Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

রবীন্দ্র জীবন ও সাহিত্যকর্মে বুদ্ধ ভাবাদর্শ উৎস বড়ুয়া জয়

 


রবীন্দ্র জীবন ও সাহিত্যকর্মে বুদ্ধ ভাবাদর্শ
©উৎস বড়ুয়া জয়

বিএ(অনার্স), এম,এ (১ম শ্রেণীতে ১ম), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং পিজিডি এলআইএস ও এম.ফিল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।
রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিবিশ্বে ও চেতনাবিশ্বে গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্মের প্রভাব নানাভাবে লক্ষ্য করা যায়। গৌতম বুদ্ধের শাশ্বত কল্যাণের বাণী তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন তাঁর সাহিত্যে, গানে, কবিতা ও নাটকের মাধ্যমে। নাটক, কবিতা, গানে খুব তীব্রভাবে বুদ্ধচেতনা গ্রহণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের চেতনাবিশ্বের গৌতম বুদ্ধ ছিলেন সদাজাগ্রত। বৌদ্ধ ধর্মদর্শন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বৌদ্ধিক ভাবধারা আধুনিক কালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিশাল সাহিত্য রচনায় বাস্তব রূপ দিয়েছেন। রবীন্দ্র সাহিত্য, সংগীত এবং বহুমাত্রিক প্রতিভা বিকাশে বৌদ্ধিক চিন্তা-চেতনা ও ভাবাদর্শ গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বৌদ্ধধর্ম ও বিশাল বৌদ্ধ সাহিত্য ভাণ্ডারের অপূরণীয় উপাদান তিনি তাঁর সাহিত্যে ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূলভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। রবীন্দ্রনাথ সত্যিই ছিলেন বিশ্বমানবতার কবি। এই মানবতার বিরুদ্ধে ‘মানুষ-জন্তুর হুঙ্কারের’ বিরুদ্ধে সকর্তবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। বিস্ময়ের কথা এই যে, সে সময়ের সেই সতর্কবাণীটি যেমন সত্য ছিল, আজও তেমন সত্য। রবীন্দ্র সাহিত্য ও সংগীতে বৌদ্ধ প্রভাব কতটুকু তা বলে শেষ করা যায় না। রবীন্দ্রনাথ ও বৌদ্ধধর্ম বিষয় সম্পৃক্ত বিভিন্ন গ্রন্থ, প্রবন্ধ ও নানামুখী আলোচনা হলেও ‘রবীন্দ্র জীবন ও সাহিত্যকর্মে বুদ্ধ ভাবাদর্শ’ বিষয়ে গঠনমূলক এবং গবেষণাধর্মী তেমন বিশদ কোন আলোচনা হয়নি। রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধের অহিংসা, মৈত্রী ও মানবতাকে সাহিত্যে বৃহত্তর আঙ্গিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। বুদ্ধের মহান ভাবাদর্শ রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও ভাবনায় ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব প্রতিভাত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথের বিশাল সাহিত্য জগৎ এবং বহুমাত্রিক কাব্য প্রতিভা সংক্ষেপে আলোচনা করা অত্যন্ত কঠিন। তবু এ প্রবন্ধে সংক্ষিপ্তভাবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বুদ্ধসম্পৃক্ত বিষয়ের আলোকে নির্যাস তুলে ধরার প্রচেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস, সভ্যতা, সমাজ, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মধ্যে একটি বৃহত্তর অংশ জুড়ে রয়েছে বৌদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। সাহিত্যের সোনালি ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল নন্দিত অধ্যায় ঠাকুর পরিবারের ইতিহাস। ঠাকুর পরিবারের আদি পুরুষ জগন্নাথ কুশারী। পরবর্তী জয়রাম ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র নীলমণি ঠাকুর হতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের উদ্ভব। নীলমণির তিন পুত্র ও এক কন্যা। রামলোচন (১৭৫৭ জন্ম), রামমণি (১৭৫৯ জন্ম), রামবল্লভ (১৭৬৭ জন্ম) ও কমলামণি (১৭৭৩ জন্ম)। রামমণির পুত্র দ্বারকানাথ ঠাকুর (১৭৯৪-১৮৪৬)। অষ্টাদশ শতাব্দীর মানবতাবাদী দ্বারকানাথ ঠাকুরের উত্তরাধিকারী জ্যেষ্ঠপুত্র মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮১৭-১৯০৫) কর্মকাল ছিলেন তাৎপর্যপূর্ণ। ১৮৩৪ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়ে হয় রাম নারায়ণ চৌধুরীর কন্যা সারদা সুন্দরী দেবীর সাথে।
হাজার বছরের ঐহিত্য লালিত বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রতিবিম্ব রবীন্দ্রনাথের মানস গঠনে। আমরা দুচোখ বন্ধ করে নির্দ্ধিধায় বলতে পারি রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-চেতনা ও সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের এক বৃহৎ স্থান জুড়ে অধিকার করে আছে বৌদ্ধিক প্রভাব। কারণ বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) জন্ম। রবীন্দ্র মানস গঠনে বৌদ্ধ প্রভাব প্রতিফলনের উৎস তাঁর পারিবারিক প্রভাব অনস্বীকার্য। তাঁর জন্মের অনেক পূর্বেই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ তাঁর পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ও