বুদ্ধগয়ায় খুঁজে পাই ভাবনা শিক্ষক
জোসেফ গোল্ড স্টেইন
আমি
বুদ্ধের ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি যখন
পীচ কোরের সদস্য হয়ে থাইল্যণ্ডে যাই।
এটি ছিল ষাট দশকের
মাঝামাঝি। পীচ কোরের কর্মকাণ্ড
শেষ হলে আমি অনেক
বৌদ্ধবিহার দেখতে যাই এবং স্বল্প
ভাবনা অনুশীলন করে তার স্বাদ
অনুভব করি।

শুরু
করলাম নিজে নিজে ভাবনা
অনুশীলন করা। এবং উপলব্ধি
করতে পারি খুব দ্রুত
যে আমার একজন ভাবনা
আচার্য লাগবে ভাবনা শিখতে। কারণ আমি শুরু
করছিলাম তখন দ্বিধাগ্রস্থ হতে।
আমি ভাবনায় নানাকিছু মেশাতে শুরু করছিলাম। তাই
আমি আবার এশিয়ার দিকে
যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিলাম,
ভাবলাম থাইল্যণ্ডে যাই আবার। তার
আগে ভারতে ভ্রমণের জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমি ভারতের ধ্যানগুরুর অনেকের নাম, মন্দির, আশ্রমের
নাম-ঠিকানা পেয়েছিলাম। সেজন্য সেগুলো দেখতে সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে রত হলাম। নানা
পাহাড়-পর্বত ধরে, নানা স্টেশনে
থেমে ভ্রমণটা চলছিল।
ডিসেম্বর
মাস তখন।
ভারতে
নতুন হওয়ায়, আমি উপলব্ধি করতে
পারছিলাম নাহ, সেই সময়টা
শীতকাল হতে পারে। সমস্ত
ঘরের উপরে বরফে ছেয়ে
গেছে আর সমস্ত তিব্বতিরা
দক্ষিণে চলে গেছে। তাই
আমি সেখানে থামলাম। একটা আশ্রমে থাকছি
কিন্তু মনে হলো এই
আশ্রমটা আমার জন্য উপযুক্ত
নয়।
ফিরে
গেলাম দিল্লীতে।
ভেবে
উঠতে পারছিলাম নাহ কি করবো।
একদিন হেঁটে যাচ্ছি এয়ারলাইনসের অফিসের দিকে এবং ভাবছি
থাইল্যণ্ড চলে যাবো। সেই
অবস্থায় কোন এক শক্তি
এসে আমাকে থামিয়ে দিল, যা ছিল
অস্বাভবিক ধরনের এক অভিজ্ঞতা, আমি
আর এক পদক্ষেপও সামনে
দিতে পারছিলাম নাহ। এ ধরনের
অস্বাভাবিক ঘটনা জীবনে আর
কখনোই ঘটেনি।
আর সামনে না এগিয়ে পিছনে
ফিরলাম সে চিন্তা করে
যে বেনারসে যাবো; গঙ্গার পাড়ে বসবো আর
নিমগ্ন হবো আমার ভবিষ্যত
নিয়ে।
দিল্লী
ট্রেন স্টেশনে যাচ্ছি। ট্রেন স্টেশনে যাবার পথে হঠাৎ মনে
আসলো, আমি বুদ্ধগয়াতে যাবো,
যা ছিল অন্যদিকে। ১৯৬০-১৯৬৭ সালে, সে
সময় খুব অল্প সংখ্যক
পশ্চিমা মানুষের আনাগোনা ছিল ভারতে।
বুদ্ধগয়াতে
পৌঁছলাম। এটাই হলো বুদ্ধত্ব
লাভের স্থান। কিছু মানুষের সঙ্গে
কথা বললাম। তারা বললো, তারা
একজন ভাবনা আচার্য্যের কাছে ভাবনা অনুশীলন
করছেন, তিনি হলেন মুনীন্দ্রজী।
আমি
কোনদিনই তাঁর নাম শুনিনি,
উনার সম্পর্কে আমার কোন ধারণা
ছিল না তিনি কে।
তারা আমাকে বার্মিজ বিহারে নিয়ে গেলেন। বিহারটি
বার্মিজ তীর্থ যাত্রীদের জন্য থাকার জায়গা।
কিন্তু বার্মায় সে সময় রাষ্ট্রীয়
গণ্ডগোলের কঠিন সময়। তাই
বিহারটি শূন্যস্থানের মতো তখন। শুধুমাত্র
কয়েকজন পশ্চিমা ভ্রমণ পিপাসু মানুষরা আসা যাওয়া করছে।
বিহারের
ছাদের ওপরে মুনীন্দ্রজীর সঙ্গে
ভাবনার জন্যে বসতো আগ্রহীরা। আমি
বসলাম। তিনি ছোট দলের
প্রত্যেকের কাছে জিজ্ঞেস করতেন
কী উদ্দেশ্যে তাদের আসা এখানে, তাদের
আকাঙ্খা কি, ভাবনা অনুশীলনের
লক্ষ্য কি। নানা কারণে,
নানা লক্ষ্যে তারা এসেছেন এখানে,
বলছেন এক এক করে
সবাই।
কিন্তু
আমার লক্ষ্যটা ছিল অত্যন্ত পরিস্কার,
আর আমার কাছে এসে
যখন জিগ্যেস করলো বললাম তাঁকে,
আমি এসেছি প্রজ্ঞালোর জন্য (Aweakening), বোধি লাভের জন্য
(Enlightenment)। এটাই আমার আকাঙ্খা।
এরপর মুনীন্দ্রজী দেশনা দিতে লাগলেন বিদর্শন
ভাবনার প্রাথমিক নির্দেশনা নিয়ে।
প্রাথমিক
নির্দেশনার পর আমরা ভাবনা
অনুশীলন করা শুরু করলাম।
দেশনা শোনার পর আমার কাছে
মনে হলো, অনুভব করলাম,
আমি নিজের ঘরে ফিরে এসেছি,
যাকে আমি খুঁজে ফিরছি।
কারণ আমার মনে হলো,
নির্দেশনা সহজ সরল যদিও
খুবি সহজ নয় অনুশীলনটা;
তবে শরীর ও মনকে
প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করা খুব সহজ
পথ। না আছে কোন
আচারের, নাহ আছে কোন
আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন, না আছে সুদীর্ঘ
বক্ততা। অনুশীলনটা হলো শুধু বসে
পড়ুন এবং দেহ ও
মনকে পর্যবেক্ষণ করুন।
আর এটাই ছিল খুব
শক্তিশালী সূচনা কারণ এটি ছিল
আমার নিজেকে দেখার জন্য একটা সরাসরি
পথ, আমার জীবনে কী
সব দুঃখের কারণগুলো এবং সেগুলো থেকে
মুক্তি পাওয়ার সম্ভাব্যতা। তাই আমার মনে
হলো ভাবনা অনুশীলনটি এটা একটা সরাসরি
পথ। আর স্মৃতি অনুশীলন
শুরু করলাম।
মুনীন্দ্রজী
ছিলেন আমার প্রথম ভাবনা
শিক্ষক, খুঁজে পাই বুদ্ধগয়ায়।
মুনীন্দ্রজী:
বিদর্শন আচার্য। জন্ম: জুন ১৯৪৫, চট্টগ্রাম,
বাংলাদেশ। মৃত্যু: ১৪ অক্টোবর ২০০৩,
ভারত।
জোসেফ
গোল্ডস্টেইন: প্রথম আমেরিকান বিদর্শন আচার্য। (মে ২০, ১৯৪৪,
নিউইয়র্ক)। সহ-প্রতিষ্ঠাতা:
Insight Meditation Society, Massachusetts, USA.
অনুবাদিত
লেখাটি ইউটিউবে Joseph Goldstein এর “The Direct Path to
Realization” ধর্মদেশনা
থেকে প্রাপ্ত।
ভাষান্তর:
রতন জ্যোতি ভিক্ষু,
শ্রী
পঞ্ঞাসিহে ভাবনা কেন্দ্র,
পামডেল,
ক্যলিফোর্ণিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।
সেপ্টেম্বর
৪ , ২০২৪।
0 Comments