Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

স্রোতাপত্তি



স্রোতাপত্তি

স্রোতাপত্তি (Stream-enterer) বলতে নির্বাণমূখী ধর্মস্রোতে নিমর্জনকে বলা হয়, যা স্রোতাপন্নকে অমৃতলোক নির্বাণের দিকে নিয়ে যায় এবং নির্বাণ উপলব্দির প্রথম স্তরকে বলা হয়। স্রোতাপন্নের চার অপায়-দ্বার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়। ভিক্ষু, শ্রামণের, ভিক্ষুনী, গৃহী, উপাসক ও উপাসিকা যে কেহ বিদর্শণ ভাবনা দ্বারা নির্বাণ-মার্গের প্রথম সোপানে অর্থাৎ স্রোতাপত্তি লাভ করতে পারেন।

স্রোতাপন্ন তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা : (১)সত্তক্খত্তু স্রোতাপন্ন (২)কোলাংকোল স্রোতাপন্ন (৩)একবীজি স্রোতাপন্ন।

(১)সত্তক্খত্তু স্রোতাপন্ন : যিনি ক্রমাগত সাত জন্ম কামসুগতি ভূমিতে (মনুষ্য ও অধ:স্তন ছয় দেবলোক) জন্ম ধারণ করত: সপ্তম জন্মে অর্হত্ব মার্গ লাভ করে অনুপাদিশেষ নির্বাণ লাভ করেন তিনিই সত্তক্খত্তু স্রোতাপন্ন। আনন্তরীয় কর্মদোষে (যেমন : ১.মাতৃ হত্যা ২.পিতৃহত্যা ৩.অর্হৎ হত্যা ৪.বুদ্ধের শরীর হতে রক্তপাত ঘটানো ৫.সংঘভেদ ৬.সদ্ধর্ম-চ্যুত ইত্যাদি) দোষীহীন ব্যক্তিরা বিদর্শণ ভাবনা দ্বারা সত্তক্খত্তু স্রোতাপন্নে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।

(২)কোলাংকোল স্রোতাপন্ন : এক শ্রেষ্ঠ কামসুগতি কুল হতে অন্য শ্রেষ্ঠতর কামসুগতি কুলেতে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন বলে কোলাংকোল স্রোতাপন্ন বলে। এ শ্রেণী স্রোতাপন্ন দ্বিতীয় জন্ম হতে ষষ্ঠ জন্মের যে কোন এক জন্মে কর্ম-বিপাকানুযায়ী কামসুগতি ভূমি হতে অর্হত্ব পদ লাভ করে অনুপাদিশেষ নির্বাণ লাভ করে থাকেন।

(৩)একবীজি স্রোতাপন্ন : যিনি স্রোতাপত্তি মার্গ লাভ করে একই জন্মে অর্হত্ব মার্গে উন্নীত হয়ে অনুপাদিশেষ নির্বাণ লাভ করেন। একবার মাত্র জন্ম গ্রহণের হেতু আছে বলে একবীজি বলে।

স্রোতাপত্তি মার্গফল লাভ করতে হলে দশটি সংযোজনের মধ্যে প্রথম তিনটি সংযোজন ছিন্ন করতে হয়। দশটি সংযোজন হল- (১)সৎকায়দৃষ্টি (২)বিচিকিচ্ছা (৩)শীলব্রত পরামর্শ (৪)কামরাগ (৫)ব্যাপাদ (৬)রূপরাগ (৭)অরূপরাগ (৮)মান (৯)ঔদ্ধত্য (১০)অবিদ্যা।

সম্যক স্মৃতি অর্থাৎ বিদর্শণ ভাবনা অনুশীলন করলে প্রথম তিনটি (১)সৎকায়দৃষ্টি (২)বিচিকিচ্ছা (৩)শীলব্রত পরামর্শ ছিন্ন করতে পারলে নির্বাণের প্রথম সোপান স্রোতাপত্তি মার্গে উন্নীত হওয়া যায় এবং চার অপায়দ্বার বন্ধ করতে সমর্থ হয়। (১)সৎকায়দৃষ্টি- পঞ্চস্কন্ধ বা এই ভৌতিক দেহকে আমি, আমার, আমার-দেহ, আমার-সংসার, আমার-স্ত্রী, আমার-পুত্র-কন্যা, ঘর-বাড়ি, টাকা-পয়সা, বিত্ত-সম্পদ প্রভৃতি সব কিছু আমার বিশ্বাস করাটাই সৎকায়দৃষ্টি। সংক্ষেপে পঞ্চস্কন্ধকে আমিত্ব ধারণা করাটাই সৎকায়দৃষ্টি।

পঞ্চস্কন্ধ বা ভৌতিক দেহকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়- রূপস্কন্ধ ও নামস্কন্ধ যেমন: বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান স্কন্ধকে একত্রে নাম সংজ্ঞায় অবিহিত করা হয়। নাম রূপের সমবায়ে ব্যক্তি বা সত্ত্বার উৎপত্তি। আবার এ ব্যক্তি বা সত্ত্বাকে বত্রিশ প্রকার অশুচি এবং বেয়াল্লিশ প্রকার ধাতু; সংক্ষেপে চারি ধাতু যেমন: পৃথিবী, অপ, তেজ ও বায়ু হিসাবে বিশ্লেষণ করলে পৃথক ভাবে কোথাও ব্যাক্তির অস্তিত্ব পাওয়া যায়না। উপরোক্ত আলোচ্য বিষয়গুলি নিন্মে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-

রূপস্কন্ধ:- রূপ হচ্ছে যে কোন আকৃতি যুক্ত দৃশ্যমান ভৌতিক বস্তুই রূপ বা রূপস্কন্ধ। রূপ প্রধানত দুই প্রকার। যথা : নিস্পন্ন এবং অনিস্পন্ন। আবার নিস্পন্ন রূপ ১৮ প্রকার। অনিস্পন্ন রূপ ১০ প্রকার। সর্বমোট ২৮ প্রকার রূপস্কন্ধ।

নিস্পন্ন রূপ :
১.মহাভূত রূপ- পৃথিবী ধাতু, অপ ধাতু, তেজ ধাতু ও বায়ু ধাতু।

২.প্রসাদ রূপ- চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা ও কায়।

৩.গোচর রূপ- রূপ, রস, শব্দ, গন্ধ ও স্পর্শ।

৪.ভাব রূপ- স্ত্রীভাব ও পুংভাব।

৫.হৃদয় রূপ- হৃদয় বস্তু।

৬.জীবিত রূপ- জীবিতেন্দ্রিয়।

৭.আহার রূপ- কবলীকৃত আহার।

অনিস্পন্ন রূপ:
১.পরিচ্ছেদ রূপ- আকাশ ধাতু।

২.বিজ্ঞপ্তি রূপ- কায় বিজ্ঞপ্তি ও বাক্য বিজ্ঞপ্তি।

৩.বিকার রূপ- লঘুতা, মৃদুতা, কর্মন্যতা, উপায়, সন্তুতি, জড়তা ও অনিত্যতা।

বত্রিশ প্রকার অশুচি এবং ধাতু ভেদে বিয়াল্লিশ প্রকারের বর্ণনা (২০+১২+৬+৪) :
১.পৃথিবী ধাতু বিশটি- (১)কেশ (২)লোম (৩)নখ (৪)দন্ত (৫)ত্বক (৬)মাংস (৭)স্নায়ু (৮)অস্থি (৯)অস্থিমজ্জা (১০)বৃক্ক (১১)হৃদয় (১২)যকৃৎ (১৩)ক্লোমা (১৪)প্লীহা (১৫)ফুসফুস (১৬)অন্ত্র (১৭)অন্ত্রবন্ধনী (১৮)উদরীয় (১৯)বিষ্টা (২০)মগজ

২.অপধাতু ১২টি- (১)পিত্ত (২)শ্লেস্মা (৩)পুঁজ (৪)রক্ত (৫)স্বেদ বা ঘর্ম (৬)মেদ (৭)অশ্রু (৮)বসা (চর্বি) (৯)থুথু (১০)সিকনি (১১)রসিকা (১২)মুত্র।

৩.বায়ু ধাতু ৬টি- (১)উর্দ্ধগামী বায়ু (২) অধোগামী বায়ু (৩) কুক্ষিশয় বায়ু (৪) কোষ্টাশয় বায়ু (৫)প্রত্যঙ্গানুসায় বায়ু (৬) নিস্ক্রমনশীল বায়ু।

৪.তেজ ধাতু ৪টি- (১)সন্তাপ তেজধাতু (২)জীর্ণ তেজধাতু (৩)দাহ তেজধাতু (৪)পাচক তেজধাতু।

নামস্কন্ধ:-
(১)বেদনা স্কন্ধ- বেদনা অর্থ অনুভূতি বুঝায়। মনোসঞ্জাত বা মনের মধ্যে উৎপন্ন অনুভূতিকে বলা হয় বেদনা বা বেদনা স্কন্ধ।

