Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

মানুষের জীবনের একটি অনিবার্য দিক হলো মানসিক অশান্তি লেখা : বিজয়ানন্দ ভিক্ষু


 

মানুষের জীবনের একটি অনিবার্য দিক হলো মানসিক অশান্তি। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, ভয়, শোক কিংবা অস্থিরতা—এসবই আমাদের মনের শান্তিকে নষ্ট করে দেয়। আধুনিক যুগের ব্যস্ততা ও প্রতিযোগিতামূলক জীবনে এই অশান্তি আরও বেড়ে উঠেছে। তবে গৌতম বুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছেন, মনকে শান্ত করার পথ বাহিরে নয়, বরং অন্তরে নিহিত। আর সেই অন্তরের শান্তি খুঁজে পাওয়া যায় ত্রিরত্নের শরণে গিয়ে— বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘে আশ্রয় গ্রহণের মাধ্যমে।
বুদ্ধের শরণ।
বুদ্ধ হচ্ছেন জাগ্রত এক মহাপুরুষ, যিনি দুঃখমুক্তির পথ নিজে আবিষ্কার করে সকল প্রাণীর কল্যাণে তা দান করেছেন। মানসিক অশান্তিতে ভুগতে থাকা মানুষ যখন বুদ্ধের শরণে আসে, তখন তিনি অনুভব করেন— “যিনি মহাজ্ঞান দ্বারা দুঃখকে জয় করেছেন, তাঁর আশ্রয়ে আমি নিরাপদ।” এই আস্থা মনকে সাহস দেয়, প্রশান্তি এনে দেয়।
ধর্মের শরণ।
ধর্ম হলো বুদ্ধের প্রদর্শিত মুক্তির পথ। ধ্যান, শীল, প্রজ্ঞা—এই তিন অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ ধীরে ধীরে মনের অস্থিরতা দূর করতে পারে। ধর্মকে গ্রহণ মানে হচ্ছে—মনের দুঃখ ও দুশ্চিন্তাকে মোকাবিলা করার একটি সঠিক উপায় অবলম্বন করা।
সংঘের শরণ।
সংঘ হলো মহৎ সাধকগণ, যারা বুদ্ধের পথ অনুসরণ করে দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। তাঁদের জীবনের আদর্শ, শুদ্ধতা, ভ্রাতৃত্ব ও করুণা আমাদের প্রেরণা জোগায়। সংঘের শরণ মানে এমন এক সমাজের অংশ হওয়া, যেখানে সত্য, শান্তি ও মৈত্রীর বাতাস প্রবাহিত হয়।
বন্দনা ও ধ্যানের অনুশীলন।
ত্রিরত্নের শরণ গ্রহণ করে প্রতিদিন বন্দনা ও ভাবনা/ধ্যান অনুশীলন করলে মন ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়।বন্দনা (শ্রদ্ধার সঙ্গে বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘকে স্মরণ করা) মনের মধ্যে কৃতজ্ঞতা জাগায়, যা মানসিক অশান্তি দূর করে।মেত্তা ভাবনা (মৈত্রী ধ্যান) করলে মন সকল জীবের প্রতি শুভেচ্ছা ও সহানুভূতিতে পূর্ণ হয়। তখন রাগ, হিংসা, দুঃখ বা ভয় ক্রমে বিলীন হয়ে যায়।
বৌদ্ধ ভাবনায় বলা হয়—
“সাব্বে সত্তা সুখী হোন্তু, সাব্বে সত্তা অবেরিণা হোন্তু, সাব্বে সত্তা দুঃখা মুক্তা হোন্তু।”
অর্থাৎ—
“সব প্রাণী সুখী হোক, সব প্রাণী হিংসা ও দুঃখ থেকে মুক্ত হোক, সব প্রাণী শান্তি লাভ করুক।”
এই প্রার্থনা কেবল একটি উচ্চারণ নয়, বরং মনের গভীর এক সৎ সংকল্প। যখন একজন ব্যক্তি আন্তরিকভাবে এই ভাবনা লালন করে, তখন তার নিজের মনও প্রশান্তিতে ভরে ওঠে।
মানুষ যখন নিজ অন্তরে শান্তি খুঁজে পায়, তখনই সে সমাজে শান্তি বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
ব্যক্তির মানসিক প্রশান্তি থেকেই সমাজের শান্তি শুরু হয়।
সমাজে শান্তি এলে পৃথিবী জুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
অতএব, মানসিক অশান্তি দূর করার শ্রেষ্ঠ পথ হলো ত্রিরত্নের শরণে গমন, বন্দনা ও ধ্যান অনুশীলন, এবং মৈত্রীর ভাবনায় মন পূর্ণ করা।
যারা আজ দুঃখ, ভয়, বা অশান্তিতে ভুগছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ— বুদ্ধের বাণীকে স্মরণ করুন, ধর্মের পথে মনকে শোধন করুন, সংঘের আদর্শকে অনুসরণ করুন। প্রতিদিন মৈত্রীর ধ্যান করুন। দেখবেন, মন ধীরে ধীরে শান্ত হবে, জীবনের দুঃখ হালকা হয়ে আসবে, আর হৃদয়ের গভীরে এক অপার প্রশান্তি বিরাজ করবে।জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক, সকল প্রকার দুঃখ থেকে মুক্তিলাভ করুক। বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক।
লেখা : বিজয়ানন্দ ভিক্ষু

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement