন না। খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি পরম পূজ্য বনভান্তেকে জানালে
তিনি আবারও খুঁজতে বললেন এবং অবশ্যই আছে বলে আশ্বস্ত করলেন। বনভান্তের নির্দেশে দ্বিতীয়বার
পাথর দুটি খুঁজতে গেলে উপেন্দ্র লাল মাটির নিচে পড়ে থাকা অবস্থায় একপাশে আংশিক ক্ষয়ে
যাওয়া দুটি পাথর দেখতে পেলেন। ওই দুটি পাথরই কাঙ্ক্ষিত পাথরদ্বয় মনে করে রাজবন বিহারে
গিয়ে বিষয়টি পরম পূজ্য বনভান্তেকে জানালেন। বনভান্তে বিস্তারিত না শুনেই ওই দুটি কাঙ্ক্ষিত
পাথর নয় বলে জানালেন এবং নিরলস চেষ্টা করলে অবশ্যই আসল পাথর দুটি খুঁজে পাওয়া যাবে
বলে জানালেন। পূজ্য বনভান্তে কতৃক পুনরায় আশ্বস্ত হয়ে উপেন্দ্র লাল একজন সহকারী নিয়ে
গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পুনরায় পাথরের খোঁজে মনোনিবেশ করলেন। তিনি ছড়ার বুকের মাটি
খুঁড়ে খুঁড়ে পাথর দুটি খুঁজতে লাগলেন এবং একপর্যায়ে মাটি খুঁড়ে তুলে আনা পাথর দুটির
গায়ে দীর্ঘকাল পদ্মাসনে বসে থাকার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়চিহ্ন লক্ষ করলেন। বিষয়টি বনভান্তেকে
জানানো হলে তিনি বিস্তারিত না শুনেই ওই দুটি পাথরই কাঙ্ক্ষিত পাথরদ্বয় বলে নিশ্চিত
করেন। পরম পূজ্য বনভান্তে এমন দৃঢ়তার সঙ্গে নির্দিষ্ট জায়গার নাম উল্লেখ করে বহুকাল
আগের বিশেষ দুটি পাথরের সন্ধান বলে দেওয়ার বিষয়টি জানার পর ধর্মপ্রাণ মানুষমাত্রেরই
মনে হতে পারে যে, আসলে স্বয়ং বনভান্তেই ছিলেন পূর্বের কোনো এক জন্মে পাথরে বসে ধ্যানমগ্ন
থাকা সেই মুনিঋষি।
আর
সেই পুণ্যস্মৃতি বহনকারী পাথর দুটিকে একনজরে দেখতে এবং শ্রদ্ধা ও বন্দনা জানাতে দলে
দলে মানুষ ছুটে গিয়েছিলেন মিতিঙাছড়িতে। সেখানে পাথর দুটিকে দুই-তিন মাস রাখার পর নিয়ে
আসা হয় রাজবন বিহারে। এখন রাজবন বিহারের হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থী বহুকাল
আগে (পদ্মাসনে বসে) ধ্যানসাধনায় মুনিঋষিদের ব্যবহৃত সেই পুণ্যস্মৃতি বহনকারী পাথর দুটি
দেখে চোখ জুড়িয়ে নেন।
ভদন্ত
বোধিপাল মহাস্থবির
ভদন্ত
জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির
রচনায়
– পুলক রায়
উপদেষ্টা,
উপাসক-উপাসিকা পরিষদ, রাজবন বিহার, রাঙামাটি
0 Comments