আমেরিকা
আসার আমার কোন স্বপ্ন ছিল না
ভান্তে গুণরত্ন,
প্রতিষ্ঠাতা:-ভাবনা সোসাইটি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, আমেরিকা।
দালাই লামা ও ভান্তে
গুণরত্ন
সত্যি
বলতে কী, আমার কখনোই কোথাও যাবার কোন স্বপ্ন ছিল না!
শৈশবে
আমার একটা ইচ্ছা ছিল ইংরেজি শেখার। আমার ভাই আমাকে কিছু ইংরেজি শব্দ শিখিয়েছিলেন, সেগুলোই
বারবার বলতাম। পরে আমার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে ইংরেজি শেখাতে লাগলেন, এবং জিজ্ঞেস
করতো, এই ইংরেজি শিখে আমি কি করবো। ৮-৯ বছরের আমি, জানি না আসলেই কী করবো, তবে বলতাম,
আমি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করবো এবং এ ভাষাতেই ধর্মশিক্ষা দেবো। কোথায় আমি শেখাবো, কোথায়
আমি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করবো—আমি কিছুই জানতাম না। সবকিছুই যেনো স্বাভাবিকভাবেই ভাঁজ
খুলে গেলো - উত্তম ইংরেজি না শিখলেও তবে যথেষ্ঠ ইংরেজি শেখা হয়েছে, ইংরেজিতে ধর্ম ও
পালি শিখেছি।
প্রব্রজ্যা
ও উপসম্পদা গ্রহণের পর ধর্ম ও বিনয় শিক্ষা গ্রহণ করি। শ্রীলংকায় তখন একটি বৌদ্ধ মিশনারী
বিদ্যালয় ছিল (মহাবোধি সোসাইটি)। সেখানে পড়ার জন্য ১০ জনকে নির্বাচিত করে কিন্তু একজন
ভর্ত্তি হলো না। সেটা পূরণ করতে হলে আবার বিজ্ঞাপন দেয়া সহ নানা কিছু করতে হবে। তাই
সেসব না করতে প্রধান ভিক্ষু উনার বন্ধুকে বললেন একজন ভিক্ষু খুঁজতে। সেই বন্ধু ভিক্ষুটি
আমাকে খুঁজে পেলেন আর আমি সেই বৌদ্ধ মিশনারী বিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম।
কোর্সটি
ছিল তিন বছরের। আমি দেড় বছরেই শেষ করে ফেলি। কোর্স শেষে পরীক্ষা নিলে পাশ করি শুধু
আমি। আমাকে পাঠানো হলো ভারতে মহাবোধি সোসাইটির অধীনে ৫ বছর মিশনারী কাজ করতে। কাজ করছিলাম
ড. আম্বেদকরের অনুসারী দলিত শ্রেণীদের নিয়ে যারা ভারতে ছিল গরীব ও অষ্পৃশ্য।
সাড়ে
৪ বছর ধরে কাজের শেষে নিজেকে খুব অসুস্থ অনুভব করছিলাম। সেই সময়ে মালেয়েশিয়া (বুড্ডিস্ট
মহাবিহার) থেকে আমাকে দুই বছরের জন্য শাসনের কাজ করতে আমন্ত্রণ জানায় আর সেখানে যাই।
২ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর সেখানে শাসনের কাজে সময় কেটে যায়।
কে শ্রী ধর্মানন্দ
ভান্তে ও গুণরত্ন ভান্তে
সেই
সময়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে শ্রীলংকার বিহার প্রতিষ্ঠার জন্য একজন ভিক্ষুর প্রয়োজন দেখা দেয়।
তাঁরা সেখানে একটা সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তাঁদের সঙ্গে একজন বৃদ্ধ ভিক্ষু ছিলেন;
তিনি কাজকর্ম করতে পারছিলেন নাহ। সেজন্য তাঁরা একজন ভিক্ষু খুঁজছিলেন এবং আমার খবর
পেল। আমন্ত্রণ জানাল ৫ বছরের জন্য সময় দিতে বিহার প্রতিষ্ঠা করতে। আসলাম আর ২০টা বছর
সময় দিলাম বিহার প্রতিষ্ঠায়।
সেখান
থেকে এসে শুরু করলাম ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ‘ভাবনা সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠা আর সময়ান্তরে পরিপূর্ণ
প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল।
এভাবেই
আমার জীবনে ঘটনাগুলো ঘটেছে একটির পর একটি।
ধর্ম দেশনায়
আমার
কোন স্বপ্ন ছিল না। আমার ইচ্ছা ছিল শুধুমাত্র ইংরেজি শেখার সেই শৈশবে এবং ধর্মশিক্ষা
দিতে সে ভাষায়। আমি জানতাম নাহ সেই জায়গাটি কোথায়। পরিশেষে দেখা গেলো, যে দরজাটা খুলেছে
সেটা হলো সারা পৃথিবীর দরজা। আর এখন আমি সেটাই করছি ভাবনা সোসাইটিতে।
**********************************************************************************************
টীকা: অনুবাদিত লেখাটি ইউটিউবে Dhammatube
চ্যানেলে ভান্তে গুণরত্নের “Did you have a dream of comimg to the USA’ প্রশ্নের
উত্তর।
ভান্তে গুণরত্ন: বৃটিশ শ্রীলংকার প্রকৃতি ঘেঁষা ছোট একটি
গ্রাম হেনোপোলায় ডিসেম্বর ৭, ১৯২৭ জন্ম পরম শ্রদ্ধেয় ভান্তে গুণরত্নের। ভারত, মালেয়েশিয়া,
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিহারভিত্তিক শাসনের কাজ করেন এবং ১৯৭৮ সালে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় বনজঙ্গল
ঘেরা ৯৭ একর জুড়ে ‘ভাবনা সোসাইটি” প্রতিষ্ঠা শুরু করেন যা এখন আমেরিকায় সুপরিচিত থেরবাদ
ধারার ভাবনা অনুশীলনের শান্তিময় স্থান। পরম শ্রদ্ধেয় গুণরত্ন ভান্তে ২০২৪ সালে ৯৬ বছর
বয়সেও ভাবনা কোর্স পরিচালনা ও ধর্মদেশনা দিয়ে যাচ্ছেন “ভাবনা সোসাইটি”তে।
ভাষান্তর: রতন জ্যোতি
ভিক্ষু, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪।
0 Comments