বুদ্ধের হৃদয়
Heart of a Buddha
ভদন্ত চিন কুং (Master Chin Kung), তাইওয়ান।
০১। আমরা হলাম যা আমরা চিন্তা করি।
আমাদের সবকিছু যা আমাদের চিন্তায় উৎপত্তি হয়।
আমাদের চিন্তার মাধ্যমেই আমরা পৃথিবী গড়ি।
০২। অতীত নিয়ে বসবাস করো না।
ভবিষ্যত নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনো না।
বর্তমান মুহূর্তে চিত্তকে নিবিষ্ট করো।
০৩। যদিও প্রত্যেকে ভালো কাজ করে না,
আমি একা ভালো কাজ করবো।
যদিও প্রত্যেকে ভুল কাজ করছে,
আমি একা করবো না ভুল।
০৪। জল যেমন ভালো ও মন্দ উভয়কেই ঠাণ্ডা প্রদান করে,
এবং সকল মল ও ময়লা ধুয়ে ফেলে,
তদ্রূপ আপনি মৈত্রীচিত্ত সঞ্চার করুন, আপনার বন্ধু ও শত্রুর
জন্য।
এবং মৈত্রী পারমীতে পৌঁছতে পারলেই, আপনি বোধিজ্ঞান প্রাপ্ত
হবেন।
০৫। সবকিছুই নশ্বর,
কিছুই পরিবর্তন ছাড়া নেই।
০৬। সন্দেহ অভ্যাসের চেয়ে ভয়ংকর আর কিছু নেই।
সন্দেহ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে।
এটি বিষ যা বন্ধুত্বকে নষ্ট করে দেয়
আর
ভেঙ্গে দেয় আনন্দময় সম্পর্ক।
এটি একটি কাঁটা যেটি জ্বালাতন করে ও আঘাত দেয়।
এটি একটি তলোয়ার যেটি হত্যা করে।
০৭। নিঃস্বার্থ পরায়নতার চেয়ে প্রশংসনীয় আর কিছুই নেই।
নিঃস্বার্থ পরায়নতা মানুষকে একতাবদ্ধ করে।
এটি মহৌষধ যা অপরিচিতকেও সম্মিলিত করে
এবং সব পরিবারকে একত্র করে।
নিজকে ভালোবাসার চেয়ে অপরকে ভালোবাসা উচ্চতর। এটাই আমাদের
একমাত্র আশা।
০৮। বন্ধুত্বের নিয়ম মানে পারস্পরিক সহমর্মিতা।
একজন অন্যজনের যা অভাব তা যোগান দেয়,
আর অন্যজনের উপকারের চেষ্ঠা থাকে,
সর্বদা বন্ধুত্বপূ্র্ণ আর সহৃদয় শব্দের ব্যবহারে।
০৯। যদি অন্যকে দেখা শোনা করতে ব্যর্থ হই,
যখন তাদের সাহায্যের প্রয়োজন,
কে আমাদের দেখা শোনা করবে?
নিরপেক্ষতা বয়ে আনে নিরপেক্ষতা,
মৈত্রী বয়ে আনে মৈত্রী।
১০। যদি একজন মানুষের মন পূত পবিত্র হয়,
তাঁর চারিপার্শ্বে পূত পবিত্রতায় ভরে যাবে।
১১। সহস্র মোমবাতি একটি মাত্র মোমবাতি থেকে প্রজ্বলিত করা
যায়,
এবং মোমবাতির জীবন স্বল্পদৈর্ঘ্য হবে না,
তদ্রুপ সুখ/সহভাগিতায় তা কখনো কমে না।
১২। বৃ্ষ্টি পড়ে,
বাতাস বয়,
ফুল ফুঠে,
পাতারা ঘন আর মলিন হয়;
এসব প্রপঞ্চ কার্য আর কারণে সুসম্পর্কিত,
পরিবর্তন হয় তদ্বারা,
এবং নিঃশেষও হয়, যেহেতু কার্য ও কারণসমূহ পরিবর্তন ঘটে।
১৩। শত্রুতার দ্বারা শত্রুতা কখনো শেষ হয় না,
তবে শেষ হয় মৈত্রী দিয়ে।
১৪। আমাদের সবকিছু যা আমরা চিন্তা করেছি তার ফলাফল;
এটি আমাদের চিন্তা ভাবনার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
যদি একজন মানুষ পবিত্র মনে কথা বা কাজ করে,
আনন্দ তাকে অনুসরণ করবে,
ঠিক ছায়া যেমন তাকে ছাড়ে না।
১৫। মানুষ বিমুক্তি খুঁজে পায় দর্শন আলোয়:
তার চিন্তাগুলো শান্তি,
তার বাক্যগুলো শান্তি,
তার কর্মগুলো শান্তি।
১৬। সত্য দান সব দানকে ছড়িয়ে যায়।
সত্যের আনন্দ সব আনন্দকে ছড়িয়ে যায়।
সত্যের স্বাদ সব মিষ্টি স্বাদকে ছড়িয়ে যায়।
তৃঞ্চা ক্ষয়ই সমস্ত দুঃখের বিনাশ।
১৭। বিশুদ্ধ প্রজ্ঞা,
নির্মল প্রশান্তি,
উদার করুণার উৎপত্তি
আমাদের ভালোবাসা,
আমাদের সহৃদয়তা,
আমাদের শুদ্ধ চেতনা থেকে।
১৮। বিভক্তিতে পৃথিবীর অফুরন্ত দুঃখ,
আর
সম্মেলনে পৃথিবীর সত্যের দৃঢ়তা।
১৯। অনিত্য,
অনাত্ম,
নির্বাণ।
২০। প্রপঞ্চ হৃদয়ের দ্বারাই প্রবর্তিত হয়,
হৃদয়ের দ্বারাই পরিচালিত হয়,
হৃদয়ের দ্বারাই তৈরী হয়,,
যদি কেউ খারাপ মনে কথা বা কর্ম করে,
তখনই দুঃখ তাকে অনুসরণ করবে---
রথের চাকা যেমন ষাড়কে সামনের দিকে ঠেলে।
২১। প্রপঞ্চ হৃদয়ের দ্বারাই প্রবর্তিত হয়,
হৃদয়ের দ্বারাই পরিচালিত হয়,
হৃদয়ের দ্বারাই তৈরী হয়,,
যদি কেউ শান্তি মনে,
উদার মনে কথা বা কর্ম করে,
তখনই ছায়া যেমন কখনো ছাড়ে না,
সুখও সেভাবে তাকে অনুসরণ করবে।
২২। আমাদের চিত্তে এরি মধ্যে করুণা,
বিশুদ্ধ প্রজ্ঞা,
অমল আনন্দে ভরপুর,
আমাদের শুধু প্রয়োজন মনকে ঠিক করা;
যাতে এগুলো আমাদের গভীর চিত্ত থেকে উদ্ভাষিত হয়।
২৩। নীরবতার উন্নয়ন সাধন করো,
মনের উন্নয়ন সাধন করো,
যখন কেউ প্রশংসা করে,
এবং
অন্য কেউ নিন্দা করে,
মনকে স্থির রেখো,
হিংসা ও গর্ববোধকে মুছে ফেলো,
শান্তভাবে এগিয়ে যাও নিজ পথে……….
২৪। সেই সামর্থ্যবান
যে চিন্তা করতে পারে
সে সামর্থ্য।
২৫। তুমি নিজে নিজেই তোমার ভালোবাসা আর স্নেহময়তায় পরিপূর্ণ,
যে কারো চেয়ে তোমার বেশি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে।
২৬। দেখো,
অন্যের রুঢ়তার ওপর নয়,
অন্যরা কি করছে
বা কি করেনি তারা, তার ওপর নয়,
দেখো, তুমি নিজে কি করেছো এবং কি করোনি।
২৭। যারা ধর্মচর্চা করে,
তারা অপ্রমাদের সঙ্গে বসবাস করে,
আলোকিত জ্ঞানে মুক্তি পায়।
অকুশল তাদেরকে অনুসরণ করতে পারে না।
২৮। একটা ছোট্ট পাথরকণাকে যেমন বাতাসে নাড়াতে পারে না,
ঠিক তেমনি প্রশংসা ও নিন্দায় জ্ঞানীরা অবিচল থাকে।
২৯। সেচকারি পানিকে চালিত করে।
ছুতোর কাঠকে আকার দেয়,
জ্ঞানীও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৩০। পুণ্যকর্ম ছাড়া থেকো না।
বিন্দু বিন্দু জল পড়ে একটি কলস যেমন জলে পরিপূর্ণ হয়;