পুত্রপ্রতিম কেশব চন্দ্র ও কালী কমল গাঙ্গুলীকে সঙ্গে নিয়ে ১৮৫৯ সালে সিংহল (শ্রীলংকা) গমন করেন এবং সেখানে বৌদ্ধধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে জানতে কৌতূহলী হন। পরে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ লিখেন ‘আর্যধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মেও পরস্পর ঘাত প্রতিঘাত’ (১৯০১) ও ‘নানা চিন্তা’, সতেন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখেন ‘বৌদ্ধধর্ম’ (১৯০১), পুত্র প্রতিম কেশব চন্দ্র লিখেন উরধৎু ড়ভ ঈবুষড়হ (১৮৮৮) এবং তাঁর নির্দেশে রচিত সাধু অঘোনাথের‘শাক্যমুণি চরিত ও নির্বাণতত্ত্ব’ (১৮৮২)। আর তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্যে, উপন্যাসে, নাটকে, গল্পে, কাব্যে, প্রবন্ধে, কবিতায়, গানে, বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগের অজস্র নিদর্শন রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁকে বিপুলভাবে প্রেরণা ও অনুপ্রাণিত করেছিল বৌদ্ধ শাস্ত্রবিদ ও পণ্ডিত রাজেন্দ্রলাল মিত্রের লেখা, ঞযব ঝধহংশৎরঃ ইঁফফযরংঃ খরঃবৎধঃঁৎব ড়ভ ঘবঢ়ধষ (১৮৮২), ঝরৎ ঊফরিহ অৎহড়ষফ খরমযঃ ড়ভ অংরধ (১৮৭৯) কাব্যদ্বয় এবং পরবর্তীতে কৃঞ্চবিহারী সেন (১৮৪৭-১৮৯৫) এর ‘বুদ্ধদেব চরিত’ এবং ‘অশোক চরিত’(১৮৯২)।
রবীন্দ্রনাথের সামগ্রিক জীবন সাধনার প্রতি তীক্ষè বিশ্লেষণাত্নক দৃষ্টি ফেললে ক্রমশ মনে বিশ্বাস সঞ্চারিত হয় যে, রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত দূরের মানুষ। তাই রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে হলে সাধনা, শ্রম, নিষ্ঠা এবং সর্বোপরি সময়ের প্রয়োজন অপরিহার্য। মহাকারুনিক বুদ্ধের অহিংসা, মৈত্রী, করুণা, মুদিতা, উপেক্ষা, মানবতা, ত্যাগ ও হ্নদয়বত্তিকে বিশ্বকবি উপলব্ধি করেছিলেন। মহামানব গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা ছিল হিংসামুক্ত, লোভমুক্ত, পাপমুক্ত সুন্দর সমাজ ও মানবজীবন প্রতিষ্ঠা করা। তাঁর শিক্ষা ও ধর্মীয় নীতিতে কোন দেশ, কাল, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বা বৈষম্য ছিলনা।
রবীন্দ্র প্রতিভা বহুমাত্রিক। তাঁর সৃষ্টিকর্মেও বৈচিত্র্য সেটাই প্রমাণ করে। রবীন্দ্রনাথ একজন আন্তর্জাতিকবাদী, মানবতাবাদী, সর্বোপরি একজন অহিংসবাদী ছিলেন। তিনি মানবধর্ম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মকে বরণ করে নিতে পারেননি। তাঁর মতে, মানুষের সবচেয়ে বড়ো পরিচয় হচ্ছে, সে মানুষ। তিনি সবসময় মানবজাতির ঐক্যও সৌহার্দ্য স্থাপনের আহক্ষান জানান। আজকের দিনে এই কথা বলবার সময় এসেছে যে, মানুষ সর্বদেশের, সর্বকালের। তাঁর মধ্যে কোন জাতীয়তা বা বর্ণভেদ ছিল না। তাঁর চিন্তা-চেতনার প্রধান পরিচয় নিহিত আছে জীবনে, জ্ঞানে, প্রেমে ও কর্মেও সমন্বিত রূপের মধ্যে। বৌদ্ধধর্মের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য ও নীতি আদর্শ রবীন্দ্রনাথকে গভীরভাবে আকর্ষণ করেছে এ প্রসঙ্গে প্রবোধ চন্দ্র সেন বলেছেন, “হিংসা, বিশ্বমৈত্রী, করুণা, ত্যাগ, ঐক্য, সংহতি এবং সর্বমানবের সমতা এই কষ্ঠটি নীতির জন্য বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও রবীন্দ্র সংস্কৃতি গভীর যোগসূত্রে গাঁথা।
আপনারে দীপ করি জ্বালো;
দুর্গম সংসার পথে অন্ধকারে দিতে হবে আলো।
সত্য লক্ষ্যে যেতে হবে অসত্যের বিঘ্ন করি দূর;
জীবনের বীণাযন্ত্রে বেসুরে আনিতে হবে সুর।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জগতে যা কিছু যত মহৎ, তা লাভের জন্য তত বেশী দুঃখ কষ্টকে বরণ করে নিতে হয়। নচেৎ জীবন বৃক্ষে ফুল ফোটানো এবং ফল ফলানো যায় না। জ্ঞান আহরণ করতে হলে ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতিকে হাসিমুখে বরণ করে বিরামহীন সাধনায় রত হতে হবে। তা নাহলে জীবন সাধনায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। মহামনীষীদের জীবনপঞ্জী তার প্রমাণ্য সাক্ষ্য বহন করে।
মহামানব বুদ্ধ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রভাবে ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে। এই প্রকাশের দীপ্তিতে ভারতের মহিমা একদিন সমগ্র পৃথিবীতে পরিব্যাপ্ত হয়ে পড়ে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের জীবন সাধনায় বুদ্ধ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির এই কালজয়ী মহিমা সার্থকরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। রবীন্দ্র সাহিত্যে বুদ্ধ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে, বাংলা ও ভারতীয় সাহিত্যে তার তুলনায় বিরল।৭
