** ** অষ্ঠ সহস্র পারমিতা কি? এ গ্রন্থ সম্পর্কে আলোচনা কর?
উত্তরঃ সূচনাঃ প্রাচীনতম মহাযান সূত্রাবলীর মধ্যে প্রজ্ঞা পারমিতা সূত্র অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ন। সম্ভবতঃ অষ্ঠ সাহস্রিক প্রজ্ঞা পারমিতা গ্রন্থটি প্রাচীনতম ও মূলগ্রন্থ। পন্ডিতদের অনুমান মূল প্রজ্ঞা পারমিতা প্রথম আট হাজার শ্লোকের এক সংগ্রহ গ্রন্থ ছিল যা অষ্ঠ সাহস্রিক প্রজ্ঞা পারমিতা নামে পরিচিত ছিল। এতে ভগবান বুদ্ধ কোন না কোন শিষ্য বিশেষতঃ সুভূতির সঙ্গে কথোপকথন করেছেন। কালক্রমে প্রজ্ঞা পারমিতা নামে বহু সুত্র গ্রন্থ রচিত হয়েছে। নিম্নেঅষ্ঠ সহস্র প্রজ্ঞা পারমিতা সূত্র গ্রন্থ সম্পর্কে আলোচনা করা গেল ঃ
অষ্ঠ সহস্র পজ্ঞাপারমিতা ঃ অষ্ঠ সাহস্রিকা প্রজ্ঞা পারমিতার প্রতি পাদ্য সিদ্ধান্ত হচ্ছে সংসারে সমস্ত ধর্ম প্রতিবিম্ব মাত্র ।এদের কোন বাস্তব সত্ত্বা নেই। শূন্যতা রূপ সর্বধর্ম নৈরাতœ্য জ্ঞান প্রজ্ঞার বিশেষত্ব। সর্বধর্ম নিঃস¦ভাব এবং শূন্য অর্থাৎ পুদগল এবং ধর্ম সদভাব নয়। বিজ্ঞান ও বিজ্ঞেয় এই উভয়ের কোন পারমার্থিক অসিত্ব নেই। এটি শাশ্বত নয় উচ্ছেদ ও নয়। এই পরমার্থতত্ত্ব সমগ্র গ্রন্থ জুড়ে বুদ্ধ এবং শিষ্যদের কথোপকথনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সে সঙ্গে বোধিসত্ত্বের আর্দশ বার বার কীর্তিত হয়েছে।
মহাযানীদের মতে ছয় পারমিতা- দান, শীল, ক্ষান্তি, র্বীয, ধ্যান ও প্রজ্ঞা । এই ছয় পারমিতার মধ্যে প্রজ্ঞা পরিমিতাকে মূখ্য রুপে দেখা হয়েছে। প্রজ্ঞা পারমিতার মৌলিক অর্থ হচ্ছে জ্ঞানের পূর্ন পরাকাষ্ঠা অর্থাৎ উচ্চতর জ্ঞানের লাভের উপায় যা শূন্যতার প্রতিপাদক। প্রজ্ঞা পারমিতার বুৎপত্তি প্রর্দশন করতে গিয়ে অষ্ঠ সহস্র প্রজ্ঞা পারমিতা গ্রন্থে বলা হয়েছে সর্বধর্ম অনুপলদ্ধকে প্রজ্ঞা পারমিতা বলা হয়েছে। এর গুরুত্ব প্রতিপাদনে শত সাহস্রিকা প্রজ্ঞা পরিমিতাতে বলা হয়েছে চন্দ্র, সুর্য যেমন চতুদ্বীপ উদ্ভাসিত করে তদ্রুপ প্রজ্ঞা পরিমিতা ও অন্য পারমিতা সমূহকে পরিশোধিত করে।
গ্রন্থের পরিচয় ঃ অষ্ঠ সাহস্রিকা প্রজ্ঞা পারমিতা সূত্রটি ৩২টি পরিবর্তে বা অধ্যায়ে বিভক্ত। এতে বুদ্ধের সঙ্গে তাঁর শিষ্য সুভূতি, শারিপুত্র, পূর্ন মৈত্রায়নীপুত্র শত্রু দেবরাজ পুত্র অথবা কখনও বোধিসত্ত্বের কথোপকথন সন্নিবিষ্ট হয়েছে। গ্রন্থটির প্রারম্ভিক শ্লোকে বীরদের জননী স্বরুপ ও পরম লক্ষ্যে দৃষ্টি নিবদ্ধ বির্মূতা প্রজ্ঞা পারমিতার যশ র্কীতি আলোচিত হয়েছে। সে সঙ্গে বোধিসত্ত্বের আর্দশ বারবার কীর্তিত হয়েছে। যেমন ভগবান বুদ্ধ বলেছে সভূতি! অনতিত্রুম্য সম্যক বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ করার জন্য বোধিসত্ত মহাসত্ত্বকে সমস্ত প্রানীর প্রতি সমব্যবহারী ও সমদর্শী হতে হবে তাকে মৈত্রী চিত্তে বন্ধুত্ব ভাবে, অনুদ্ধভাবে, অবিরুদ্ধভাবে, অক্ষতি মানসে, রক্ষা করতে হবে। সর্ব প্রাণীর প্রতি তাঁর মাতৃভাব, পিতৃভাব, কন্যাভাব পোষণ করতে হবে।
সুভূতি বুদ্ধত্ব লাভ করতে হলে বোধিসত্ত্ব মহাসত্ত্বকে এভাবে সকল প্রাণীর রক্ষা কর্তা হওয়ার জন্য শিক্ষা লাভ করতে হবে । এবং তাঁকে সমস্ত পাপ দুরীভূত করতে হবে, বীর্যবান ও সহিষ্ণ হতে হবে, শীল পালন করতে হবে, অনুলোম প্রতিলোম প্রতীত্য সমুৎপাদ ভাবনা করতে হবে এবং অন্যকে এটি শিক্ষা দিতে হবে। শূণ্যতা সম্পর্কে জ্ঞানতত্বগত ও অধিবিদ্যাগত বহু দীর্ঘ আলোচনা ছাড়া ও এতে বোধিসত্ত্ব সম্পর্কে যে আলোচনা আছে তাতে এটি ধর্মীয় গ্রন্থ বলা যায় এবং এই ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য কয়েকটি অধ্যায় জুড়ে প্রকাশ পেয়েছে। তাতে প্রজ্ঞা পারমিতার পঠন-পাঠন, শিক্ষার এবং শিক্ষাদানের ফল স্বরুপ অশেষ পূন্য সঞ্চয়ের কথা লিপিদ্ধ হয়েছে।
প্রাচীনতম মহাযান সুত্রাবলীর মধ্যে যে প্রজ্ঞা পারমিতা অর্ন্তভূক্ত তাঁর প্রমাণ আছে। আমরা প্রজ্ঞা পারমিতায় পালি সূত্রের মত কথোপকথন রীতিতে প্রমাণ কোন সূত্রের ধর্ম দেশনার আরম্ভ দেখতে পাই। এখানে দেখা যায় ভগবান বুদ্ধ কোন না শিষ্য বিশেষতঃ সুভূতির সঙ্গে কথোপকথন করতেছেন। অন্যান্য মহাযান সূত্র দেখা যায় যে শিষ্যের পরিবর্তে বোধিসত্ত্ব এ স্থান অধিকার করেছেন।
বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ ঃ মহাযান সূত্র সুলভ অতিরঞ্জন প্রজ্ঞা পারমিতাতে ও যথেষ্ট দৃষ্ট হয়। নার্গাজুন, বসুবন্ধ, অসংগ ইত্যাদি মহাযানের মহাদার্শনিকেরা প্রজ্ঞা পারমিতার উপর বুহদাকার ভাষ্যগ্রন্থ রচনা করেছেন যা একমাত্র চীনা ও তিব্বতী অনুবাদে পাওয়া যায়। দশ সাহস্রিকা প্রজ্ঞা পারমিতা ১৭৯ খৃষ্টাব্দে চীনা ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল।
অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞা পারমিতায় উল্লেখ হয়েছে যে, প্রথমে এটি দক্ষিণ ভারতে রচিত হয়েছিল। পরে এটি পূর্বে এবং উত্তরে এর জন প্রিয়তা বিস্তৃতি রাভ করেছিল। কালক্রমে প্রজ্ঞা পারমিতা নামে বহুসূত্র রচনা হয়েছিল। এদের সব গুলোর মূল সংস্কৃত সংস্করণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু চীনা ও তিব্বতী অনুবাদ পাওয়া গেছে। নেপালী ঐতিহ্য মতে, পঞ্চবিংশোত্তর, শতসাহস্রিকা প্রজ্ঞা পারমিতা সূত্র, ১,২৫,০০০ শ্লোকে যুক্ত প্রথমে সংকলিত হয়েছে। পরে একই সূত্রের সংক্ষিপ্তরুপ শতসাহস্রিকা ১০,০০,০০০ শ্লোকে, পঞ্চবিংশতি সাহস্রিকা ২৫০০০ শ্লোকে, দশ সাহস্রিকা ১০,০০০ শ্লোকে, অষ্টসাহস্রিকা ৮,০০০ শ্লোকে, প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্র রচিত হয়েছে।
অন্য ঐতিহ্য মতে অষ্ট সাহস্রিকা প্রজ্ঞা পারমিতাই প্রথম রচিত হয়েছিল এবং পরে উপরোক্ত সংস্করণ গুলোতে বর্দ্ধিত করা হয়েছিল। পরবর্তী মতই বিশ্বাস যোগ্য। প্রকৃতপক্ষে পারমিতার বহু সংস্করণ ভারতবর্ষে বিদ্যমান ছিল এবং চীন ও তিব্বতে এদের সংখ্যা আরও বর্দ্ধিত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা মূল্যবান রচনা হল প্রজ্ঞা পারমিতা মহাযান সুত্রগুলো। আট হাজার শ্লোকে এটি রচিত হয়েছিল।
বি, এ (অনার্স) এম, এ. এম, এড.
0 Comments