অল্প অল্প পুণ্য অর্জনের মাধ্যমে একজন প্রজ্ঞাবান নিজেকে
পরিপূর্ণ করে।
৩১। সকল অকুশল কর্ম বর্জন কর,
সকল কুশল কর্ম গ্রহণ কর,
কর চিত্তকে বিশুদ্ধ।
৩২। যখন চুপচাপ বসে থেকো,
নিজের ভুলগুলো খোঁজ।
যখন বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলো-
কখনো অপরের শুদ্ধ এবং অশুদ্ধ আলোচনা করো না।
৩৩। জীবন হচ্ছে প্রপঞ্চ,
স্বপ্ন,
বুদবুদ,
ছায়া।
কিছুই নশ্বর নয়,
হিংসা বিদ্বেষ প্রসংশনীয় নয়।
বিবাদ বিসংবাদ প্রশংসনীয় নয়।
৩৪। জীবন স্বল্পমেয়াদী,
সময় ধাবমান।
প্রকৃত সত্য উন্মুক্ত করো।
মন ও হৃদয়কে বিশুদ্ধ করে তোল সুখের জন্য।
দয়ালু হও, করুণাপ্রাণ হও।
দানশীল হও, কুশলকর্ম করো।
স্মৃতি করো।
গভীরবোধ সম্পন্ন হও।
প্রজ্ঞা বিমণ্ডিত হও।
৩৫। দানের দ্বারা লোভকে জয় করো।
মৈত্রীর দ্বারা হিংসাকে জয় করো।
বিদ্যার দ্বারা অবিদ্যাকে জয় করো।
৩৬। যখন তৃঞ্চামুক্ত হবো আমরা
আমরা বুঝতে পারবো প্রশান্তি আর বিমুক্তি।
৩৭। সত্যের মাধ্যমে গভীরভাবে বিশ্বাস করুন যে
সমস্ত প্রাণীই এক।
সমস্ত প্রাণীই একই প্রকৃতি, প্রজ্ঞা ও সদাচারি।
৩৮। নিজের ভুল খোঁজ,
গভীর অনুতাপ ভোগ,
এবং
শুদ্ধ করো তোমার ভুলগুলো,
সহৃদয়তা উৎপন্ন করো,
দয়াপরায়নতা চর্চা করো,
স্বার্থপরতা ত্যাগ করো,
আলোকিত হও।
৩৯। ক্ষমা কর
আর কর নিজেকে মুক্ত।
ভুলে যাও যে তুমি ক্ষমা করেছো এবং মুক্ত হয়েছো।
৪০। কেন আমরা আমাদের রাগ, দ্বেষ ও মোহের ওপর এতো জোর দিই?
কেন আমাদের সহনশীলতা আর নিঃস্বার্থতার অভাব?
আমরা সত্যিকারভাবে বুঝি না যে সবকিছুই আমাদের মন থেকে উৎপত্তি
হয়,
প্রত্যেকটি চিন্তা আমরা খুব দ্রুত অনুভূত হই,
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে…….।
৪১। যদি আমরা আমাদের কাজকে নিজের লাভের জন্য চিন্তা না করে,
যদি চিন্তা করি, সমাজের মঙ্গলের জন্য এটি,
তাহলে
প্রশংসা আর ধৈর্য অনুশীলনের চর্চা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে
চলবে।
৪২। মৈত্রী দেয় অপরকে সুখ,
করুণা মুছে দেয় অপরের ব্যথা,
মুদিতা মুক্তি দেয় অন্যকে দুঃখ থেকে।
৪৩। যখন অন্যকে দান করো,
চিত্তকে ধরে রেখো না: আমি দান করছি,
কী দিচ্ছি,
যে গ্রহণ করছে।
৪৪। যেহেতু সবকিছু আমাদের মনেরই প্রতিফলন,
তাই সবকিছুই আমাদের মনের দ্বারা পরিবর্তন হতে পারে।
৪৫। যখন সবকিছু সুন্দরভাবে চলে,
বিপদের প্রতি মনোযোগি হও।
যখন সম্পত্তিশালী হবে,
দারিদ্রতার প্রতি মনোযোগি হও।
যখন ভালোবাসবে,
চিন্তাশীলতার প্রতি মনোযোগি হও।
যখন সম্মানিত হবে,
বিনয়ের প্রতি মনোযোগি হও।
৪৬। নিজেদের শুধরাতে তিনটি পথ:
O আমাদের আচরণের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারি।
O আমাদের ভালো বোঝা শোনার মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারি।
O মন থেকেই আমরা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারি।
৪৭। যতক্ষণ পর্যন্ত
মানুষটি সকল প্রাণীর প্রতি নিঃশর্ত ও
নিরপেক্ষ ভালোবাসা দেখাতে পারবে না,
ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষটি শান্তি খুঁজে পাবে না।
৪৮। যে উপকার পেয়েছে সে যেনো কখনো ভুলে না যায়,
কিন্তু
যে উপকার করেছে, সে যেনো তা মনে রাখে।
৪৯। আপনার মনের বাগানে শান্তিচর্চা করুন,
স্বার্থপরতা আর ঈর্ষা,
লোভ আর দ্বেষ,
গর্ব আর দম্ভ-আগাছাগুলোকে উপড়ে ফেলুন।
দেখবেন তখনই সবাই আপনার শান্তি
আর
সুমনোরম পরিবেশ থেকে উপকৃত হবে।
৫০। আমাদের সমস্যাগুলো শারীরিক জোরে,
বিদ্বেষে ও যুদ্ধে সমাধান হবে না।
আমাদের সমস্যাগুলো মৈত্রী, সদাচারণে ও
নির্মল আনন্দ উল্লাসে সমাধান হবে।
৫১। বোধি প্রাকৃতিক,
মোহ নয় কিন্তু।
৫২। যা পছন্দ করো তাতে মোহগ্রস্থ হয়ো না।
যা অপছন্দ করো তাতে বিদ্বেষ পোষণ করিও না।
দুঃখ, ভয় ও বন্ধন কারো পছন্দ ও অপছন্দ থেকেই আসে।
৫৩। সর্বদা দয়াতে মনোযোগি হও,
অন্যের দোষের প্রতি মনোযোগি হয়ো না।
৫৪। যারা প্রকৃতই জ্ঞানী সুখ-দুঃখের অনুভূতিতে,
সুনাম-দুর্নামে, প্রশংসা-নিন্দায়,
লাভ-ক্ষতিতে অচঞ্চল থাকে।
তারা থাকেন হারিকেনের চোখের মতো শান্ত।
৫৫। শারীরিক কর্মকাণ্ড
আর
অন্তরের প্রশান্তি দু’য়ে ভারসাম্য সংরক্ষণ করুন,
যেমন বীণার তারগুলো সুরের ঝর্ণা তুলে।
৫৬। আপন মর্যাদা আর আনন্দ উৎফুল্লতা যা আমরা করি,
তা আমাদের একাগ্র চিত্ত ও পরিপূর্ণ প্রজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ।
৫৭। প্রকৃতির নিয়ম পক্ষপাতহীন,
শুধুমাত্র যারা ধার্মিক, তারা সুখী প্রকৃতির সান্নিধ্যে।
৫৮। চিন্তায় সম্মানিত হবে,
বাক্যে সহানুভূতিশীল হবে,
কর্মে ভালো হবে-
বুদ্ধের হৃদয়ে থাকতে হবে।
৫৯। শান্তি নিজের মধ্যে থেকেই আসে,
কখনো বাইরে থেকে আশা করো না।
৬০। যদি আমাদের সৃষ্ট কারণগুলো প্রজ্ঞা থেকে আসে, তাহলে সুফল
দেবে।
যদি আমাদের সৃষ্ট কারণগুলো অবিদ্যা থেকে আসে তাহলে কুফল দেবে।
৬১। সৌভাগ্য নিঃস্বার্থপরতা থেকে আসে,
দুর্ভাগ্য আসে স্বার্থপরতা থেকে।
৬২। যা কিছু আমাদের জীবনে ঘটে,
তাহলো যা আমরা কায়, বাক্য ও মনে সম্পাদন করি,
তারই ফলাফল আমরা নিজেরাই নিজেদের সবকিছুর জন্য দায়ী।
৬৩। অন্যেদের সঙ্গে
যোগাযোগ ঘটলে,
ভদ্রতা,
দয়া,
সম্মান
এইসব উৎস থাকলেই ,
শান্তি-সুখ থাকবে।