কালের আবর্তনে সাম্প্রদায়িক আক্রমণে, অত্যাচারে, বুদ্ধ বিদ্বেষীদের বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হয়ে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রায় লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এহেন সংকটময় মূহুর্তে ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে ভারতীয়দের মধ্যে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে ও শিক্ষিত সমাজে বৌদ্ধধর্ম ও দর্শনের অনুসন্ধান, লুপ্ত গৌরব পুনরুদ্বার এবং রীতিমত পঠন-পাঠন শুরু হয়। তখন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবার ছিল ব্রাহ্মণ্য মতাবলম্বী। তথাপি তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে, হিন্দুধর্মের যাগযজ্ঞ, আচার-অনুষ্ঠান সর্বস্বতা এবং পৌত্তলিকতা; ভারতীয় জনজীবনে খৃষ্টান ধর্মের প্রভাব বিস্তার; বিশেষ করে মুষ্টিমেয় বাঙালি বৌদ্ধদের বৌদ্ধধর্ম ও দর্শনের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটছে।
মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ লক্ষ্য করলেন যে, ব্রাহ্মধর্মের সাথে বৌদ্ধধর্মের নীতি আদর্শের অনেক বিষয়ে অসামঞ্জস্য বিদ্যমান। বৌদ্ধধর্মের যুক্তিবাদী বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী তাঁকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল। অতপর মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৫৯ খ্রি. ২৭ সেপ্টেম্বর বৌদ্ধরাষ্ট্র শ্রীলংকা গমন করেন। শ্রীলংকায় যাওয়ার সময় সফর সঙ্গী হয়েছিলেন সেই যুগের অসাধারণ প্রতিভা সম্পন্ন কেশব চন্দ্র সেন, কালী কমল গাঙ্গুলী এবং মহর্ষী দেবেন্দ্রপুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। শ্রীলংকায় অবস্থান কালীন সময়ে সেখানকার সুশৃঙ্খল রীতি-নীতি, জীবন-ধারা, সাধন-ভজন এবং সুসংগঠিত ভিক্ষুসংঘের সুসংযত জীবন যাপন দর্শনে অতীব মুগ্ধ ও অভিভূত। ফলত বৌদ্ধধর্মের প্রতি প্রভাবান্বিত হন।৮ তখন তাঁর দৃষ্টিতে বৌদ্ধধর্মের যুক্তিবাদী বিজ্ঞান সম্মত জীবন প্রণালী এবং ব্রাহ্মধর্মের যুক্তিমননের মধ্যে একটি সুগভীর বৈসাদৃশ্য ধরা পড়ে। মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীলংকা থেকে প্রত্যাবর্তনের পর ঠাকুর পরিবারে বৌদ্ধধর্ম, দর্শন ও সাহিত্যের পঠন-পাঠন বিশেষভাবে প্রধান্য লাভ করে এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও শাস্ত্রচর্চার একটি মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
রবীন্দ্র চিন্তাধারায় বৌদ্ধ ভাবাদর্শের প্রভাব যে সুনিভিড়তা প্রমাণ পাওয়া যায়, ১৯০৪ ও ১৯১২ সালে দুবার বুদ্ধেও জন্মস্থান ও প্রধান তীর্থ বুদ্ধগয়া গমনের মাধ্যমে। এয়াড়াও শ্যামদেশ (থাইল্যান্ড), জাপান, চীন, মায়ানমার, তিবক্ষত, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ইত্যাদি বৌদ্ধ প্রতিরূপ দেশ ও বুদ্ধেও প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা, অনুরাগ ও ভক্তিতে বিস্ময় প্রকাশ করে বোরোবুদুর মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে কবি বলেছেন-
সর্বগ্রসিী ক্ষুধানল উঠেছে জাগিয়া
তাই আসিয়াছে দিন, পীড়িত মানুষ মুক্তিহীন,
আবার তাহারে আসিতে হবে যে তীর্থদ্বারে শুনিবারে।
ঈাষাণের মৌনতটে যে বাণী রয়েছে চিরস্থির
কোলাহল ভেদ কওে শত শতাব্দীর আকাশে উঠিছে অবিরাম,
অমেয় প্রেমের মন্ত্র ‘বুদ্ধেও শরণ লইলাম’।৯
তথাগত বুদ্ধের বাণীতে রয়েছে মানব মুক্তির স্বাদ এবং গভীর মানবতাবোধ, যা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কবির হৃদয় অনুভূতিতে মানব প্রেমের প্রকাশ পায় ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতায়। তিনি মুক্তকন্ঠে ঘোষণা করেন-
আমি ঢালিব করুণার ধারা
আমি ভাঙ্গিব পাষাণ কারা।১০
পালি সাহিত্যের ‘ধর্মপদ’ গ্রন্থ রবীন্দ্রনাথের পছন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ ছিল। বিশ্বেও বিভিন্ন মনীষী ধর্মপদেও সর্বজনীন আবেদন, বিশ্বজনীনতা, মানবতা, নৈতিক জীবন, কাব্যশৈলী সর্বোপরি বিষয় ও রচনার গঠন বৈচিত্র্যেও জন্য গ্রন্থটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ১৪/১৫ বছর থেকে ৬৬ বছর পর্যন্ত একটানা লিখেছেন। বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ভাবাদর্শেও প্রতি রবীন্দ্রনাথের শ্রদ্ধা ছিল সুগভীর। জীবনের শেষ দিন অবধি বুদ্ধেও প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছেন। রবীন্দ্রনাথের জীবন, সাহিত্য ও চিন্তাধারাকে স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছে এই বৌদ্ধিক চেতনা।১১
বুদ্ধচর্চা ও বৌদ্ধিক অনুপ্রেরণা রবীন্দ্রনাথের আষ্টে-পৃষ্ঠে। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে শেষবারের মত মুখে মুখে আবারও রচনা করলেন মানুষের জয়গান-
ঐ মহামানব আসে;
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে
মর্ত্য ধূলির ঘাসে ঘাসে।
জয় জয় জয়রে মানব অভ্যুদয়,
মন্দ্রি উঠিল আকাশে।১২
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বহুমুখী সৃজনী প্রতিভার এক পরম বিস্ময়কর দিক হল রবীন্দ্র সংগীত। এর মধ্যে বুদ্ধ ও বৌদ্ধভাবনার অফুরন্ত উপাদান রয়েছে। বৌদ্ধধর্ম দর্শনের দুঃখ ও মৃত্যু বিষয়ক বৌদ্ধ ভাবনা রবীন্দ্র চিন্তার মানসে একটি বিরাট অংশ জুড়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজমান। রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধের দুঃখ ও মৃত্যু দর্শনকে কেন্দ্র করে তার সমাধান খুঁজতে গিয়ে তিনি আনন্দের সন্ধান পেয়েছেন। বৌদ্ধ দর্শন ভিত্তিক রবীন্দ্রনাথের গানের জগতে বৌদ্ধিক চেতনার প্রভাব ছিল লক্ষ্যনীয়। যেমন: দুঃখ যে তোর নয়রে চিরন্তন- এ গানটিতে বলা হয়েছে সুখ দুঃখ মরণ কোন কিছুই স্থায়ী নয়। ইহা পর্যায় ক্রমে াাবর্তিত হয়। মানুষের দুঃখের শেষ নেই। এই দুঃখ গভীর বিচিত্র অবর্ণনীয়।
বৌদ্ধভাবনা অবলম্বনে দুঃখ কেন্দ্রিক কবির অসংখ্য গান রয়েছে। যেমন- যেতে যদি হয় তবে (পূজা/৬১৪), দুঃখ যে তোর নয়ওে চিরন্তর (পূজা/৬১২), আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু (পূজা/২৪৮), দুঃখের তিমিওে যদি (পূজা/৬১৪), দুঃখের বেশে এসছে বলে (পূজা/২৩০) প্রভৃতি।১৩“জগতের কিছুইঅবিনশ্বও নহে। রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার অবশেষে ব্রহ্ম সাধনে প্রবৃত্ত হইয়া নিবার্ণ লাভ করির। রাখো রে ধ্যান, থাকরে ফুলের ডালি, ছিড়ুক বস্ত্র, লাগুক ধুলাবালি, কর্মযোগে তাঁর সাথে এক হয়ে ঘর্ম পড়ুক ঝরে (সাধনা)।”১৪
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে লিখিত “বৌদ্ধধর্ম” নামক গ্রন্থে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় সংস্করর্ণে গ্রন্থকার সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, “আজ আমরা প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাস বলতে প্রধানত বৌদ্ধযুগের ইতিহাসই বুঝি। আমরা আবিষ্কার করেছি যে-বৌদ্ধযুগ ছিল এদেশের সকল প্রকার শিক্ষা, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ঐতিহ্যবাহী সর্বাপেক্ষা গৌরবান্বিত স্বর্ণযুগ।”১৫ মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তদীয়পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীলংকা থেকে প্রত্যাবর্তনের পর যখন বৌদ্ধ ভাবধারায় পঠন-পাঠন, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অনুশীলন, অনুধাবনে নিমগ্ন, ঠিক এই সময়ে ১৯৬১ খৃষ্টাব্দে মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। কাজেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনে উত্তরাধিকার সূত্র ও পিতৃ সংস্কার রূপে জন্মলগ্ন থেকেই বৌদ্ধধর্মকে উপনিশ্রয় সম্পদ হিসাবে পেয়েছিলেন। যেই পরিবেশের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের জন্ম, সেই পরিবেশের মধ্যেই তাঁর বাল্য ও কৈশোর কাল অতিবাহিত। সুতরাং কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মসূত্রে ও পিতৃসংস্কারে বৌদ্ধধর্মকে জীবনের ভিত্তিরূপে লাভ করেছিলেন এতে কোনরূপ সংশয় নেই।১৬
১৩৪২ বঙ্গাব্দের ৪ঠা জৈষ্ঠ্য বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে কোলকাতা মহাবোধি সোসাইটিতে মহামানব গৌতম বুদ্ধ প্রসঙ্গে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “আমি যাঁকে অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে উপলব্ধি করি, তাঁর জন্মোৎসবে আমার প্রনাম নিবেদন করতে এসেছি। এ কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানের উপকরণগত অলংকার নয়, একান্তে নিভৃতে যা তাঁকে বার বার সমর্পণ করেছি, সেই অর্ঘ্যই আজ এখানে উৎসর্গ করি।১৭” কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের এই ভাষণ থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহামানব বুদ্ধকে রবীন্দ্র জীবনে আদর্শের প্রতীক হিসাবে মনমন্দিরে ঠাঁই দিয়েছেন।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “পথের সঞ্চয়” এর ১০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- “ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের অভ্যুদয় কালে এবং পরবর্তী যুগে সেই বৌদ্ধ সভ্যতার প্রভাবে এদেশে শিল্প, বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং সাম্রাজ্য শক্তির যেমন বিস্তার হয়েছিল এমন আর কোন কালে হয়নি।”১৮ মহামানব বুদ্ধকে কবিগুরুর অন্তরে কি রকম স্থান দিয়েছেন তা তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থ ও ভাবোক্তি থেকে প্রমাণিত হয়। যেমন, “বুদ্ধদেব” নামক গ্রন্থে কবি গুরু উল্লেখ করেছেন, “একমাত্র ভগবান বুদ্ধই সমস্ত জাত-পাত এবং বর্ণ বৈষম্য ভুলে গিয়ে সমস্ত বর্ণ-বৈষম্যের বেড়া সত্যের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়ে সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন।”১৯
বুদ্ধের সাধন ভূমি বুদ্ধগয়া বিশ্বের বুদ্ধানুরাগীদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। এই পবিত্র সাধনভূমি সম্পর্কে কবি গুরু বলেছিলেন- “একদিন বুদ্ধগয়াতে গিয়েছিলেন মন্দির দর্শনে, সেদিন এই কথা আমার মনে জেগেছিল, যাঁর চরণ স্পর্শে বসুন্ধরা একদিন পবিত্র হয়েছিল, তিনি যেদিন সশরীরে এই গয়াতে ভ্রমণ করেছিলেন, সেদিন কেন আমি জন্মাইনি, সমস্ত শরীর মন দিয়ে প্রত্যক্ষ তাঁর পুণ্যপ্রভাব অনুভব করিনি।”২০ কবিগুরুর এই ভাবোক্তি থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহামানব বুদ্ধের জীবদ্দশায় তাঁর কেন জন্ম হয়নি, তাই তীব্রভাবে নিজেকে নিজে ধিক্কার জানাচ্ছেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জীবনে যেমন বুদ্ধের মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন, তেমনি পরবর্তী সময়েও বুদ্ধের মহান স্মৃতি বিজড়িত বুদ্ধগয়া, লুম্বিনী, কুশিনগর ও সারনাথ প্রভৃতি বৌদ্ধ তীর্থস্থান সম্পর্কেও তাঁর মনে গভীর শ্রদ্ধা ও অনুরাগের জন্ম হয়। তাই তিনি পবিত্র তীর্থস্থান ও বৌদ্ধধর্ম অধ্যুষিত বৌদ্ধরাষ্ট্র সমূহ বিশেষ করে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, সুমাত্রা, মালয়, জাভা ও বালি- এমন কোন রাষ্ট্র নেই, যেখানে কবিগুরু বারংবার গমন করেননি। কোন কোন দেশে কবিগুরু তিন-চার বার পর্যন্ত গমন করেছেন।২১
বৌদ্ধ শাস্ত্রের প্রতি দেশের মানুষের উদাসীন্য লক্ষ্য করে কবিগুরু বলেছেন, “ইতিহাস বা ভারতীয় সংস্কৃতির বহুতর উপকরণ যে বৌদ্ধশাস্ত্রের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে সে বিষয়ে কোনরূপ সংশয় নেই। আমাদের দেশে বহুদিন অনাদৃত এই বৌদ্ধশাস্ত্র ইউরোপীয় পন্ডিতগণ উদ্ধার করতে প্রবৃত্ত হয়েছেন, আর আমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার প্রতিক্ষায় বসে আছি। ইহাই আমাদের দেশের পক্ষে দারুণতম লজ্জার বিষয়। সমস্ত দেশে পাঁচজন লোকও কি বৌদ্ধশাস্ত্র উদ্ধার করাকে চির জীবনের ব্রত রূপে গ্রহণ করতে পারে না? এই বৌদ্ধ শাস্ত্রের অভাবে ভারতবর্ষের সমস্ত ইতিহাস কানা হয়ে আছে।২২
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এইরূপ কথনের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে স্বীয় জীবনে আচরণ করে দেখিয়েছেন। যেমন-শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক গোঁসাইজিকে (নিত্যানন্দ বিনোদ গোস্বামী) বৌদ্ধধর্মে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য বৌদ্ধশিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রধান সিংহল ও বার্মা দেশে পাঠিয়ে ছিলেন। গোঁসাইজি দু’বছর কাল সেখানে অবস্থান পূর্বক পালি ভাষা, সাহিত্য ও বৌদ্ধদর্শনে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী হয়ে শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করেন। এতেও কবিগুরুর বৌদ্ধ শিক্ষানুরাগ ও বৌদ্ধপ্রাণতার প্রকৃষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়।২৩
কবিগুরু বুদ্ধের শিক্ষা ও আদর্শকে ধরে রাখার জন্য কিভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্রতী হয়েছিলেন তার শ্রেষ্ঠ প্রমাণ বিশ্ব-ভারতী। বিশ্বভারতীতে গৌতম বুদ্ধকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের পন্ডিতবর্গের আগমণে বৌদ্ধশাস্ত্র চর্চার প্রধান প্রাণকেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। ১৯০৬ সালে কাশী থেকে সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রীকে বিশ্বভারতীতে এনে বৌদ্ধশাস্ত্র পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করেছিলেন। শাস্ত্রী মহোদয় কর্তৃক ব্যাকরণ প্রকাশ আর কবিগুরু কর্তৃক পালি প্রকাশ। চারুচন্দ্র বসুর ধম্মপদ “গ্রন্থখানি আগা-গোড়া কন্ঠস্থ এবং মহাকবি অশ্বঘোষের ‘বুদ্ধচরিত্র’ মহাকাব্য বাংলায় অনুবাদ ইত্যাদি কর্মে বৌদ্ধশাস্ত্র চর্চার নবযুগের সূত্রপাঠ হয়। কালক্রমে তারই পরিণতিতে শান্তিনিকেতনে চীনা ভবনের সৃষ্টি হয়। শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী ও চীনাভবন প্রভৃতি সমগ্র প্রতিষ্ঠানটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়- নালন্দা, তক্ষশিলা, বিক্রমশিলা, সোমপুরী, ওদন্তপুরী প্রভৃতি যুগান্তকারী সংস্করণ। স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনের অধীনস্থ সমস্ত শিক্ষাকেন্দ্র, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনে শিক্ষাকেন্দ্রের জন্ম এবং সেখানকার পঠন-পাঠন দেখলে প্রাচীন যুগের বৌদ্ধ সংঘারাম বা বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের কথা মনে পড়ে এবং ইহাই দর্শকের নয়নগোচরে আসে।২৪
সমগ্র বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস ত্যাগের দীপ্তিতে সমুজ্জল হয়ে রবীন্দ্র মনে ধরা দিয়েছে। তাই ত্যাগ ধর্মের পূজারী রবীন্দ্রনাথকে বুদ্ধগুণের এই দিকটা বিশেষভাবে মুগ্ধ করেছে। রবীন্দ্রনাথের “কথা ও কাহিনী” নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ত্রিপিটক থেকে নেওয়া ঐতিহাসিক কাহিনীগুলো ত্যাগেরই উজ্জ্বল চিত্র। উক্ত কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত শ্রেষ্ঠভিক্ষা, মস্তক বিক্রয়, পূজারিনী, অভিসার, মূল্যপ্রাপ্তি ও নগরলক্ষ্মী প্রভৃতি কবিতায় বুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত ত্যাগের মহিমা প্রকাশ পেয়েছে। কবিগুরুর মহাকাব্যিক রসে এটাই আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নটীর পূজা (১৯২৬) নাটকে দেখা যায়, রাজকুমারী রত্মাবলী যখন ভিক্ষু উপালীকে নাপিতের ছেলে, ভিক্ষু সুনন্দকে গোয়ালার ছেলে ও ভিক্ষু সুনীতকে পুক্কুস জাতীয় বলে অবজ্ঞা করছিলেন, তখন ভিক্ষুণী উৎপলাবর্ণা বলেছেন-“রাজকুমারী,-এঁরা জাতিতে সবাই এক। ওঁদের আভিজাত্যের সংবাদ তুমি জান না”। এই উক্তির মধ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের অন্তরের গভীরে লুকিয়ে থাকা সত্য ব্যক্ত করা হয়েছে এবং এখানেই বৌদ্ধধর্মের সাথে রবীন্দ্রনাথের ভাবসাযুজ্য।২৫
ভারতবর্ষের বিভিন্ন যুগের পৌরাণিক আখ্যান অবলম্বনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কম নাটক রচনা করেননি । কিন্তু এর মধ্যে বৌদ্ধযুগের কাহিনী নিয়েই তিনি সর্বাধিক নাটক রচনা করেন। তাছাড়া বৌদ্ধযুগের আখ্যান অবলম্বনে রচিত প্রায় সবকটি নাটককেই তিনি বিভিন্ন সময়ে রূপান্তর সাধন করেছেন। পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে রচিত আর কোন নাটককে রবীন্দ্রনাথ এতবার এতরূপে লেখেননি।২৬ এতে বুদ্ধ ও বৌদ্ধ সাহিত্যের প্রতি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির নিদর্শন প্রকাশিত হয়েছে।
ত্রিপিটক শাস্ত্র থেকে জানা যায় যে, মহামানব বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘ কর্তৃক ধর্মভাষিত হলে শেষান্তে ভক্তগণ বা শ্রোতাগণ সাধুবাদ দিয়ে তা অভিবাদন বা অনুমোদন করতেন। বর্তমানেও বৌদ্ধ বিশ্বে এই ‘সাধুবাদ’ প্রথা বিদ্যমান। এটাই বৌদ্ধ রীতি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বৌদ্ধ রীতি তাঁর জীবনে হুবহু গ্রহণ করেছেন। তার প্রমাণ স্বরূপ বলা যায়- শান্তিনিকেতনে যেকোন সভা বা অনুষ্ঠানাদিতে বক্তার বক্তব্য শেষ হলে করতালি না দিয়ে সাধুবাদ দেওয়ার প্রথা চালু করেন। তখন থেকে সাধুবাদ দেওয়ার রীতি রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের শান্তিনিকেতনে অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের জন্ম ভারকবর্ষে; কিন্তু তাঁর জীবনের বিকাশ ক্ষেত্র তিনটি মহাদেশে। তাঁর মত চিন্তাশীল কর্মবহুল জীবন পৃথিবীর ইতিহাসে দুর্লভ। আমাদের শিক্ষা, সাহিত্য, ধর্ম, দেশ, জাতি ও সমাজের সকল দিকের মননশীলতার উৎস ছিলেন তিনি।২৭ শিশুকাল থেকে সারা জীবনব্যাপী রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ও আধ্যাত্মিক সাধনার প্রভাব প্রবল ছিল। রবীন্দ্রনাথের কর্মবহুল আলোকিত জীবন সাধনায় বুদ্ধ ছিল প্রতিভূ।
রবীন্দ্রনাথ সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত ভাষায় সুপণ্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রীকে শান্তিনিকেনে নিয়ে আসেন। রবি ঠাকুরের প্রেরণায় তিনি ‘পালি প্রবেশ’ (১৯১১) ব্যাকরণ রচনা ও ‘ভিক্ষু পাতিমোক্ষ’ ভিক্ষু বিনয় গ্রন্থ অনুবাদ করেন। প্রসিদ্ধ পণ্ডিত শরৎচন্দ্র রায়ের ‘বুদ্ধের জীবন ও বাণী’ ‘বৌদ্ধ ভারত’ গ্রন্থ এখানে রচিত। ১৯২১ সালে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক হিসেবে আনা হয়েছিল ফরাসী পণ্ডিত সিলভা লেভিকে, চীন থেকে লিন ও চিয়াং এবং ১৯২৫ সালে রোম থেকে বৌদ্ধ পণ্ডিত জোসেফ তুচ্চি, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বভারতীতে যোগদান করেন ড. প্রবোধ চন্দ্র বাগচী।২৮
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহামানব বুদ্ধকে তাঁর জীবনে কিভাবে গ্রহণ করেছেন, এক্ষেত্রে ছোট একটি ঘটনার অবতারনা করা যেতে পারে। যা প্রবোধ চন্দ্র সেন মহোদয়ের মুখে শুনতে পাওয়া গেছে। ঘটনা হল এই, একবার পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থান কালীন সময়ে কবিগুরুকে একজন ছাত্র জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনাকে তো সবাই গুরুদেব বলে সম্বোধন করে। কিন্তু আপনার গুরু কে? উত্তরে কবিগুরু বলেছিলেন-হ্যাঁ, আমারও একজন গুরুদেব আছেন, তোমরা সবাই তাঁকে জান। তিনি হলেন ‘বুদ্ধদেব’।২৯
আমরা জানি ঠাকুর পরিবার মূর্তি পূজার বিরোধী ছিলেন। তাই কোনদিন কোন মূর্তির সামনে মাথানত করেনি। কিন্তু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন জীবনে একটি মূর্তির সামনেই তিনি মাথানত করেছেন। বুদ্ধগয়াতে বুদ্ধমূর্তি দর্শন করেই কবির মনে এই ভাবোদয় হয় এবং বুদ্ধমূর্তির সামনেই তিনি মাথানত করেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পরম অনুরাগী শান্তিনিকেতনের একজন প্রবীন শিক্ষক [নিত্যানন্দ বিনোদ গোস্বামী] সকলে তাঁকে গোঁসাইজি বলেই ডাকত। গোঁসাইজির মুখে শুনতে পাওয়া গেছে যে, একবার বুদ্ধগয়া থেকে ফিরে আসার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মস্তক মুন্ডন ও গোঁফ দাড়ি পর্যন্ত ছেদন করেছিলেন।১৬ বুদ্ধের আদর্শ ও ত্যাগের কথা চিন্তা করতে করতে এমন কবির মনেও বৈরাগ্য ভাবের সঞ্চার হয়েছিল।
বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রচিত রবীন্দ্রনাথের রচনায়, গানে আজকের হিংসা, লোব, রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দিনে শান্তিকামী নিখিল মানবের ক্রন্দন ধক্ষনি যেন এর সুওে প্রতিধক্ষনিত হয়েছে-
হিংসা উন্মুক্ত পৃথ্বী, নিত্য নিষ্ঠুর দ্বন্দ্ব
ঘোর কুটিল পন্থ তার, লোভ জটিল বন্ধ।
কান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য
করুণাঘন, ধরণীতল, কর কলঙ্ক শূন্য।৩০
মহামানব বুদ্ধের মত চির সত্যের সন্ধানী রবি ঠাকুর আজীবন চেয়েছিলেন মানুষ মনুষ্যত্বে পূর্ণ হয়ে উঠুক। কবি বিশ্বাস করেন বুদ্ধের দক্ষিণ হস্তের কল্যাণ র্স্পশে পৃথিবীর গ্লানি দূরীভূত হবে, পৃথিবী আবার শুচিশুভ্র হবে এবং বিশ্বে অনাবিল শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
মহামানব বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি বিশ্বাস কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তি জীবনের মধ্যে অন্যভাবেও প্রকাশ পেয়েছে। যেমন- বুদ্ধ জীবনের সাথে নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত তিথি শ্রেষ্ঠ দুই প্রধান তিথি বৈশাখী পূর্ণিমা ও আষাঢ়ী পূর্ণিমা। বৈশাখী পূর্ণিমায় বুদ্ধের জন্ম, সিদ্ধিলাভ ও মহাপরিনির্বাণ। আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহন, গৃহত্যাগ ও দেব মানবের হিতার্থে সর্বপ্রথম ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন’ সূত্র দেশনা করেন। আমাদের জাতীয় জীবনে এই তিথি দু’টির গুরুত্ব কবিগুরু বিশেষ ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই শান্তিনিকতনে রবীন্দ্রনাথের সময় থেকে অদ্যাবধি “ধর্মচক্র প্রবর্তন” তিথি যথারীতি উৎযাপিত হয়ে আসছে।৩১
বুদ্ধের প্রতি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের এক অসীম নির্ভরশীলতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন- যখনই কোন দুঃখ, অশান্তি বা অমঙ্গল আশংকা দেখা দিয়েছে, তখনই বারে বারে কবিগুরু ভগবান বুদ্ধকে স্মরণ করেছেন। স্বদেশের দুঃখ দৈন্যের দিনেও বুদ্ধের কল্যাণ সুন্দর করুণার রূপটি কবিগুরুর মানসপটে ভেসে উঠে এবং তিনি তাতে অন্তরে ভরসা লাভ করেন। বুদ্ধের আদর্শকেই তিনি বার বার দেখনির মাধ্যমে জাতির সম্মুখে তুলে ধরেছেন।৩২
রক্তক্ষয়ী বিশ্বযুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হানা-হানি, স্বদেশী আন্দোলনের উত্তেজনা, প্রবলের অত্যাচার ও উৎপীড়ন এক প্রকার মাত্রাতিরিক্ত। এতে কবি উপলব্ধি করেছিলেন, পরাধীনতার গ্লানি, দেশ-বাসীর মানসিকতার দৈন্যদশা ও ভয়াবহ দারিদ্রতা। লোভ, হিংসা উগ্রতা, ক্ষমতার বড়াই ও লড়াই আর ক্ষমতার অপব্যবহার সব কিছুর বিরুদ্ধেই কবিগুরু সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন। এই ঘোর তামসিকতার বিপরীতে যে সব গুণ বিভূষিত সত্যধর্ম তা ছিল মূলত রবীন্দ্রনাথের ধর্ম তথা মানবীয় ধর্ম। বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্মের মধ্যে কবিগুরু সেই ধর্মবোধের প্রতিফলন দেখেছিলেন। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘বুদ্ধ পৃথিবী জয় করেছিলেন, আলেকজান্ডার নয়। রবীন্দ্র সংগীতের ঐক্যতত্ত্বের মূলত প্রেরণার উৎস ছিল গৌতম বুদ্ধ।৩৩
রবীন্দ্রনাথের জীবনাদর্শ ও সৃষ্ট সাহিত্যকর্ম পর্যালোচনা করে বলা যায়, তিনি গৌতম বুদ্ধকে কিভাবে শ্রদ্ধা করতেন ও জানতেন তা সুধাংশু বিমল বড়ুয়া রচিত রবীন্দ্রনাথ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি গ্রন্থে প্রবোধ সেনের কথা তুলে ধরেছেন- “ একবার করাচিতে অবস্থান কালে রবীন্দ্রনাথকে একজন ছাত্র প্রশ্ন করেছিলেন, আপনাকে ত সবাই ‘গুরুদেব’ বলে সম্বোধন করেন, আপনার গুরু কে ?” রবীন্দ্রনাথ এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, হ্যাঁ আমারও একজন গুরু আছেন। তোমরা সবাই তাকে জানো। তিনি হলেন গৌতম বুদ্ধ। মুক্তির পথ প্রদর্শক হিসেবে সমগ্র ভারতবর্ষে আজো গৌতম বুদ্ধেও উদ্দেশ্যে তাঁদের অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। কবির ভাষায়-
উদিল যেখানে বুদ্ধ আত্মা মুক্ত করিতে মোক্ষ দ্বার,
আজিও জুড়িয়া অর্ধজগৎ ভক্তি প্রণত চরণে তাঁর।৩৪
এতদসত্বেও রবীন্দ্র জীবনে ও সাহিত্যে বুদ্ধ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির কালজয়ী মহিমার ভাবাদর্শ যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে, বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্যে তার তুলনা বিরল। এখানেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ণতা ও সার্থকতা।
তথ্যসূত্র :
১। সৈয়দ আকরাম হোসেন, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস চেতনালোক ও শিল্পরূপ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩৯৪, পৃ.১৮
২। প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র জীবনী ও রবীন্দ্র সাহিত্য প্রবেশক (১ম ভণ্ড), বিশ্ব ভারতী গ্রন্থবিভাগ, কলিকাতা, ১৩৬৭, পৃ, ৪-৫
৩। অরূপ কুমার চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্র নাটকে বৌদ্ধভাবনা, পশ্চিম বঙ্গ, রবীন্দ্র সংখ্যা, ১৪০৩, পশ্চিম বঙ্গ সরকার, কলিকাতা, ১৯৯৬, পৃ. ১৩৩
৪। আহমদ ছফা, “রবীন্দ্র নাথের সংস্কৃতি সাধনা” (প্রবন্ধ), রবীন্দ্রনাথ, সম্পাদক, আনিসুজ্জামান, স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা, ১৩৭৫, পৃ. ৪৫৮
৫। ড. জগন্নাথ বড়ুয়া, রবীন্দ্র সাহিত্যে বুদ্ধচর্চা (প্রবন্ধ), ন্যশনাল ইউনিভার্সিটি জার্নাল অব আর্টস, প্রথম খণ্ড, প্রথম সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০০৬
৬। অনীতা মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র সংগীতে বেীদ্ধ অনুপ্রেরণা, পশ্চিম বঙ্গ, রবীন্দ্র সংখ্যা ১৪০৩, কলিকাতা, ১৯৯৬, পৃ. ৪০
৭। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব, কলিকাতা, ১৩৬৩, পৃ. ৭৭
৮। শুধাংশু বিমল বড়ুয়া, রবীন্দ্রনাথ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি,চট্টগ্রাম ২০০০, পৃ. ১
৯। শ্রী জ্যোতিঃপাল মহাথের, রবীন্দ্র সাহিত্যে বৌদ্ধ সংস্কৃতি, বিশ্বশান্তি প্যাগোডা, চবি, ১৯৯৮, পৃ. ১
১০। শ্রী জ্যোতি:পাল মহাথের, রবীন্দ্র সাহিত্যে বৌদ্ধ সংস্কৃতি, চট্টগ্রাম, ১৯৯৭, প্রজ্ঞা বুদ্ধ পূর্ণিমা সংখ্যা, ২০০৪, ঢাকা
১১। অরূপ কুমার চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্র নাটকে বুদ্ধ ভাবনা, পশ্চিম বঙ্গ, রবীন্দ্র সংখ্যা ১৮০৩, কলকাতা, ১৯৯৬, পৃ, ১৩৫
১২। নিরঞ্জন অধিকারী, ধম্মপদ ও রবীন্দ্রনাথ, সৌম্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বৌ. ছা. স, ১৯৮৮, পৃ. ২৯
১৩। সাধনানন্দ মহাথের, সুত্ত নিপাত, (খগ্গ বিসান সূত্র), রাঙ্গামাটি, ১৯৮৭, পৃ. ৫১
১৪। প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র জীবনী ও রবীন্দ্র সাহিত্য প্রবেশক (২য় খণ্ড), কলিকাতা, ১৯৯৫, পৃ. ২২৫
১৫। প্রাগুক্ত- পৃ. ২
১৬। প্রাগুক্ত- পৃ. ৩
১৭। ধম্মপদ- পৃ. ৫৬ (সূত্র পিটকের অন্তর্গত খুদ্দক নিকায়ের একটি খন্ড বিশেষ)।
১৮। আনন্দমিত্র মহাথের, বুদ্ধ ও তাঁর ধর্ম, প্রয়াস প্রকাশন, চট্টগ্রাম ২০০০, পৃ. ৩
১৯। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব, মহাবোধি সোসাইটি, কলিকাতা, ১৯৯৮, পৃ. ৩২
২০। ঐবসবহফঁ ইরশধংয ঈযড়ফিযঁৎু, (ঊফ.) – ঞধমধললুড়ঃর ঈবহঃবহধৎু ঠড়ষঁসব, - চ,৩১৯ (উক্ত গ্রন্থে পঙ্কজ কুমার দত্ত কর্তৃক লিখিত “রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সমসাময়িক সৃষ্টি ও দৃষ্টিতে গৌতম বুদ্ধ” নামক প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য)
২১। শ্রী জ্যোতিঃপাল মহাথের, রবীন্দ্রসাহিত্যে বৌদ্ধ সংস্কৃতি বিশ্বশান্তি প্যাগোডা, চবি, ১৯৯৮, পৃ. ৮৩
২২। প্রাগুক্ত- পৃ. ৮৬
২৩। প্রাগুক্ত- পৃ. ৮৮
২৪। প্রাগুক্ত- পৃ. ৮৬
২৫। শুধাংশু বিমল বড়ুয়া, রবীন্দ্রনাথ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি, প্রয়াস প্রকাশন, চট্টগ্রাম ২০০০, পৃ. ১৩৪
২৬। প্রাগুক্ত- পৃঃ ১৫৫
২৭। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রবি পরিক্রমা, কোয়ালিটি পাবলিশার্স, ঢাকা, ১৯৬৩, পৃ. ১৪০
২৮। সলিল বিহারী বড়ুয়া, “ঠাকুর পরিবার শান্তি নিকেতন”, অর্ঘ্য, সুবোধিরত্ন স্মারক, চট্টগ্রাম, ২০০০
২৯। শ্রী জ্যোতিঃপাল মহাথের, রবীন্দ্রসাহিত্যে বৌদ্ধ সংস্কৃতি, বিশ্বশান্তি প্যাগোডা, চবি, ১৯৯৮, পৃ. ৮৬
৩০। প্রাগুক্ত- পৃঃ ৮৭
৩১। প্রবোধচন্দ্র সেন, ভারতপথিক রবীন্দ্রনাথ, মহাবোধি সোসাইটি, কলিকাতা ১৯৮৬,পৃ. ৫৫
৩২। সুধাংশু বিমল বড়ুয়া, রবীন্দ্রনাথ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি, প্রয়াস প্রকাশন, চট্টগ্রাম ২০০০, পৃ. ৯৩
৩৩। হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরী, (সম্পাঃ) - বোধিভারতী, পৃ. ১৮ (উক্ত গ্রন্থে কবি প্রাবন্ধিক হেমেন্দেু বিকাশ চৌধুরী কর্তৃক লিখিত “বুদ্ধচর্চায় রবীন্দ্রনাথ” নামক প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য)।
৩৪। সত্য প্রসন্ন বড়ুয়া, মহাকারুনিক বুদ্ধ, চট্টগ্রাম, ১৯৯৩, পৃ. ৮১

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement