চতুরার্য সত্য
জগৎ দুঃখময়। সুখ এখানে ক্ষণস্থায়ী। সংসার চক্রে পরিভ্রমণ করে মানুষ দুঃখ ভোগ করে। বুদ্ধ দুঃখকে প্রধানত আট ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা:
১. জন্ম দুঃখ ২. জরা দুঃখ ৩. ব্যাধি দুঃখ ৪. মৃত্যু দুঃখ ৫. অপ্রিয় সংযোগ দুঃখ ৬. প্রিয় বিচ্ছেদ দুঃখ ৭. ঈপ্সিত বস্তুর অপ্রাপ্তি দুঃখ এবং ৮. পঞ্চস্কন্ধময় এ দেহ ও মন দুঃখময়।
সকলকে কোনো না কোনোভাবে দুঃখ ভোগ করতে হয়। দুঃখ হতে কারো নিস্তার নেই। তাই বুদ্ধ এগুলোকে দুঃখ আর্যসত্য বলে অভিহিত করেছেন।
২/ দুঃখের কারণ আর্যসত্য:
কারণ ছাড়া কোনো কার্যের উৎপত্তি হয় না। সবকিছুরই কারণ আছে। দুঃখ উৎপত্তিরও কারণ আছে। দুঃখ আছে জেনেও মানুষ মায়ার জালে আবদ্ধ হয়ে আরও দুঃখ ভোগ করে। জন্ম নিলেই দুঃখ ভোগ করতে হয়। তাহলে কী কারণে মানুষ জন্মগ্রহণ করে? জন্মের কারণ তৃষ্ণা। আর তৃষ্ণার কারণ অজ্ঞতা বা জ্ঞানের অভাব। অজ্ঞতার কারণে আমরা অসত্যকে সত্য, সত্যকে অসত্য মনে করি। ফলে পৃথিবীর রূপ, রস, স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদিতে আকৃষ্ট হই এবং তা পাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা উৎপন্ন হয়। পতঙ্গ যেমন আগুনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আগুনের কাছে যায় এবং আহত বা হতও হয়, তেমনি মানুষও মোহাচ্ছন্ন হয়ে বারবার দুঃখ ভোগ করে। জগতের ক্ষণস্থায়ী বস্তু পাওয়ার জন্য তীব্র বাসনা জাগ্রত হয়। এই আকাঙ্ক্ষার ফলেই আমরা বারবার জন্মগ্রহণ করি। কামনা, বাসনা, লোভ, অহংকার, মোহ, শোক-এ সবই তৃষ্ণা থেকে উৎপত্তি হয়। তৃষ্ণাই দুঃখের কারণ।
৩/ দুঃখ নিরোধ আর্যসত্য:
আমরা জেনেছি তৃষ্ণাই দুঃখের কারণ। তৃষ্ণার ফলেই আমরা বারবার জন্মগ্রহণ করি। জন্মগ্রহণ করে অসংখ্য দুঃখ ভোগ করি। সুতরাং তৃষ্ণাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দুঃখ নিরোধ সম্ভব। তৃষ্ণার ক্ষয় পুনর্জন্ম রোধ করে। তৃষ্ণার বিনাশ করাই দুঃখ নিরোধ আর্যসত্য।
৪/ দুঃখ নিরোধের উপায় আর্যসত্য:
রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ঔষধ খেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হয়। তথাগত বুদ্ধ কঠোর তপস্যা করে দুঃখ নিরোধের উপায়ও আবিষ্কার করেছেন, যা দুঃখ নিরোধের উপায় আর্যসত্য নামে পরিচিত। বুদ্ধ নির্দেশিত আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই দুঃখ নিরোধের উপায়। মার্গ অর্থ পথ। আটটি সত্য পথ অনুসরণ করে আমরা দুঃখ নিরোধ করতে পারি। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ নিম্নরূপ:
১. সম্যক দৃষ্টি ২. সম্যক সংকল্প ৩. সম্যক বাক্য ৪. সম্যক কর্ম ৫. সম্যক জীবিকা ৬. সম্যক ব্যায়াম বা প্রচেষ্টা ৭. সম্যক স্মৃতি ৮. সম্যক সমাধি

0 Comments