৬৪। এই দেহ ‘আমার নয়।‘
এই দেহ আমাদের কাপড়ের মতো।
যখন নষ্ট হয়ে যায়, আমরা ছুঁড়ে ফেলি এটি।
এবং নতুন আরেকটি নিই,
ঠিক যেমন নতুন পোষাকে সজ্জিত করি।
৬৫। যখন আমরা সহানুভূতিশীল চিত্তে অন্যকে সাহায্য করতে চিন্তা
করবো,
নিজেকে নিজে নয়,
তখনই আমরা খুঁজে পাবো যে আমরা যা প্রত্যাশা করি, তা আমরা
লাভ করবো।
৬৬। মৈত্রী যখন মানসিক চিন্তা, তখনই শান্তিশীলতা।
মৈত্রী যখন বাক্যে প্রকাশিত, তখনই সরলতা।
মৈত্রী যখন কর্মে উজ্জ্বল, তখনই পরার্থতা।
মৈত্রী যখন অনুশীলনে তখনই শান্তি।
৬৭। মন থেকেই সবকিছুর উৎপত্তি।
৬৮। মানুষ হিসেবে সুখের পেছনে ছুটছি,
যেমন অবুঝ শিশু ধারালো ছুড়ির মধু চাটে
কিংবা
বাতাসের বিপরীতে মানুষ জ্বালানো বাতি নেয়।
৬৯। পৃথিবীতে যা কিছু দুঃখ সবি উৎপত্তি হয়
শুধুমাত্র নিজেকে সুখী করার সুতীব্র আকাঙ্খা থেকেই।
এবং পৃথিবীতে যা কিছু সুখ, সবি উৎপত্তি হয়,
নিজের সুখকে সবার সঙ্গে অংশীদার করার সুতীব্র আকাঙ্খা থেকেই।
৭০। যারা সততার সঙ্গে কাজ সম্পাদন করে,
একাগ্রতার সঙ্গে বসবাস করে,
প্রজ্ঞার মাধ্যমে বিমুক্ত করে,
ভয় তাদের ক্ষতি করতে পারে না।
৭১। শেষ মুহূর্তে চিন্তা করুন, আপনি সুখী ছিলেন…
শেষ মুহূর্তে চিন্তা করুন, আপনি রাগান্বিত ছিলেন…
পরবর্তীতে কোনটি বেছে নেবেন?
৭২। অনুশীলনবিহীন সুমিষ্ঠ কথার ফুলঝুড়ি,
সুগন্ধহীন সুবর্ণফুলের মতো।
৭৩। একাগ্র চিত্ত থেকে সুখ আর শান্তির উৎপত্তি।
আকাঙ্খা থেকে হতাশা আর দুঃশ্চিন্তার উৎপত্তি।
৭৪। আমাদের চিন্তাগুলোই সমস্যাতে নিয়ে যায়,
অন্য কেউ নয়।
৭৫। আমাদের বাক্যগুলো সযত্নে চয়ন করা উচিত,
কেননা মানুষ সেগুলো শুনবে ও অনুপ্রাণিত হবে সেগুলো দ্বারা,
যা ভালোর জন্য কিংবা খারাপের জন্য।
৭৬। যেখানেই আলো, সেখানেই ছায়া,
যেখানেই দৈর্ঘ্য, সেখানেই খাটো,
যেখানেই সাদা, সেখানেই কালো।
এগুলোর মতোই,
কোন কিছুই একক অস্তিত্ব থাকতে পারে না।
৭৭। অহংকারি হতে
আমাদের কী গ্রহণ করতে হবে,
অথবা
অন্যের সঙ্গে শত্রুতা করতে
কী আমাদের হরণ করতে হবে
আমাদের এই শান্তিময় মনকে।
৭৮। শান্তশীলতা আর দানশীলতা হলো হৃদয়ের গুণ।
বিদর্শন আর শমথ হলো মনের গুণ।
করুণা আর প্রজ্ঞা হলো পরম সত্যের গুণ।
৭৯। যখন খাচ্ছেন, খাচ্ছেন বলে মনোযোগি হোন।
যখন হাঁটছেন, হাঁটছেন বলে মনোযোগি হোন।
যখন হাসছেন, হাসছেন বলে মনোযোগি হোন।
৮০। আমি আমার কর্মের অধিকারি,
আমি আমার কর্মের উত্তরাধিকারি,
আমি আমার কর্মের জন্মদাতা,
আমি আমার কর্মের সহযোগিতায় বাঁচি,
যা কিছু কর্ম আমি সৃষ্টি করি,
ভালো কী মন্দ-
তাই আমার উত্তরাধিকার হবে
এবং আমি একাই উত্তারাধিকারি।
৮১। মৈত্রী কখনোই অস্তিত্ব পেতে পারে না
যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রবাহিত হয়
মন ও হৃদয় থেকে,
জ্ঞান ও ভালোবাসা থেকে।
৮২। সন্তোষ্ট চিত্তসম্পন্ন ব্যক্তি যদিও ইন্দ্রিয়াধীন জীবনযাপন
করেন,
মুক্ত থাকেন আসক্তি কিংবা ঘৃণা,
লাভ কিংবা ক্ষতি থেকে।
তিনি পরম শান্তি জয়ী হন।
৮৩। লোভ ও রাগ,
অবিদ্যা ও ঔদ্বত্য,
বিচিকিৎসা ও মিথ্যাদৃষ্টি,
যদি এগুলো মনের দ্বারা সংযত করতে পারে,
তবেই শান্ত ও করুণাময় জীবনের প্রাপ্তি ঘটে।
৮৪। পর দুঃখ কাতরতা জাগে যখন আমরা কারো জন্য দুঃখিত হই।
করুণা তখনই যখন আমরা বুঝবো ও সাহায্য করবো সজ্ঞানে।
৮৫। যদি তুমি জানো যে কোন কিছু কষ্টদায়ক এবং অসত্য,
এটাকে প্রকাশ করো না।
যদি তুমি জানো যে এটি সহায়ক কিন্তু অসত্য,
এটাকে প্রকাশ করো না।
যদি তুমি জানো যে কোন কিছু কষ্টদায়ক এবং সত্য,
এটাকে প্রকাশ করো না।
যদি তুমি জানো যে কোন কিছু সহায়ক এবং সত্য,
এটাকে প্রকাশ করতে সঠিক সময় খোঁজ।
৮৬। যিনি জীবনের একতা উপলব্ধি করেছেন,
তিনি নিজেকে সকল প্রাণীতে দেখেন,
এবং উনার মধ্যে সকল প্রাণী। তিনি নিরপেক্ষ চোখ দিয়ে দেখেন
সবকিছু।
৮৭। শান্তশীলতা, সম্মান,
সহজ সরলতা, আত্ম নিয়ন্ত্রণ,
সুচিন্তা হলো মনের ধার্মিকতা।
৮৮। দান,
নীরবতা,
কৃতজ্ঞতা,
সুখ,
সু অনুভবতা হলো হৃদয়ের ধার্মিকতা।
৮৯। আচার্য্যের বাণীর ওপর নির্ভর করো,
ব্যক্তির ওপরে নয়।
বাণীর অর্থের ওপর নির্ভর করো,
শুধুমাত্র শব্দের ওপর নয়।
প্রকৃত অর্থের ওপর নির্ভর করো,
অস্থায়ি অর্থের ওপর নয়।
নিজের প্রজ্ঞাচিত্তের ওপর নির্ভর করো,
শুধুমাত্র নিজের সাধারণ বিচার বিবেচনা নির্ভর মনের ওপর নয়।
৯০। পবিত্রতা উদ্ভব ঘটায় প্রজ্ঞার,
আবেগ উদ্ভব ঘটায় সম্পদ লিপ্সা,
অবিদ্যা উদ্ভব ঘটায় আকাঙ্খা,
দুঃশ্চিন্তা,
অন্ধকার।
৯১। শোনো, কী বলা হয়েছে,
ধরে রাখো, কী গুরুত্বপূর্ণ।
বলো, যা গুরুত্ববহ,
কিছুতেই আসক্তগ্রস্থ হয়ো না।
৯২। শান্তি মানে যুদ্ধের অনুপস্থিতি নয়,
এটি
সদাচার,
মনের অবস্থা,
ভালোবাসা, সততা ও বিশ্বস্ততার প্রতি ঝোঁক।
৯৩। বুঝুন যে দেহ শুধুই ঢেউয়ের ফেনা,
একটি ছায়ার ছায়া।
আকাঙ্খার তীরগুলো বিধতে থাকে
আর অদৃশ্যমান হয়।
মৃত্যুরাজ থেকে পলায়ন আর পরিভ্রমণ চলতেই থাকে।
৯৪। সকল প্রাণী মৈত্রী ও সুখে পরিপূর্ণ হোক।
৯৫। তাদের আশা মহৌষধে পরিণত হোক,
মহামারীর সময় রোগাদি থেকে আরোগ্য লাভ করতে।
৯৬। তাদের আশা মঙ্গার সময় ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য ধান্য ক্ষেত্রে
পরিণত হোক।
সাধু! সাধু!! সাধু!!!
================================================
ভদন্ত মাস্টার চিন কুং
মহাযান বৌদ্ধধর্মের পিউরল্যাণ্ড ধারার বৌদ্ধ ভিক্ষু পরম শ্রদ্ধেয়
ভদন্ত মাস্টার চিন কুং এর জন্ম চীনের আনহুই-এ
লুইজাং প্রদেশে ১৯২৭ সালের মার্চ ১৩। গৃহি নাম ছিল শু য়ে হাং। বাবা যখন ফুজিয়ান প্রদেশের
গভর্নরের প্রধান সচিব হয়ে বদলি হন সপরিবার
চলে যান সেখানে, বয়স তখন তাঁর ১০ বছর। ১৯৪৭ সালে বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করেন
বাবার মৃত্যুর কারণে। ১৯৪৯ সালে তিনি তাইওয়ানে চলে যান। ১৩ বছর ধরে করণিক পদে ছিলেন
সামরিক অফিসারদের প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউটে। সে সময়ে তিনি বুদ্ধের ধর্ম ও দর্শন নিয়ে
অধ্যয়ন করেন কয়েকজন অধ্যাপকের কাছে। ১৯৫৯ সালে প্রব্রজ্যিত হন এবং দশ বছর ধরে ধর্মশিক্ষা
নেন। পরবর্তীতে কয়েক বছর বৌদ্ধ ইনিস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা করেন। স্থায়িভাবে
থাকার জন্য বিহারের সমস্যায় ভোগেন, তখন দায়ক হন সহযোগিতা করেন, ১৯৬৬ সালে নিজের ঘরের
এলাকায় চলে যান, প্রায় ১৭বছর কাটান সেখানে।
১৯৭৯ সনে দায়ক হনের পৃষ্ঠপোষকতায় তাইপেতে প্রতিষ্ঠা করেন
ধর্মীয় পুস্তকালয় যার নাম: the Hwa Dzan Buddhist
Library। ধর্মদেশনায় সুপরিচিত
হয়ে ওঠেন নিজদেশে ও হংকং, সিংগাপুর ও মালেয়েশিয়ায়। ১৯৯৭ সালে দায়ক হনের মৃত্যুর পর
সিংগাপুরে চলে যান, ২০০২ সালে অষ্ট্রেলিয়ায় চলে যান বিহারের দায়িত্ব ও
ধর্মপ্রচারের জন্য।
আন্তঃধর্মীয়
সংলাপে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন অস্ট্রেলিয়ায়। আন্তর্জাতিক সংস্থায় নানাপদে রাখা
হয় শান্তি ও সম্প্রীতি উন্নয়নে অবদান রাখতে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানীয় ডক্টর
ডিগ্রীতে ভূষিত করেন। নানা দেশে গেছেন শান্তির বাণী ছড়াতে।
১৯৮২
সালে শ্রদ্ধেয় ভন্তে প্রস্তাব করেন তাইপেতে একটি ধর্মবই ছাপা ও প্রকাশনার একটা
সংস্থা প্রতিষ্ঠার আর প্রস্তাবনায় সারা দেন গুরুত্বপূর্ণ জায়গার জমির মালিক ও দান
করেন। বিল্ডিং নির্মিত হলে ১৯৮৪ সালে কার্যক্রম শুরু হয় The Corporate Body of the Buddha Educational Foundation যার মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ছাপা হতো বিনামূল্যে বিতরণের জন্য।
বাংলা ভাষায় অসংখ্য ধর্মীয় বই ছাপিয়ে দেয় বিনামূল্যে সংস্থাটি।
এই মহান বুদ্ধপুত্র ২০২২ সালের জুলাই ২৬, ৯৫ বছর বয়সে তাইনিন,তাইওয়ানে
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (সূত্র: Wikipedia)
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
চাইনীচ থেকে ইংরেজি
ভাষান্তর:
ভদন্ত থানিসসারো ভিক্ষু,
ওয়াট মেত্তা, ক্যালিফোর্নিয়া।
বাংলায় ভাষান্তর:
রতন জ্যোতি ভিক্ষু,
শ্রী পঞ্ঞাসিহে ভাবনা
কেন্দ্র, পামডেল, ক্যালিফোর্নিয়া। ২০১৫]
*********************************************************************
0 Comments