(২)সংজ্ঞা স্কন্ধ- ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বিষয় বা অবলম্বন ইন্দ্রিয় ধারে পতিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে বিষয় সম্বন্ধে প্রথম যে প্রতীতি জন্মে তাকে বলা হয় সংজ্ঞা। সংক্ষেপে বেদনা অনুভূতিকে জানার নাম সংজ্ঞা বা সংজ্ঞা স্কন্ধ।

(৩)সংস্কার স্কন্ধ- সংস্কার অর্থে মনোবৃত্তি সমূহকে বুঝায়। বেদনা ও সংজ্ঞা ব্যতিত অবশিষ্ট পঞ্চাশ প্রকার মনোবৃত্তি বা চৈতসিক সমূহকে সংস্কার বলে।

(৪)বিজ্ঞান স্কন্ধ- জানা অর্থে বিজ্ঞান। চিত্ত বা মনকে বলা হয় বিজ্ঞান বা বিজ্ঞান স্কন্ধ। বিজ্ঞান চিন্তা বা চিত্ত প্রবাহ মাত্র। মনের দ্বারা অনুভূতি সঞ্জাত জ্ঞাত বিষয়ে প্রাপ্তির জন্য কর্ম প্রচেষ্টার দ্বারা শব্দ বিষয়ের নাম বিজ্ঞান বা বিজ্ঞান স্কন্ধ।

উপরোক্ত আলোচ্য পঞ্চস্কন্ধ বা ভৌতিক দেহকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করলে কোথাও ব্যক্তির অস্তিত্ব পাওয়া যায়না এবং এক সময় অহংবোধ বা আমিত্ব তিরোহিত সৎকায় দৃষ্টি ছিন্ন হয়।

(২)বিচিকিচ্ছা- বিচিকিচ্ছা হচ্ছে কর্ম ও কর্মফলের প্রতি সন্দেহ। বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের অসীম গুণাবলী ও অনন্ত প্রভাব সম্বন্ধে অবিশ্বাস। ভাবনার দ্বারা দু:খ মুক্তি সম্ভব নয়। এ সকল ধারনার সন্দেহ জাগা এবং নিজের জীবন সম্পর্কে ১৬ প্রকার সন্দেহ পোষন করাই বিচিকিচ্ছা।

বিচিকিচ্ছা ছিন্ন করার উপায় হচ্ছে সাধক প্রথমে নাম রূপের উৎপত্তি ও কারণ সমূহ পর্যবেক্ষণ করেন এবং নাম রূপের বর্তমানে যেরূপে হেতু হতে তার উৎপত্তি অতীতেও সে রূপে হেতু হতে তার উৎপত্তি হয়েছিল এবং ভবিষ্যতেও তার উৎপত্তি হবে তা তিনি পুন:পুন দমন করেন ও বিচার করেন। তার ১৬ প্রকার সংশয় বা বিচিকিচ্ছা যেমন-
(১)আমি কি অতীতে ছিলাম?

(২)আমি কি অতীতে ছিলাম না?

(৩)কি আমি ছিলাম?

(৪)কিরূপ ছিলাম?

(৫)কিরূপ অবস্থা হতে কিরূপ অবস্থায় আমার পরিবর্তন হয়েছিল?

(৬)আমি ভবিষ্যতে থাকব?

(৭)আমি ভবিষ্যতে থাকব না?

(৮)কি হব?

(৯)কি রূপ হব?

(১০)কিরূপ অবস্থা হতে কিরূপ অবস্থায় আমার পরিবর্তন হবে?

(১১)আমি কি বর্তমানে আছি?

(১২)আমি কি নাই?

(১৩)আমি কি হয়ে আছি?

(১৪)কিরূপ আছি?

(১৫)আমি কোথা হতে এসেছি? এবং

(১৬)আমি কোথায় যাব? – ইত্যাদি বিদূরিত হয়।

(৩)শীলব্রত পরামর্শ- শীলব্রত পরামর্শ হচ্ছে মিথ্যাদৃষ্টির মূলে ব্রত আচরনাদির দ্বারা মুক্তি লাভের বিশ্বাস। মুক্তি লাভেচ্ছোয় বিভিন্ন ব্রতাদি পালনের আনুষ্টানিক নিয়মকে শীলব্রত পরামর্শ বলে। মানত, সিন্নি ইত্যাদিও শীলব্রতের পর্যায়ভূত।

ভগবান বুদ্ধ দীর্ঘ নিকায়ের ব্রহ্মজাল সূত্রে ৬২ প্রকার মিথ্যাদৃষ্টির উল্লেখ করেছেন। যথা :

(ক) শাশ্বতবাদ…………………. ৪ প্রকার

(খ) একাংশ শাশ্বতবাদ…………. ৪ প্রকার

(গ) আস্তানন্তবাদ……………….. ৪ প্রকার

(ঘ) অমরাবিক্ষেপবাদ…………… ৪ প্রকার

(ঙ) অধীত্য সমুৎপন্নবাদ……….. ২ প্রকার

(চ) সংজ্ঞীবাদ……………………৪ প্রকার

(ছ) অসংজ্ঞীবাদ………………… ৮ প্রকার

(জ) নৈবসংজ্ঞ-নাসংজ্ঞীবাদ……. ৮ প্রকার

(ঝ) উচ্ছেদবাদ………………… ৭ প্রকার

(ঞ) দৃষ্টিধর্ম নির্বাণবাদ…………. ৫ প্রকার

(ট) পরিত্রাসিত-বিস্ফান্দিতবাদ..... ১২ প্রকার
_____________________________________
সর্বমোট- ৬২ প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি।

সম্যক স্মৃতি অনুশীলনের দ্বারা ভাবনাকারীর যখন সম্যক দৃষ্টি লাভ হয় তখন শীলব্রত পরামর্শ ছিন্ন হয়ে যায়। ভাবনা কর্মের নির্বাচিত আলম্বনে স্থির দৃষ্টি আবদ্ধকরে প্রথম ধ্যান চিত্তে বিতর্ক, বিচার, প্রীতি, সুখ ও একাগ্রতাই ধ্যানাঙ্গরূপে বিদ্যমান থাকে। এই প্রথম ধ্যান অর্পনার (চিত্তকে আলম্বনময়) সঙ্গে (১)চিত্তকে পরিচালনা করে (২)তথায় নিবিষ্ট করে ও রক্ষা করে (৩)ধ্যানাধিষ্টান করার পর্ব নির্ধারন করে (৪)ধ্যান হতে নির্ধারিত কালান্তে উত্তিত হয় (৫)পুন:পুন প্রত্যবেক্ষণ করতে থাকেন। এই পঞ্চ অভ্যাসে ধ্যানকে বশীভূত (আয়ত্ব) করার উদ্দেশ্য যেন বিতর্কাদি স্থুল অঙ্গ পরিত্যাক্ত হয় এবং চেষ্টা দ্বারা বিচারাধি সুক্ষ্ণ অঙ্গ উৎপন্ন হয়ে যথাক্রমে ও যথাযোগ্যভাবে দ্বিতীয় ধ্যানাদির প্রাপ্তি ঘটে। অর্থাৎ নীবরণের অবিশ্রান্ত প্রতিরোধ ঘটে। তৃতীয় ধ্যান লাভের জন্য সে আনাপান স্মৃতিতে প্রীতি অন্তনিহিত হয়ে সুখ আর একাগ্রতা এই দুই অঙ্গ যুক্ত হয়ে তৃতীয় ধ্যান উৎপন্ন হয়। এ প্রকারে যোগী প্রীতি বিমুক্ত সুখের মাধ্যমে অর্পনা সমাধি লাভ করে তৃতীয় ধ্যান লাভ করেন। প্রীতি বিমুক্ত সুখের মাধ্যমে অর্পনা সমাধি লাভ করে তৃতীয় ধ্যান লাভ করেন। চতুর্থ ও পঞ্চম ধ্যান একাগ্রতার প্রতিপক্ষ হচ্ছে কামছন্দ। এই কামছন্দে পঞ্চইন্দ্রিয় ও তাদের আলম্বনের যথার্থ স্বভাব অনিত্য, দু:খ ও অনাত্মা অর্থাৎ ত্রিলক্ষন জ্ঞান দ্বারা তার স্বভাব দেদীপ্যমান হয়। তা’ দ্বারা প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়।

এই প্রজ্ঞা দ্বারা তৃষ্ণা ক্ষয় হয় এবং প্রতিভাগ নিমিত্তি উৎপন্ন হয়। উৎপত্তির সঙ্গে সঙ্গে চিত্তের পঞ্চনিবরণ স্তম্ভহীন স্বগৃহের ন্যায় উপাচার সমাধি প্রাপ্ত হয়। ধ্যানাঙ্গের উৎপত্তিতে অর্পনার উৎপত্তি হয়। এই উপাচারের পরবর্তী জবন (বেগ) অনুলোম জ্ঞান । এই অনুলোম জ্ঞান ৩৭ প্রকার বোধিপক্ষীয় ধর্ম হৃদয়ঙ্গম করা; অনুকুল বলেই অনুলোম জ্ঞান। অনুলোম জ্ঞানের পরে নির্বাণকে অবলম্বন করে গোত্রভূ জ্ঞান উৎপন্ন হয় এবং গোত্র ত্যাগ করে লোকোত্তর গোত্রে আবর্তিত হলে মার্গক্ষণ উৎপন্ন ও নিরূদ্ধ হয়। এই ক্ষণে (১)দু:খ সত্য প্রকটিত হয় (২)সৎকায় দৃষ্টি বা আত্মবাদ, বিচিকিচ্ছা ও শীলব্রত পরামর্শ ধংস হয় (৩)নির্বাণ প্রত্যক্ষীভূত হয়। (৪)আর্যঅষ্টাঙ্গিক মার্গের অনুশীলন হয়। এটাই স্রোতাপত্তি মার্গ চিত্ত।

স্রোতাপত্তি মার্গ লাভীদের নিম্ন বর্ণিত কর্মপথ গুলি ক্ষয় হয়। যেমন :
১.ক্লেশ ধ্বংস হয় ৫টি যেমন: (১)দৃষ্টি (২)বিচিকিৎসা (৩)স্ত্যানমিদ্ধ (৪)অহ্রী (৫)অনপত্রপা।

২.আসব ক্ষয় হয় ১টি যেমন: (১)দৃষ্টাসব।

৩.উপাদান উচ্ছিন্ন হয় ৩টি যেমন: (১)দৃষ্টি উপাদান (২)শীলব্রত উপাদান (৩)আত্মবাদ উপাদান।

৪.নীবরণ বিলীন হয় ৩টি যেমন: (১)স্ত্যনমিদ্ধ (২)উদ্ধত্য-কৌকৃত্য (৩)বিচিকিৎসা।

৫.অনুশয় নি:শেষ হয় ২টি যেমন: (১)দৃষ্টানুশয় (২)বিচিকিৎসানুশয়।

৬.সংযোজন ছিন্ন হয় ৩টি যেমন: (১)সৎকায় দৃষ্টি (২)বিচিকিৎসা (৩)শীলব্রত পরামর্শ।

৭.অকুশল চিত্ত ক্ষয় প্রাপ্ত হয় ৫টি যেমন: (১)লোভের দৃষ্টিগত সম্প্রযুক্ত চিত্ত ৪টি (২)মোহের বিচিকিৎসা সম্প্রযুক্ত চিত্ত ১টি।

স্রোতাপত্তি মার্গ জ্ঞান লাভের লক্ষণ:
(১)সৎকায়দৃষ্টি, বিচিকিচ্ছা বা সন্দেহ ও শীলব্রত পরামর্শ ছিন্ন করেন।

(২) স্রোতাপন্ন পুদ্গলের সংসার বিচরণ দীর্ঘ হয় না।

(৩)লোভ, দ্বেষ, মোহ উৎপত্তির সাথে সাথে স্মৃতির প্রজ্ঞা দিয়ে ছিন্ন করতে চেষ্টা করেন।

(৪)বুদ্ধের অনুশাসন ব্যতীত দু:খ মুক্তি (নির্বাণ) উপলব্দি সম্ভব নয় এ রূপ যথার্থ জ্ঞান জানা থাকে।

(৫)কোন কৃতপাপ কর্ম থেকে থাকলে সহসা মুক্ত হতে চেষ্টা করে।

(৬)স্বীয় আচরণকৃত শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা ভঙ্গ করে না।

(৭)বুদ্ধ বা ভিক্ষু সংঘ দেশিত ধর্ম দেশনা শ্রদ্ধা সহকারে শ্রবণ করে।

(৮)ধর্ম শ্রবণকৃত জ্ঞানে জ্ঞানী হয়ে সুখে থাকে।

(৯)অনাসক্ত জীবন লাভ করেন।
________________________________________________________________________________________________________
সংকলনে : প্রদীপ কুমার বড়ুয়া, অবসর প্রাপ্ত উর্দ্ধতন হিসাব নিরীক্ষক। দ.ঘাটচেক, রাঙ্গুনীয়া, চট্টগ্রাম। 
তথ্য সংগ্রহ :
১.বিদর্শন ভাবনা – শ্রী প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া (ধর্ম বিহারী থের)।
২.চারি আর্যসত্য – বিদর্শনাচার্য তেমিয়ব্রত বড়ুয়া (আশিন খেমিকা ভিক্ষু)।
৩.বিদর্শন ধ্যান অনুশীলন সহায়ক – সম্পাদনা – প্রদীপ কুমার বড়ুয়া।
৪.ত্রিপিটক পরিচিতি- সুদর্শন বড়ুয়া।

(সংগৃহীত)

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement